স্ট্রবেরি চাষ বদলে দিতে পারে খাগড়াছড়ির অর্থনৈতিক অবস্থা

19.04.2014-Strawbery NEWS Pic

মুজিবুর রহমান ভুইয়া :

স্ট্রবেরি চাষ বদলে দিতে পারে খাগড়াছড়ির অর্থনৈতিক অবস্থা। খাগড়াছড়ি জেলায় দিন দিন স্ট্রবেরি চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরী হচ্ছে। পাহাড়ী এ জেলায় স্ট্রবেরি চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও বাজারজাতের সমস্যার কারণে স্ট্রবেরি চাষে প্রসার পাচ্ছেনা। ফলটির মূল্যহার উচ্চ এবং স্থানীয় সাধারণ মানুষের অপরিচিত হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা খুবই কম। বাজার ব্যবস্থার সমস্যার কারণে চাষে তেমন আগ্রহও নেই অনেকের।
 
সরকারী ভাবে বাজারজাত করণের ব্যবস্থা করা হলে স্ট্রবেরি চাষে একদিকে স্থানীয় কৃষকরা উৎসাহিত হবে আর অন্যদিকে পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলাও অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন খাগড়াছড়ির প্রথম স্ট্রবেরি চাষী মহালছড়ির বিমলব্রত চাকমা।
 
জেলার মহালছড়ি উপজেলার করইল্যাছড়ি গ্রামের বিমলব্রত চাকমা গত তিন বছর ধরে স্ট্রবেরি চাষ করছেন। অনেকটা সখের বশেই স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেছিলেন এ শিক্ষক। প্রথম দিকে সখের বশে শুরু করলেও নেশা গ্রস্থ হয়ে এখন শিক্ষকতার পাশাপাশি স্ট্রবেরি চাষকে পেশা হিসেবেই গ্রহণ করেছেন বলে জানালেন লেমুছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক বিমলব্রত চাকমা।
 
শিক্ষক হিসেবে টানাটানির সংসারে এখন অর্থনৈতিকভাবেও এখন অনেক স্বচ্ছল তিনি। তিন বছরের ব্যবধানে তার অর্থনৈতিক অবস্থার অনেক উন্নত হয়েছে বলেও জানান তিনি। স্ট্রবেরি চাষ থেকে প্রাপ্ত বাড়তি আয় দিয়ে নিজের দুই ছেলে ছাড়াও আত্মীয় স্বজনের ছেলেমেয়েদেরও পড়ালেখায় আর্থিক সহযোগিতা করছেন বিমলব্রত চাকমা।
 
গত বছর পঁচাত্তর শতক জমিতে প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার কেজি স্ট্রবেরি উৎপাদন হয় বলে জানান বিমলব্রত চাকমা। প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়ে থাকে স্থানীয়ভাবে। একসময় ক্রেতা হিসেবে শুধু সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা ও শিক্ষিত লোকজন থাকলেও বর্তমানে সাধারণ ক্রেতারাও স্ট্রবেরি কিনতে খামারে আসে বলে জানান বিমলের স্ত্রী মুনমুন খীসা।  
 
পঁচাত্তর শতক জমিতে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে স্ট্রবেরি চাষ করে আয় হয়েছিল প্রায় পনের লাখ টাকার মতো এমন তথ্য দিয়ে বিমলব্রত চাকমা জানান, চলতি মৌসুমে বিমলের জমিতে অ্যামেরিকান ফ্যাস্টিবল ও জাপানি রাবি-থ্রি এ দুই  জাতের স্ট্রবেরি পাওয়া যাবে।
 
বিমলব্রত চাকমা জানান, ব্রাকের আয়োজনে ২০০৭ সালে কুমিল্লায় শিক্ষকতা পেশার বিষয় ভিত্তিক প্রশিক্ষণের সময় স্ট্রবেরি চাষের উপর একটি লিফলেট বিলি করা হয় তাদের মাঝে। সে লিফলেটটি যতœ করে রেখে দেন বিমল। পরে ২০১১ সালে কক্সবাজারের চকরিয়া থেকে চারা সংগ্রহ করে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেন পেশায় শিক্ষক। এবার চতুর্থবারের মতো স্ট্রবেরি চাষ করছেন তিনি। বর্তমানে তিনি নিজেই চারা সরবরাহ করছেন। তার কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করে বিভিন্ন উপজেলার কয়েকজন কৃষকসহ অনেকেই দুই বছর ধরে স্ট্রবেরি চাষ শুরু করেছেন।
 
বিমলব্রত চাকমা‘র পথ অনুসরণ করে তার পাশের গ্রামের থৈলাচাই মারমা, তার এক চাচাতো ভাই ছোটন চাকমা, পানছড়ি উপজেলার জ্যোতিপাল চাকমা ছাড়াও মহালছড়ি জোন ও মাটিরাঙ্গা জোনে স্ট্রবেরি চাষ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন