সৌদিতে মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় পেকুয়ার ৩ যুবকের মৃত্যু, আহত ২ : নিহতদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম

pekua 02(3)

নিজস্ব প্রতিনিধি, পেকুয়া :

সৌদি আরবে এক মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনায় কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার ৩ প্রবাসী যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। নিহতের পরিবার সমূহ এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এসময় আরো ২ জন গুরুতর আহত হয়েছে। আহতদের অবস্থাও আশংকাজনক বলে তাদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে। গত শুক্রবার বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩ টার দিকে সৌদি আরবের আবাহা ডিস্ট্রিকের শা-বাইন রোড়ে মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনার ঘটনাটি ঘটে।

নিহতরা হলেন কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের মরিচ্যা দিয়া গ্রামের বজল আহমদের পুত্র মো: লিটন (২৮), একই ইউনিয়নের বাইন্যা ঘোনা গ্রামের হাজী আবু তাহেরের পুত্র মো: ছাদেক (২৭) ও একই উপজেলার শীলখালী ইউনিয়নের জারুলবুনিয়া গ্রামের আনোয়ার কবিরের পুত্র মো: রবিউল আলম (২৫)। গুরুতর আহতরা হলেন, পেকুয়ার শীলখালী ইউনিয়নের জারুলবুনিয়া গ্রামের শাহাব উদ্দিনের পুত্র মো: আবদুল¬াহ (২৪) ও একই গ্রামের আবদু রশিদের পুত্র মো: জাহেদ (২৩)।  তাদের প্রবাসী বাংলাদেশীরা ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে আবাহা জেনারেল হাসপাতালের জারুরী বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। আর নিহত ৩জনের লাশ ওই হাসপাতালে হিমঘারে রাখা হয়েছে। নিহত ও আহতরা আবাহা ডিস্ট্রিকে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করত বলে তাদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে।

সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত মো: ছাদেকের পিতা হাজী আবু তাহের শনিবার দুপুর ১টার সৌদি আরবের আবহা এলাকা থেকে আজকের দেশ বিদেশের প্রতিনিধিকে টেলিফোনে জানিয়েছেন, শুক্রবার বাংলাদেশ সময় ৩টার দিকে তার পুত্রসহ তারা ৫ বন্ধু আবাহার পার্বত্য এলাকা শা-বাইন রোড়ে একটি পিকআপ ভ্যানটি নিয়ে বেড়াতে বের হয়েছিল। পথেই তাদের বহন করা পিকআপ ভ্যানটি পাহাড়ে উঠার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুইশ ফুট গভীর খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে রবিউল ও লিটন মারা যায়। পরে শনিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গুরুতর আহত তার পুত্র ছাদেক মারা যায়।

স্থানীয় আবাহা ডিস্ট্রিকের পুলিশ দূর্ঘটনা কবলিত পিকআপ ভ্যানটি উদ্ধার করেছে। সৌদি আরবে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত পেকুয়ার তিন যুবকের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। নিহতদের আত্মীয় স্বজনদের বুকফাঁটা কান্নায় আশেপাশের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে।

জানা যায়, দুই বছর পূর্বে পরিবারের সচ্ছলতা আনতে সহায়-সম্বল বিক্রি করে সৌদি আরবে পাড়ি জমান শীলখালী ইউনিয়নের জারুলবুনিয়া গ্রামের আনোয়ার কবিরের পুত্র রবিউল আলম। কিন্তু সড়ক দূর্ঘটনায় তার পরিবারের স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে।

শনিবার নিহত রবিউলের বাড়ীতে গিয়ে দেখা গেছে, তার বৃদ্ধ পিতা-মাতা ছেলে হারানোর শোকে বার বার মূর্ছা যাচ্ছে। তার পিতা আনোয়ার কবির কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, গত বুধবার ও তার ছেলের সাথে মোবাইলে সর্বশেষ কথা হয়েছে। এবারের ঈদের পরে বেড়াতে এসে বিয়ে করার কথা জানিয়েছিলেন তার মাকে। এখন ছেলেকে হারিয়ে কিভাবে বেঁচে থাকব ভেবে পাচ্ছিনা।

এদিকে সৌদি আরবে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত মো: ছাদেকের বাড়ীতে বাড়ীতে গিয়ে দেখা গেছে, তার আত্মীয় স্বজনরা ও পরিবারের সদস্যরা অজোর নয়নে কাঁদছে। গ্রামবাসীরা তার বাড়ীতে এসে ভীড় জমিয়েছে।  গত তিন মাস পূর্বে ছুটি শেষে সৌদি আরবে ফিরে যান ছাদেক।

এসময় মা রজিমা বেগম বিলাপ করে বলছিলেন, আগামী বছর তার ছেলে ছাদেক তাকে পবিত্র হজ্বে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। গত কয়েক দিন পূর্বেও তার ছেলের সাথে মোবাইলে কথা হয়েছে উল্লেখ করে রজিমা বেগম আরো জানান, কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিনা আমার ধন (ছাদেক) সড়ক দূর্ঘটনায় মারা গেছে। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে নিহত ছাদেক সবার বড় সন্তান ছিল পরিবারের।

অপরদিকে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত মগনামা ইউনিয়নের প্রবাসী বজল আহমদের পুত্র লিটনের বাড়ীতে গিয়ে দেখা গেছে, তার পরিবারের সদস্যদের কান্নায় এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। গ্রামবাসীরা এসে পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দিচ্ছে। মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল মোস্তফা চৌধুরী তার ইউনিয়নের দুজন সৌদি আরবে সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এদিকে সৌদি আরবে সড়ক দূর্ঘটনায় তার উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ৩যুবক নিহতের হওয়ার বিষয়টি অনেক প্রবাসীই তাকে টেলিফোনে জানিয়েছেন। তিনি নিহত তিন হতভাগা যুবকের লাশ দেশে পাঠানোর জন্য সৌদি আরবের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন নিহতের পরিবারগুলো।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন