৩০ হাজার বাঙালী হত্যাকারী সন্তু লারমাদের পক্ষে কেন ড. মিজানুর রহমান

ড. মিজানুর রহমান
♦ ইঞ্জিঃ আলকাছ আল মামুন ভূঁইয়া
পার্বত্য চট্রগ্রামে বসবাসরত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও বাংলা ভাষাভাষী প্রায় ১৫ লাখ মানুষ আজ  চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে। ঠিক এমনই এক পরিস্থিতি  বিরাজ করেছিল ১৯৯৭ সালে কথিত শান্তিচুক্তির আগে। সে সময় নিরীহ বাঙালীদের ঘুমন্ত পল্লীতে অগ্নিসংযোগ ও ব্রাশফায়ার করে শিশু-কিশোর, নারী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে নির্মমভাবে হত্যা করে জলন্ত আগুনে ছুঁড়ে মারা হতো। শিশুদেরকে অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করতো একশ্রেণীর উপজাতি সন্ত্রাসীরা। উদ্দেশ্য ছিল পার্বত্য এলাকা থেকে বাঙালীদেরকে তাড়িয়ে দেয়া।
পার্বত্য চট্টগ্রামে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সূচনা করে উপজাতীয় (এককালীন বামপন্থী) নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা। তার নেতৃত্বে সর্বপ্রথম ১৯৭৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে গুলশাখালীর (রাঙামাটি জেলা) পুলিশ বক্সে হামলা চালিয়ে পুলিশের অস্ত্র লুট করা হয়। ১৯৭৮-৭৯ সালে খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা থানার তানৈক্য পাড়া বিওপিতে হামলা করে ১১ জন বিডিআর সদস্যকে হত্যা করে অস্ত্র লুটে নিয়ে যায়। পরে ১৯৮১ এবং ১৯৮৬ সালে ২৯ এপ্রিল পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা, পানছড়ি, দিঘীনালা ও রাঙামাটির বাঘাইহাটসহ মোট ১১টি ইউনিয়নে একযোগে হামলা চালিয়ে শত শত মানুষকে হত্যা করা হয়। ১৯৮৪ সালে রাঙামাটি জেলাধীন বরকল উপজেলার ভূষণছড়ায় নিরীহ বাঙালীদের ঘুমন্ত পল্লীতে অভিযান  পরিচালনা, অগ্নিসংযোগ, ব্রাশফায়ার করে এক রাতে সহস্রাধিক শিশু নারীসহ ঘুমন্ত মানুষকে হত্যা করা হয়। নির্মমভাবে হত্যা করে ১৯৯৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি জেলার পাকোয়াখালীতে ৩৫ কাঠুরিয়াকে। এমনিভাবে ৩০ হাজার বনি আদমকে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ও পরে তার ছোট ভাই সন্তু লারমার নেতৃত্বে হত্যা করা হয়।
বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের সময় ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এবং জনসংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমার মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ১৯৯৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সন্তু লারমাকে প্রতিমন্ত্রীর সম-মর্যাদায় পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৯৯ সালের ১২ মে তিনি চেয়ারম্যানের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এখন পর্যন্ত তিনি সেই পদে বহাল রয়েছেন। খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি এবং বান্দরবান জেলার ৩টি জেলা পরিষদেই ৩ জন উপজাতি চেয়ারম্যান হিসেবে বলবত আছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অভ্যন্তরীণ উদ্ধাস্তু পুনর্বাসন বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যানও একজন উপজাতিকে নিয়োগ দেয়া আছে। তিন পার্বত্য জেলায় সার্কেল চিফের ৩ জনই উপজাতি। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের পদটিতেও রয়েছেন উপজাতি।
পার্বত্য জেলার সর্বত্রই এখন উপজাতীয়দের একক কর্তৃত্ব বিরাজমান। অথচ পার্বত্য চট্টগ্রামে, শিক্ষা, চাকরি, কর্মসংস্থান, ব্যবসা- বাণিজ্য, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সর্বক্ষেত্রে সুদীর্ঘকাল ধরে বসবাসকারী বাঙালীরা প্রতিনিয়ত চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। ক্রমশ বাঙালীরা পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠীতে পরিণত হচ্ছে। বৃহৎ জনগোষ্ঠী বাঙালীদের মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। ইউপিডিএফ ও জনসংহতি সমতিরি সদস্যরা প্রতিদিনই স্বায়ত্বশাসনের দাবীতে হত্যা, ঘুম ও অপহরণ চালিয়ে যাচ্ছে। তারপরও ২০০০ সালের পর থেকে সন্তু লারমা প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা ও সুযোগ সুবিধা ভোগ করে রাজা দেবাশীষকে সাথে নিয়ে নতুন এক খেলায় মেতে উঠেছে। আর তা হল ৫০৯৩ বর্গ কিঃ মিঃ পার্বত্য চট্টগ্রামকে স্বাধীন জুম্মল্যান্ড গঠনের স্বপ্ন। তা বাস্তবায়নের জন্য নিজেদের আসল পরিচয় বাদ দিয়ে ‘আদিবাসী’ স্বীকৃতির দাবী নিয়ে মাঠে নেমেছে। তার সাথে যোগ দিয়েছে এদেশের খ্যাতনামা কয়েকজন বুদ্ধিজীবী। তাদের মধ্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, তথ্য কমিশনার ড. সাদেকা হালিম, খুশী কবির, লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ প্রমুখ।
তাদের প্রতি যথাযথ সম্মান জানিয়ে বলতে চাই- জাতীয় মানবাধিকার কমিশন একটি নিরপেক্ষ সংস্থা। পার্বত্য এলাকার নিরীহ-নির্যাতিত বাঙালীদের মানবাধিকারকে উপেক্ষা করে এক তরফাভাবে উপজাতীদের (সন্তু বাবুর) পক্ষ নিয়ে লাগাতার বাঙালী বিদ্বেষী বক্তব্য রাখলে একদিকে যেমন বাঙালীরা কষ্ট পায় তেমনি মানবাধিকার সংস্থার উপর থেকে আস্থা উঠে যায়। অন্যদিকে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীকে উস্কে দেয়া হয়। তারা আস্কারা পেয়ে যায়। এর মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল পার্বত্য চট্টগ্রামের এক দশমাংশ (৫০৯৩ বর্গ কিলোমিটার) ভূমি মহল বিশেষের চক্রান্তে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। আপনারা নিশ্চয় তা কামনা করবেন না।
এ প্রসঙ্গে ড. মিজানুর রহমান গত ১৩ আগস্ট বৃহস্পতিবার ২০১৫ সালে সিরডাপ মিলনায়তনে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সরাসরি নিচে তুলে ধরা হল:
“পার্বত্য অঞ্চলে পরিকল্পিতভাবে বাঙালি জনসংখ্যা বাড়িয়ে সেখানকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে সংখ্যালঘু করার রাজনীতি বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান। তিনি বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার যেসব বাঙালিকে পুনর্বাসন করেছে যত দ্রুত সম্ভব তাদের সেখান থেকে সরিয়ে অন্য জায়গায় পুনর্বাসন করতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার ‘জাতিসংঘ ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ (ইউপিআর) সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নে অগ্রগতির বর্তমান অবস্থা : আদিবাসী প্রেক্ষিত’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।”
এমনিভাবে ড. মিজানুর রহমান গত ১০ আগস্ট ২০১১ সালে এলজিআরডি মিলনায়তনে “আদিবাসী জাতি গোষ্ঠীর ভূমি ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় ভূমি কমিশনের গুরুত্ব ও কার্যকারিতা” শীর্ষক সেমিনারে এবং এর আগে ৮ আগস্ট সিরডাপ মিলনায়তনে বাঙালী বিদ্বেষী অনুরূপ বক্তব্য রেখেছেন, যা উনার মতো একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির নিকট থেকে আমরা আশা করি নি। রাষ্ট্রীয় পদে থেকে তিনি রাষ্ট্র ও সংবিধান বিরোধী বক্তব্য বলে যাচ্ছেন অথচ তাকে কেউই কিছুই বলছেন না ।
উপজাতীদেরকে ‘আদিবাসী’ বলে তিনি সংবিধানের ২৩(ক) ধারা তথা সংবিধান অবমাননা করেছেন।রাষ্ট্রপতি জিয়াকে তিনি বিষবৃক্ষ রোপণকারী বলেছেন, উপজাতিরা কাগজ ও দলিলে বিশ্বাস করে না বলে উপজাতীদেরকে উস্কে দিয়েছেন। এতে পার্বত্যবাসী হিসেবে আমরা খুবই মর্মাহত হয়েছি। বাঙালীদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করতে ‘স্যাটেলার’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন যা খুবই দুঃখজনক। উনার বক্তব্য প্রমাণ করে যে তিনি নিজেও ৩০ হাজার বাঙালীর খুনি সন্তু লারমার সহযোগী। আমরা জানি এ দেশের উপজাতীরা বিভিন্ন দেশ থেকে এ দেশে এসেছে, সুতরাং এরা পূর্নবাসিত, বাঙ্গালীরা নয় ।
আমি বিশ্বাস করি, ৩০ লক্ষ শহীদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতি ইঞ্চি জায়গা, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সমান অধিকার রয়েছে। প্রত্যেকে স্বীয় জাতি, ভাষা, ধর্ম তথা সামাজিক সাংস্কৃতিক বিকাশের পূর্ণ অধিকার ও সম্মান নিয়ে স্বকীয়তায় সমান্তরালভাবে বিদ্যমান। তাই জেনারেল জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের সমতল থেকে গরীব, ভূমিহীন, দুঃস্থ কিন্তু কর্মঠ মানুষকে নিষ্কণ্টক খাস জমিতে পুনর্বাসন করেছেন, এটা নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত। তা না হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম এতদিনে বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে আলাদা হয়ে যেতে পারত। ‘আদিবাসী’রা কাগজে বা দলিলে বিশ্বাস করে না বলে ড. মিজানুর রহমান যে মন্তব্য করেছেন তা জাতিকে হতবাক করেছে।
সকল দেশের সংবিধান বলে দেয়, দেশ ও দেশের মানুষ কিভাবে চলবে। সংবিধানেই রীতি-নীতি, আইন-কানুন লিপিবদ্ধ থাকে। যদি কেউ আইন-আদালত না মানে, দলিল বা চুক্তিপত্র না মানে তাহলে সেখানে দ্বন্দ্ব-সংঘাত অনিবার্য। আর সংঘাতের পথ দেখিয়ে দেয়া কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তির পক্ষে তো নয়ই বরং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের জন্য এটি খুবই বেমানান। আমরা আশা করি তিনি তার বক্তব্য ফিরিয়ে নেবেন। ঐ সেমিনারে বক্তারা এক বাক্যে বহিরাগত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও উপজাতিদেরকে এদেশের ‘আদিবাসী’ বলে স্বীকৃতির দাবী জানান যা দেশপ্রেমিক জনগণকে বিস্মিত করেছে। তারা নিজেরাও স্বীকার করবেন যে, ‘আদিবাসী’ বিষয়টি নতুন একটি দাবী।
কেননা ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে (ক) সাধারণ অংশে ১নং উপধারাতে বলা হয়েছে, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামকে উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল বলা হবে।’ (খ) নং ধারার ১নং উপধারায় বলা হয়, ‘উপজাতি শব্দটি বলবৎ থাকিবে।’ সেখানেতো আদিবাসী শব্দটি একবারও উল্লেখ করা হয়নি। এখন প্রশ্ন আসে চুক্তি স্বাক্ষরের পূর্বে কি তারা তাদের আত্ম পরিচয় ভুলে গিয়েছিলেন? আসলে তারা চুক্তি অনুযায়ী উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন পদ বা কর্তৃত্ব নিয়ে পার্বত্য এলাকাকে স্বাধীন জুম্মল্যান্ড গঠনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তারই একটি ধাপ হলো, আদিবাসী ইস্যু।
ভাবতে হবে, আসলে আদিবাসী ও উপজাতি নৃতাত্ত্বিক (Anthropological) দৃষ্টিভঙ্গিতে দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিভাষা। বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইল অঞ্চলে প্রায় ৩০/৩২টি উপজাতি বসবাস করে। কিন্তু কোনটিই নৃতাত্ত্বিক বা জাতিতাত্ত্বিক, ভাষাতাত্ত্বিক বা ঐতিহাসিক অথবা অন্য কোন বিবেচনায় বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও ‘আদিবাসী; হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে না। নৃতাত্ত্বিক সংজ্ঞায় আদিবাসী (Indigenous) বা অকৃত্রিম ভূমিপুত্র বা Son of the soil হল কোন স্থানে স্মরণাতীত কাল থেকে বসবাসকারী আদিমতম জনগোষ্ঠী, যাদের উৎপত্তি ও ছড়িয়ে পড়া এবং বসতি স্থাপন সম্পর্কে বিশেষ কোনো ইতিহাস জানা নেই। তাদেরকে ‘আদিবাসী’ বলা হয়।
আভিধানিকভাবে আদিবাসী শব্দরে র্অথ- দেশি, স্বদেশজাত বা ভূমিপুত্র। একইভাবে বাংলা একাডমেরি অভধিানে  Indigenous শব্দরে র্অথ বলা হয়েছে- দেশি, দৈশিক, স্বদেশীয়, স্বদেশজাত। কোলকাতা থকেে প্রকাশিত সংসদ অভধিানে Indigenous শব্দরে র্অথ হিসেবে বলা হয়েছে স্বদেশজাত, দেশীয়। অন্যদিকে নৃতাত্তিক সংজ্ঞায় আদিবাসী হচ্ছে- কোনো অঞ্চলরে আদি ও অকৃত্রমি ভূমপিুত্র বা Son of the Soil। প্রখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ মর্গানের সঙ্গানুযায়ী- ‘আদবিাসী হচ্ছে কোনো স্থানে স্মরণাতীতকাল থেকে বসবাসকারী আদিমতম জনগোষ্ঠী যাদরে উৎপত্তি, ছড়িয়ে পড়া এবং বসতি স্থাপন সর্ম্পকে বিশেষ কোন ইতিহাস জানা নেই’।
পার্বত্য অঞ্চলের তদানিন্তন বৃটিশ গভর্নর অর্থাৎ প্রথম Deputy Commissioner Mr.T.H Leween (মিঃ টি, এইচ,লুইন), তার লিখিত গ্রন্থ “The Hill tracts of Chittagong and the dwellers There in” এর ২৮ পৃষ্ঠায় উল্লখ করেন যে, “A greater portion of the hill tribes at present living in the Chittagong hills undoubtedly came about two generation ago from Aracan. This is asserted both by their own traditions and by records in the Chittagong collectorate”. অর্থাৎ পার্বত্যচট্টগ্রামের বর্তমান বাসিন্দা উপজাতীয়দের অধিকাংশ নিঃসন্দেহে প্রায় দুই পুরুষ পূর্বে আরাকান থেকে এসেছে।
তাদের ঐতিহ্য আর চট্টগ্রামের রাজস্ব দপ্তরে রক্ষিত দলিলপত্র দুই সূত্রে প্রমাণিত যে, তারা আরাকানী। তারা আরাকান হতে বিতাড়িত হবার পর পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ের পাদদেশসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করলে বার্মার আরাকান রাজা বৃটিশ শাসক টি, এইচ, লুইন কে একটি চিঠি দিয়ে তাদের অবস্থান সম্পর্কে অবগত করেন।
T.H Leween এর লিখিত গ্রন্থ “The Hill tracts of Chittagong and the dwellers There in” এর ২৯ পৃষ্ঠায় এই চিঠির উদ্ধৃতি রয়েছে, “Duncan, Chakma, and kieocopa, Lies, morning and other inhabitants of Aracan have now absconded and taken refuge near the mountains within your border.” অর্থাৎ, দুমকান, চাকমা, কুকি, লুসাই, মুরং এবং অন্যান্য অনেক আরাকানী স্বদেশ ত্যাগ করে সীমান্তের পাহাড় গুলির আশে পাশে আশ্রয় নিয়েছে। ইতিহাস যে স্বাক্ষ দেয়, তা হল- পার্বত্য চট্রগ্রামে বসবাসরত উপজাতি সন্ত্রাসীরা ‘আদিবাসী’ নয়, ভীনদেশ হতে বিতাড়িত সন্ত্রাসী মাত্র। সুতরাং পার্বত্য এলাকায় উপজাতিরা কোনভাবেই উক্ত সংগায় পড়ে না। তাই আদিবাসী স্বীকৃতির প্রশ্ন আসে না। এটা নিতান্ত অবৈজ্ঞানিক ও ভুলতত্ত্ব।
আজ শ্বেতাঙ্গ মার্কিন, ব্রিটিশ, অস্ট্রেলীয় এবং ইউরোপীয় তথাকথিত সুশিক্ষিত, ধ্বজাধারী সাবেক উপনিবেশবাদীদের নব্য প্রতিনিধিরা তাদের নব্য ঔপনিবেশবাদী অর্থাৎ তথাকথিত মুক্ত অর্খনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করার স্বার্থে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর পশ্চাৎপদ রাষ্ট্রসমূহের জন্য আদিবাসী সংরক্ষণ এর ধোয়া তুলে উপজাতির (Tribal) জন্য মায়া কান্না শুরু করেছে। এটা হল  সম্প্রসারণবাদীদের ষড়যন্ত্র বা চাণক্য চাল। যাতে পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ব তিমুর বা দক্ষিণ সুদানের পরিণতি ঘটে।
সর্বশেষে, আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, বাংলাদেশে নৃতাত্ত্বিক বাংলা ভাষা ভাষী বৃহত্তর জনগোষ্ঠী এখানকার প্রকৃত আদিবাসী। উপজাতীয় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে আগন্তুক ও অভিবাসিত। ভিন্ন অঞ্চলের নবাগত জাতিসত্ত্বা। তবুও তারা বাংলাদেশী। আমাদের সমান অংশীদার। এনজিও চক্রের- ‘আদিবাসী অধিকার’, ‘আদিবাসী পুনর্জাগরণ’, ‘আদিবাসী পুনর্বাসন’, ‘আদিবাসী সংরক্ষণ’ ইত্যাদি হাক-ডাক মূলত: তাদের চিরায়ত নীল নকশা ও ষড়যন্ত্রেরই অংশ। তাদের পাতা ফাঁদে আমাদের জনাব সন্তু বাবু পা দিয়ে বাংলাদেশকে খণ্ড-বিখণ্ড করে আমাদের প্রিয় জন্মভূমিকে খুবলে খাওয়ার জন্য সৃৃষ্ট চক্রান্তে লিপ্ত। অস্তিত্বের স্বার্থে দেশ ও জাতিকে এই জাতি বিনাশী ‘আদিবাসী’ বিতর্কে স্বদেশের পক্ষে ড. মিজানুর রহমানসহ সকলকে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে আশু আহবান জানাচ্ছি।
লেখক: সভাপতি, পার্বত্য বাঙালী নাগরিক পরিষদ।
Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

2 Replies to “৩০ হাজার বাঙালী হত্যাকারী সন্তু লারমাদের পক্ষে কেন ড. মিজানুর রহমান”

  1. যে লোকগুলো বাঙালী হয়েও উপজাতীদের দালালী করে, তাদেরকে অতিস্বত্বর গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহ থেকে বহিষ্কার করা হোক।

  2. likhte thaken, jati ekdin apnader dak sunte pabe. asa kori apnader plm gulo apnara kolomer maddome bolte parben.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন