হুমকির মুখে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক, চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীতে বিলীন হচ্ছে শহর রক্ষাবাঁধ

চকরিয়া প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের চকরিয়ায় ভয়াবহ বন্যা ও মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে দিগরপানখালী ও কোচপাড়াস্থ পৌরশহর রক্ষাবাঁধটি (এক নম্বর গাইড বাঁধ) লন্ডভন্ড হয়ে যায়।  নদী তীরের এই বাঁধটি বর্তমানে ভাঙতে ভাঙতে একেবারে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে গেছে।

এই অবস্থায় নদীতে ফের উজানের পানি নামলেই বিদ্যমান থাকা এই বাঁধটির অবশিষ্টাংশও নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। এতে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ওপর দিয়ে পানি চলাচল করার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে এই বাঁধটি টেকসই বাঁধে রূপান্তর করা না হলে ব্যস্ততম এই মহাসড়কটি ভয়াবহ পরিণতির দিকে যাবে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত।

এদিকে পৌরশহর রক্ষা বাঁধটির এমন দুরবস্থায় পৌরসভার পক্ষ থেকে গত দুইদিন ধরে বালিভর্তি হাজারো বস্তা ফেলে কোনভাবে রক্ষা করা হলেও তা একেবারেই টেকসই নয়। এর পরেও বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পায় এলাকাবাসী।

ইতিমধ্যে এই বাঁধের ওপর আশ্রয় নেওয়া অন্তত শতাধিক বসতি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এসব পরিবার বর্তমানে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। এখন এই বাঁধটি যদি রক্ষা না হয় তাহলে ভবিষ্যতে বড় বিপদ অপেক্ষা করছে এখানকার মানুষের জন্য।

চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী জানান, পৌরসভার দিগরপানখালী ও কোচপাড়া পয়েন্টে মাতামুহুরী নদী তীরের এক নম্বর গাইড বাঁধটির বিশাল অংশ ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে নদীগর্ভে। এতে চরম ঝুঁকির মুখে পড়েছে ওই এলাকার বহু বসতবাড়ি ও স্থাপনা। যে কোন মুহূর্তে এই বাঁধের অবশিষ্টাংশ তলিয়ে গেলে নতুন করে ওই পয়েন্ট দিয়ে মাতামুহুরী নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। এমনটা যদি হয় তাহলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কও রক্ষা করা যাবে না। এই অবস্থায় গত দুইদিন ধরে এই বাঁধটি রক্ষার জন্য প্রাথমিকভাবে আমি স্থানীয় কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ এলাকার লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে বালিভর্তি বস্তা বসানোসহ নানা তৎপরতা চালিয়েছি।

চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ১৯৮৬ সালের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ওপর দিয়ে নদী প্রবহমান হয়ে পড়ে।

এতে ফাঁসিয়াখালীসহ আশপাশের ইউনিয়নগুলোর মানুষ বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখনকার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নদীর এই গতিপথ আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিতে মূলত মাতামুহুরী নদীতীরের এই গাইড বাঁধটি নির্মাণ করা হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে। তখন থেকেই এটি চকরিয়া পৌরশহর রক্ষা বাঁধ কাম সড়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

তিনি আরো বলেন, এই বাঁধ কাম সড়কের ওপর দিয়ে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত। কিন্তু গত কয়েকবারের ভয়াবহ বন্যায় একটু একটু ভাঙতে ভাঙতে বর্তমানে একেবারে ভয়াবহতায় রূপ নিয়েছে ভাঙন।

তাই এই পৌরশহর রক্ষাবাঁধটি টেকসইভাবে নির্মাণ করা না গেলে সামনে আমাদের জন্য বড় বিপদ অপেক্ষা করছে। উজান থেকে একটু পানি আসলেই বাঁধের অবশিষ্টাংশ তলিয়ে গিয়ে পুরো ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।

চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম বলেন, আমি পৌরমেয়র থাকাকালে এই বাঁধটি বেশ কয়েকবার সংস্কার করি। কিন্তু আমার পর যিনি মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি মাথা ঘামাননি এই শহর রক্ষাবাঁধ নিয়ে। বর্তমান মেয়র এবং আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এই বাঁধটি নিয়ে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেছি। তাদেরকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে এই বাঁধটি রক্ষা করা না গেলে পৌর বাস টার্মিনাল পয়েন্টে মহাসড়ক বড় ধরনের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তারা আশ্বস্ত করেছেন অচিরেই বাঁধটি টেকসইভাবে নির্মাণকাজে হাত দেওয়া হবে।

এব্যাপারে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, চকরিয়া পৌরশহর রক্ষা বাঁধ তথা এক নম্বর গাইড বাঁধটি যে কোনভাবেই রক্ষা করতে হবে। তা না হলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে মহাসড়কও বিলীন হয়ে যাবে। তাই অচিরেই জরুরি কাজের বিপরীতে এই বাঁধটি টেকসইভাবে সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।

তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আজিজ মোহাম্মদ চৌধুরী বলেন, পৌরশহর রক্ষা বাঁধটির দুরবস্থা সরজমিন প্রত্যক্ষ করে এসেছি। এর পর ঢাকায় প্রধান প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিয়ে কাজটি সহসাই শুরু করতে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন