৬৫ বছরেও রিকসার প্যাডেল চাপে পানছড়ির কামিনী চাকমা

Ricksha Pic copy

নিজস্ব প্রতিবেদক:

খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার ৩নং পানছড়ি ইউপির রবি সিং পাড়া (কলেজ পাড়া)’র মৃত রূপধন চাকমার ছেলে কামিনী চাকমার বয়স এখন প্রায় ৬৫। বয়সের ভারে গায়ের চামড়াগুলো কুচকে ভাঁজ পড়ে গেছে। অজ্ঞতার কারণে জন্ম নিবন্ধনে বয়স মাত্র ৫৩ ছুই ছুই।

১৯৮৯ সালের শেষের দিকে দিঘীনালা উপজেলার বড়াদম মাঠে বর্তমান মন্ত্রী রাশেদ খান মেননের উপস্থিতিতে অস্ত্র জমা দিয়ে সমর্পন করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে সাবেক জেএসএস সদস্য কামিনী চাকমা। কিন্তু এ জীবনে এসেও বুড়ো বয়সে সারাদিন রিকসার প্যাডেল চাপার মত এক কঠিন যুদ্ধ করেই চুলোয় আগুন জ্বালাতে হয়। তার সহধর্মিনী জ্যোতিকা চাকমাও পরের জমিনে ধান রোপনসহ নানান কাজ করে থাকে দৈনিক ১০০/১৫০ টাকার বেতনে। কোন ঝড় বৃষ্টি বা বৈরী আবহাওয়া থাকলে দু’জনেই বেকার। নেই নিজেদের কোন জায়গা জমি। শুভকৃতি নামের এক ভান্তের জায়গায় ঝুপড়ির মত ঘর বেধে কোন রকম দিনাতিপাত করছে এই দম্পতি।

সরেজমিনে রবি সিং পাড়া (কলেজ পাড়া)’র ঝুপড়ি ঘরে কথা হয় জ্যোতিকা চাকমার সাথে। জ্যোতিকার আজ কোথাও কাজ নেই তাই বেকার। স্বামী কামিনী চাকমার কথা বার বার তুলে ধরে বলেন, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত তাছাড়া বয়সও হয়েছে। বিশেষ করে মেরুদন্ডের ব্যাথায় প্রায় অসুস্থ থাকে তার স্বামী। সব সময় ঔষধ সেবন করে তাছাড়া ব্যাথা বেশী বাড়লে খাগড়াছড়ি গিয়ে প্রতি মাসে ১৩৫টাকা দামের ইনজেকশান দিতে হয়। স্বামী-স্ত্রী দু’জনের কোন কাজ না থাকলে চাউল ও মুলি দিয়ে মদ বানিয়ে বিক্রির টাকা দিয়ে সংসারের খরচাদি মিটায়। খুব বেশী অভাবে পড়ে গেলে বাধ্য হয়ে মদ বানাতে হয় বলে সহজ-সরল ভাষায় জানালেন।

কলেজ গেইট এলাকায় রিকসার প্যাডেলে কথা হয় কামিনী চাকমার সাথে। এক সময় পানছড়ি বাজারের রেডিও মেকার ছিল এই বয়োবৃদ্ধ। বাজারে দু’দুবারের অগ্নিকান্ডে সব হারিয়ে অবশেষে বেছে নেয় রিকসা চালনা। এই পেশায় প্রায় ১৫বছর পার করেছে। রিকসার প্যাডেল চেপেই মেয়ে লক্ষী চাকমাকে বিয়ে দিয়েছে আর ছোট মেয়ে সনাক্ক চাকমা পানছড়ি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ছে। কামিনী চাকমা একটু মুচকি হেঁসে জানালেন দাদা আমার কিন্তু লেট ম্যারেজ তাই ছোট মেয়ে বিদ্যালয়ে পড়ছে। বর্তমানে রিকসা ভাড়া তেমন নাই, কোন রকম ৮০/১০০ টাকা হয়। তাছাড়া চোখেও সমস্যা দুরের কিছু দেখে না, পুরো শরীর জুড়ে চামড়ার রোগে আক্রান্ত, মেরুদন্ডে ব্যাথা তাই ভারী কোন কাজও করতে পারেনা। তার দাবী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেও ঠিকমত দু’মুঠো ভাত খেতে পারছে না। এ পর্যন্ত কোন সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ার ক্ষোভও প্রকাশ করলেন।

এ ব্যাপারে এলাকাবাসীর সাথে আলাপকালে জানায়, এ বুড়ো বয়সেও অনেক কষ্ট করে কোমর ব্যাথা নিয়ে রিকসা চালানো একটি দৃষ্টান্ত। তবে সবার একটাই দাবী অসুস্থ মানুষটিকে এ বয়সে রিকসা প্যাডেল চাপা থেকে বিরত রাখা দরকার। এ জন্য বিত্তবানদের একটু সহযোগিতা পেলেই হয়তো তা সম্ভব হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন