২৫০ শয্যায় উন্নীত হচ্ছে রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতাল
রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি:
দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর অবশেষে রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতাল ২শত ৫০ শয্যায় উন্নীত হতে যাচ্ছে। সরকারের দেশ ব্যাপী জনগনের জন্য উন্নত ও দ্রুত চিকিৎসা সেবার অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালকে এ উন্নয়নের অনুমোদন দিয়েছে। ফলে রাঙ্গামাটি জেলার কোন রোগীকে তেমন আর বাইরে যেতে হবেনা।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সুত্র জানায়, জনসাধারনের স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নের জন্য ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রাঙ্গামাইট সদর হাসপাতালের ভবন নির্মানের জন্য প্রথম ধাপে ২০কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করেছে। ভবন নির্মানে নকশার কাজ দেরী হওয়ার কারনে মূলকাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে। নকশার কাজ শেষ হলেই খুব শীগ্রই হাসপাতলটি ১০ তলা ভবনের কাজ শুরু করা হবে।
স্বাস্থ্য বিভাগ আরও জানিয়েছে, এ সরকারের আমলে রাঙ্গামাটি স্বাস্থ্য বিভাগে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার পর রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতাল ১শ’ শয্যা থেকে এখন ২শত ৫০ শয্যায় উন্নতি করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র আরও জানান, ১০তলা ভবন পর্যাক্রমে উঠবে আর সাথে সাথে বরাদ্দও বাড়বে।১০তলা ভবনে থাকবে আধুনিক অপারেশন থিয়েটার, উন্নতমানের ল্যাব, উন্নত এক্স-রে, আল্ট্রাসনো গ্রাফী ও ইসিজিসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি। রাঙ্গামাটি সদর হাসপাতালটি হবে পরিপূর্ণ একটি আধুনিক হাসপাতাল। ২শত ৫০ শষ্যা হাসপাতাল চালু করা হলে রাঙ্গামাটিতে স্বাস্থ্যসেবা আরো একধাপ এগিয়ে যাবে। রাঙ্গামাটির মানুষ আর কষ্ট করে উন্নত চিকিৎসা ও উন্নত পরীক্ষা নিরিক্ষার জন্য চট্টগ্রাম যেতে হবে না। এখানেই পাবে স্বাস্থ্য সেবার সকল প্রকার উন্নত চিকিৎসা।
এছাড়াও ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে রাঙ্গামাটি স্বাস্থ্য বিভাগে ব্যাপক পরিবর্তনও হয়েছে। হাসপাতালে এসেছে নতুন এ্যাম্ভুলেন্স, নতুন এক্সরে মেশিন, ল্যাবের জন্য বাইনো কালার মাইক্রোসকোপ (রক্ত) পরীক্ষার মেশিন, এ্যানেলাইজার (ল্যাবেরজন্য) মেশিন ও নতুন আল্ট্রাসনোগ্রাফী মেশিন। এখন আর আল্ট্রা, এক্স-রে ও ইসিজির করার জন্য রোগিদের শহরের বাইরে যেতে হয় না।
এদিকে রাঙ্গামাটি জেলা বাসীর বহুদিনের দাবি সদর হাসপাতলটির শর্য্যা বৃদ্ধি করা হলে এবং চিকিৎসা সেবায় ডাক্তারের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা হলে মানুষের কষ্ট দুর হবে। পার্বত্য এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক কোন ডাক্তারের সেবা পেত না। তাদের একমাত্র ভরসা ছিল কবিরাজি চিকিৎসা। তাতে জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তির বাঁচার সম্ভাবনা থাকলেও তাও পারতো না। পার্বত্য চুক্তির পর তিন পার্বত্য জেলার দ্রুত উন্নয়নের কথা ছিল কিন্তু সেটা দ্রুত হয়নি রাজনৈতিক অস্থিরতা পরিস্থিতির কারনে। চুক্তির পর তিন জেলার মধ্যে রাঙ্গামাটিকে মাদার ডিস্ট্রিক্ট বলা হয়। কিন্তু সেই অনুযায়ী সরকার পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির সার্বিক উন্নয়নের কথা বলা হলেও স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে বহুদুর পিছিয়ে।
এছাড়াও স্বাধীনতার দীর্ঘ বছর পার হলেও তিন পার্বত্য জেলায় মানুষের স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে উন্নত কোন হাসপাতালও করা হয়নি। তাই চিকিৎসা সেবার দিক থেকে পার্বত্য জেলাগুলোর মানুষ পিছিয়ে পড়ে ছিল। তবে শুধু রাঙ্গামাটি নয় বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলা সদরেও উন্নত শয্যার হাসপাতাল দরকার।
সিভিল সার্জন ও রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজের প্রকল্প পরিচালক ডা. শহীদ তালুকদার জানান, রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় মানের দিক থেকে অনেক পরিবর্তন ও উন্নত হয়েছে। তার সুফল জনগণ পাচ্ছে হাসপাতালে তেমন কোন সমস্যা নেই বললেও চলে। তবে ১০তলা ভবন হয়ে গেলে রাঙ্গামাটি স্বাস্থ্য বিভাগের দৃশ্য পাল্টে যাবে। তখন আর কোন রোগীকে কষ্ট করে চট্টগ্রাম যেতে হবেনা। তবে হাসপাতালে জনবলের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। জনবল নিয়োগে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃপক্ষের নিকট তাগাদা নোট দেয়া হয়েছে। অচিরেই হাসপাতালে জনবল সংকটও দুর হতে পারে।
সিভিল সার্জন আরও জানান, জেলার প্রত্যন্ত দুর্গম উপজেলা রাজস্থলী, কাপ্তাই, বিলাইছড়িসহ তিন উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো ৫০ শষ্যায় উন্নতি করা হচ্ছে যা আগে ছিল ১০ থেকে ৩১ শয্যা। ইতিমধ্যে এসব উপজেলায় ভবনের কাজও শুরু হয়েছে। এসব ভবন এর উন্নয়নে প্রকল্প আকারে কাজ চলছে সেগুলো হলো ১৮মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। নতুন ভবনের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো চালু হলে প্রত্যন্ত দুর্গম এলাকার মানুষের হাতের নাগালে থাকবে আধুনিক চিকিৎসা সেবা ও উন্নত পরীক্ষা নিরিক্ষা সেবা। এসব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সিজারসহ ছোট অপারেশনও করা যাবে। এছাড়াও মজুদ থাকবে ঔষধ।