খাগড়াছড়ি-২৯৮ আসনে আ’লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি:

খাগড়াছড়ি সংসদীয় আসনে সরকার দলীয় প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও তার নেতাকর্মীরা আচরণ বিধি লংঘন করেছে বলে অভিযোগ করেছেন  ২৯৮ আসনের বিএনপি প্রার্থী শহীদুল ইসলাম ভূইয়া।

মঙ্গলবার(১১ ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন বিএনপি প্রার্থী শহীদুল ইসলাম ভূইয়া। এসময় তিনি সঠিক তথ্য তুলে ধরার মাধ্যমে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন।

তিনি বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের পুলিশি হয়রানিসহ বিভিন্ন স্থানে বিএনপি অফিস খুলতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। হুমকি ও হামলা করা হচ্ছে। যার কারণে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হচ্ছে না।

আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে শহীদুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, খাগড়াছড়ি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সংসদ সদস্য হওয়ার পাশাপাশি তিনি প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার পার্বত্য চট্টগ্রাম টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত আছেন। তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সরকারি বাসায় অবস্থান সহ রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরও তিনি সে পদ-পদবী ব্যবহার করে পুলিশ পাহারায় ও গানম্যান ব্যবহার করছেন।

জেলার নির্বাচনী এলাকার আওতাধীন বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের বিএনপির অফিসগুলো সরকার দলীয় নেতাদের হুমকিতে এখনো খোলা সম্ভব হয়নি। যেখানে খোলা হচ্ছে সেখানে ফের তালা ঝুলিয়ে নেতাকর্মীদের মারধর করা হচ্ছে। রামগড় উপজেলার লামকু ইউনিয়ন পরিষদের সামনে অবস্থিত বিএনপির অফিসটি খুলতে দিচ্ছে না আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা। ২৭ নভেম্বর রামগড় বাজারে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের উপর ছাত্রলীগ নেতা আরাফাতের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়েছে। ২৮ নভেম্বর জনাব কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি কয়েক হাজার নেতাকর্মীসহ বিশাল মিছিল নিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় আচরণ বিধি লঙ্ঘন করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার বাধা  দেওয়া বা কোনো প্রকার সতর্ক করা হয়নি। ৩০ নভেম্বর রামগড়ে ছাত্রদল নেতা মনির হোসেনের উপর ছাত্রলীগ নেতা আরাফাতের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়েছে।

আ’লীগ প্রার্থী সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, উপমন্ত্রী পদমর্যাদার একজন চেয়ারম্যানসহ ১৫ সদস্যের পরিষদের সকলে আওয়ামী লীগের নেতা, যারা সকলেই সরকার কর্তৃক অস্থায়ী নিয়োগ প্রাপ্ত। পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা  সরকারি গাড়িসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন করছে।

গত ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বর্ষপূর্তি উপলক্ষে র‌্যালিতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে শ্লোগান দিয়েছে। একই দিন শান্তিচুক্তি উপলক্ষে জেলা সদর ও বিভিন্ন উপজেলার আয়োজিত আলোচনা সভাগুলোতে আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়ে বক্তব্য রেখে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন।

২৯৮ আসনের বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীরা হয়রানির স্বিকার হচ্ছে অভিযোগ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয, গত ০৫ ডিসেম্বর দিঘীনালা উপজেলা বেতছড়ি ও মেরুং এ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নিউটন মহাজনের নেতৃত্বে ১৫/২০জন আওয়ামী লীগের কর্মী হামলা চালিয়ে যুবদলের সদস্য মো. রফিকসহ বিএনপির ৮নেতা কর্মীকে আহত করে। ৭ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে দীঘিনালা উপজেলার কবাখালীতে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সি. সহ-সভাপতি জয়নাল আবেদীনের অফিসে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুলের নেতৃত্বে একদল কর্মী হামলা চালায় এবং তাঁকে মারধর করে আহত করে।

৮ডিসেম্বর বিকাল ৪টার দিকে রামগড় উপজেলার কালা ডেবা এলাকায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা ২০/২৫টি মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দেয় এবং উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মিন্টু কোম্পানি ও বিএনপির নেতা শাহ আলমসহ নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘরে হানা দিয়ে এলাকা ছেড়ে যেতে হুমকি দেয়। অন্যথায় টাকা দাবি করে।

৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি শহরের কলেজ গেইট এলাকায় সাবেক পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিল ও জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি  মেহেদী হাসান হেলালের নেতৃত্বে ১০/১৫ জন আওয়ামী লীগের কর্মী বিএনপির নেতা বিনোদ কোম্পানী, যুবদলের হেলালকেসহ দলীয় নেতাকর্মীদের এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলে, নয়তো হত্যার হুমকি দেয়।

১০ডিসেম্বর সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মহালছড়ি উপজেলা পরিষদের সামনে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জিয়াউর রহমান জিয়া  ও সাধারণ সম্পাদক রোকন উদ্দিনের নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়। অপর দিকে লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার দুল্যাতলীতে বিএনপির কার্যালয়ে সোমবার রাত সোয়া ৮টায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলমের নেতৃত্বে ১০/১৫জন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী হামলা চালায়। হামলায় লক্ষ্মীছড়ি দুল্যাতলী ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারেক আহত হয়। রামগড় উপজেলার খাগড়াবিল এলাকায় বিএনপি নেতা আবুল কাশেমকে বাজারে আটক করে মারধর করে। মাটিরাঙ্গা উপজেলার তাইন্দং ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামকে এলাকা ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।

আহতরা মহালছড়ি উপজেলা যুবদলের সাধারন সম্পাদক মো. শরীফুল ইসলাম, যুবদলের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, জেলা ছাত্রদলের সহ-সম্পাদক মো. ইলিয়াছ আলী, উপজেলা কৃষকদলের  সাধারণ সম্পাদক সরেম আলী, শ্রমিকদলের সদস্য খোকন মিয়া। এতে করে উভয় এলাকায় জনমনে আতংকের সৃষ্টি হয়েছে।

এমতাবস্থায় খাগড়াছড়ি আসনে অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মনে গভীর সংশয় সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির এই প্রার্থী।

তাই খাগড়াছড়ি আসনে অবাধ ও নিরপেক্ষ, গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরী করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন