হরতালে থার্টি ফার্স্ট নাইটের ব্যবসায় ধ্বস

সি বিচ

স্টাফ রিপোর্টার :

ইংরেজি বছরের শেষ দিন। অর্থাৎ থার্টি ফাস্ট নাইটটি কক্সবাজারে কাটুক তা অনেকেই চায়। থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন ও পর্যটকদের বরণে বর্ণিল সাজে সেজেছেও কক্সবাজার। কিন্তু পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়ালো হরতাল।

পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন যে, জামায়াতের ডাকা দুই দিনের হরতাল পুরো আনন্দ আর তাদের ব্যবসা মাটি করে দিয়েছে। তারপরও থার্টি ফাস্ট নাইটকে ঘিরে পুলিশের ৪ স্তরের নিরাপত্তা, জেলা প্রশাসনের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে।

কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, “পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা মনে করেছিলেন এবার দুই লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম হবে। ২৫ ডিসেম্বর প্রচুর পর্যটক ছিল। কিন্তু ২৮ ডিসেম্বর হঠাৎ করে প্রায় উধাও হয়ে গেল। এখন যারা এসেছেন সব মিলে ৫০ হাজারও পর্যটক হবেনা।”

আবাসিক হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ শফিকুর রহমান জানান, “সাড়ে ৪ শতাধিক প্রতিষ্ঠানে তাদের ধারণ ক্ষমতা দেড় লাখ। ৩১ ডিসেম্বর তার সব অগ্রীম বুকিং ছিল। একই সঙ্গে বিলাস বহুল আবাসিক হোটেল, ফ্ল্যাট সমূহ আরো ৫০ হাজার মানুষ থাকবে। তাও বুকিং হয়েছিল। কিন্তু ২৮ ডিসেম্বর অনেক পর্যটক তাদের বুকিং ছেড়ে দেয়।

হোটেল দ্যা কক্স টুডের পরিচালক অপারেশন সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছেন, “হরতালের কারণে অনেক পর্যটক তাদের বুকিং বাদ দিয়ে দেন। থার্টি ফাস্ট নাইটকে ঘিরে পর্যটন ব্যবসায়ী কোটি টাকার ব্যবসা করতো। কিন্তু হরতাল সব কিছু মাটি করে দিল। তারপরও কিছু পর্যটক এসেছে।”

স্বপ্নপূরী ট্রাভেল টিউন এর পরিচালক বেলাল আবেদীন ভুট্টো জানিয়েছেন, “ইনানী, মহেশখালীর সোনাদিয়া, আদিনাথ, হিমছড়ি, রামু ও সাফারী পার্ক গুলোতে আমরা পর্যটকদের সেবা দিয়ে থাকি। এছাড়া সেন্টমার্টিনও পর্যটকদের আমরা সেবা দেই। কিন্তু হরতালের কারণে আশানুরূপ পর্যটক আসতে পারেনি। এতে আমাদের ব্যবসার অনেক ক্ষতি হবে।”

এদিকে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন জানিয়েছেন, “থার্টি ফাস্ট নাইট উপলক্ষে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে কয়েকটি বড় অনুষ্ঠানের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন আবাসিক হোটেল কেন্দ্রিয় রয়েছে ছোট বড় শতাধিক অনুষ্ঠান মালার। পুরোটায় উৎসব আমেজে কাটাতে পারবে পর্যটকরা। এদের নিরাপত্তার জন্য সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।”

তিনি আরো জানান, “শহরের পর্যটন জোন, সমুদ্রে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে সহ হোটেল মোটেলে নানা স্থানে ভ্রাম্যমান আদালতের ১২ টি দল কাজ করবে পর্যটকদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য। সাথে পুলিশ, র‌্যাব, আনসার থাকবে বিপুল সংখ্যক।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ জানিয়েছেন, “১২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহ ৮০২ জন পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশোকে মাঠে থাকছে আরো ২০০ জন পুলিশ সদস্য । এছাড়া মাঠে থাকবে র‌্যাবের ৪ টি ইউনিট। পুলিশ নিরাপত্তা পরিকল্পনা অনুযায়ী কক্সবাজার পুলিশ সুপারের তত্বাবধায়নে ২ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ৫ জন এ এসপি (সার্কেল ) ও ১৬ জন পুলিশ পরিদর্শক শহরের বিভিন্ন স্থানে পর্যটকদের নিরাপত্তা প্রদান কাজ করবে। এদের সাথে আরো থাকবে ৫১ জন উপ-পরিদর্শক ( এসআই ) ও ৬৯ জন সহকারী উপ-পরিদর্শক ( এএসআই ) সহ ৫৭ জন নারী কনস্টেবল সহ ৩৫৯ জন কনস্টেবল।”

তিনি আরো জানান, “ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে ৮৬ জন পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে। যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের এএসপির তত্ত্বাবধায়নে ৩ জন ট্রাফিক ইনস্পেক্টরের নেতৃত্বে ৯ জন ট্রাফিক সার্জেন্ট ও ১১ জন এটিএসআইয়ের সাথে থাকবে ৩৫ জন ট্রাফিক কনস্টেবল। জেলার বাইরের পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট থেকে পর্যটকদের নিরাপত্তা বিধানে কক্সবাজারে ২৪০ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবে।”

এছাড়া সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ও পর্যটন জোনের বিভিন্ন স্পটসহ হোটেল-মোটেল এলাকায় ২০০ জনেরও অধিক ছদ্মবেশে পুলিশ মোতায়েন করা হবে।পর্যটকদের নিরাপত্তা প্রদানে জেলা পুলিশের পাশাপাশি কাজ করবে র‌্যাবের ৪ টি মোবাইল টিম কাজ করবে বলেও জানান তিনি।

কক্সবাজারস্থ র‌্যাব ৭ এর ক্যাম্প কমান্ডার এএসপি দেলোয়ার হোসেন জানান, “আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা প্রদানে র‌্যাবের ৪ টি মোবাইল ইউনিটের ৬৪ জন সদস্য সার্বক্ষণিক মাঠে থাকছে। এর পাশাপাশি যেকোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় র‌্যাবের ১৫০ জনের স্ট্যান্ডবাই টিম প্রস্তুত থাকছে।”

ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহমেদুল কবীর জানিয়েছেন, “পর্যটকদের ভ্রমণ সার্বিক নিরাপদ ও আনন্দময় হবে। সকল প্রস্তুতি তাদের রয়েছে।”

যা থাকছে থার্টি ফাস্ট নাইটে :

থার্টি ফাস্ট নাইটে আগত পর্যটকের আনন্দ দিতে আয়োজন করা হয়েছে নানা অনুষ্ঠানের। বেসরকারি টেলিভিশনের উদ্যোগে আইয়ুব বাচ্চু, জেমস সহ দেশখ্যাত শিল্পীদের উপস্থিতিতে রয়েছে সৈকতে পৃথক ওপেন কনসার্ট। একই সঙ্গে ইন্ডিয়ান আইডলসহ অন্যান্য শিল্পীদের উপস্থিতিতে রয়েছে আরো নানা অনুষ্ঠানের। এসএটিভির ওপেন কনসার্টে নগর বাউলের জেমস, মিলা, বাংলাদেশ আইডেটেলের শীর্ষ ১০ জন অংশ নেবে। এটা সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।

এছাড়া আরো অনেক অনুষ্ঠান রয়েছে। তবে হরতালের কারণে বেশ কিছু অনুষ্ঠান ইতোমধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন