সোনাইছড়িতে ডাকাত আতংক

 

বাইশারী প্রতিনিধি:

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দুর্গম ইউনিয়ন সোনাইছড়িতে ডাকাত আতংকে রয়েছেন পুরো ইউনিয়নবাসী। পরপর চারটি ডাকাতির ঘটনায় উপজেলা প্রশাসন ও নড়েচড়ে বসেছে ডাকাত দমনে।

গেল সপ্তাহে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, থানা অফিসার ইনচার্জ, স্থানীয়দের নিয়ে ডাকাত কবলিত সোনাইছড়ি ইউনিয়নে এক জরুরী সভা আয়োজন করেছেন। বর্তমানে পুলিশের পাশাপাশি পাড়া মহল্লায় রাত জেগে পাহারা বসিয়েছেন এলাকাবাসী।

এই প্রতিবেদক সরজমিনে সোনাইছড়িতে ঘুরে এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, জনসাধারণ এখন রয়েছে আতংকে। কোন সময় আবারো ডাকাতের কবলে পড়ে তারা সর্বস্ব হারায়। চোখেমুখে হতাশার চাপ লক্ষ করা যায়। যেখানে দিন-দুপুরে ডাকাতের কবলে পড়েছেন স্থানীয় চেয়ারম্যান নিজেই।

ইউনিয়নটির চতুপার্শ্বে পাহাড় ও জঙ্গল বেষ্টিত। গাড়িযোগে যাওয়ার পথ রয়েছে একটিমাত্র রাস্তা নাইক্ষ্যংছড়ি সদর হয়ে সোনাইছড়ি পর্যন্ত। পায়ে হেঁটে ছাড়া অন্য কোন বিকল্প পথ নেই বলে জানালেন স্থানীয় অনেকেই।

১৬ ফেব্রুয়ারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাহাইন মার্মা নিজেই উপজেলা সদর থেকে অফিসের কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পথে গাড়ি থামিয়ে সশস্ত্র ডাকাত দলের সদস্যরা মোবাইল, টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র লুটে নেয় এবং শারীরিকভাবে তাকে নির্যাতনও করা হয়।
৯ মার্চ রাতে একই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মংলা তংঞ্চগ্যা বাড়িতে ডাকাত দলের সদস্যরা হানা দিয়ে সর্বস্ব লুটে নেওয়ার পর বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। বর্তমানে তার অবস্থা কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে জানান।

এছাড়া বিগত মাসেও পথচারিদের থামিয়ে ভগবান টিলা নামক স্থানে সর্বস্ব লুটে নিয়ে যায় ডাকাত দলের সদস্যরা। ডাকাত আতংকে জুম খোলা সাত গরিয়া পাড়ার লোকজন এলাকা ছেড়ে অন্যত্রে চলে যায়। সব মিলিয়ে সোনাইছড়িবাসী এখন আতংকে রয়েছে বলে অনেকেই জানান।

১৪ মার্চ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকাবাসীদের অভয় দিয়ে সোনাইছড়ি ইউনিয়নের রেজু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক জরুরী আইন শৃঙ্খলা সভার আয়োজন করা হয়। ঐ সময় পাহাড়ী বাঙালী মিলে এলাকার শত শত লোকজন উপস্থিত ছিলেন। উক্ত সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস.এম. সরোয়ার কামাল।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান (ভার.) কামাল উদ্দিন, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নাইক্ষ্যংছড়ি থানা অফিসার অফিসার ইনচার্জ মো. আলমগীর শেখ, ওসি তদন্ত জায়েদ নুর, উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য সচিব ইমরান মেম্বার, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বাহাইন মার্মা প্রমুখ।

উক্ত সভায় ডাকাত দমনে উপজেলা প্রশাসন স্থানীয়দের সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন এবং সকলকে পাড়ায়-মহল্লায় রাত জেগে পাহারা বসিয়ে পুলিশের পাশাপাশি ডাকাত দমনে প্রস্তুত থাকার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।

অপরদিকে ১৭ মার্চ সকাল ১০টার সময় সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ মিলনায়তনে পরিষদের উদ্যোগে মাসিক আইন-শৃঙ্খলা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঐ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউপি চেয়ারম্যান বাহাইন মার্মা, পরিষদ সচিব মুচিউদুল্লাহ, ইউপি সদস্য ক্যজ মার্মা, আব্দুর রহিম, ফোচিং মার্মা, সাইফুল ইসলাম, মংলা তংঞ্চগ্যা, আব্দুল হাকিম, ঞোচামং মার্মা, মহিলা সদস্য ইয়াইনু মার্মা, নুরুন্ন্াহার প্রমুখ। আইন-শৃঙ্খলা সভায় সকলেই ডাকাত দমনে প্রস্তুত থাকার পাশাপাশি রাত জেগে পাহারা বসানো প্রস্তাব তুলেন।

সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বাহাইন মার্মাসহ অনেকেই আইন-শৃঙ্খলা সভায় বলেন, উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নে এক সময় ডাকাত এবং অপহরণ আতংকে লোকজন চোখের ঘুম হারাম করছিল। বর্তমানে বাইশারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আবু মুসার নিরলস পরিশ্রম ও সাড়াশি অভিযানের ফলে পর পর দুইজন ডাকাত এবং অপহরণকারীর চক্রের সক্রিয় সদস্য গ্রেপ্তারের পর এলাকাবাসী স্বস্তি নিঃশ্বাস ফেলেন এবং বর্তমানে এলাকায় ডাকাতি ও অপহরণ বন্ধ রয়েছে।

তাই এলাকাবাসী এবং পরিষদবর্গরা কিছুদিনের জন্য বাইশারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আবু মুসাকে সোনাইছড়িতে অভিযান পরিচালনার জন্য দায়িত্ব দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন।
চেয়ারম্যান আরো বলেন, তিনি মুসা দারোগাকে সোনাইছড়িতে অভিযান পরিচালনার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ জেলা পুলিশ সুপারকে অবহিত করবেন।
উল্লেখ্য, বাইশারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ আবু মুসা দীর্ঘ ১৭ মাস যাবত বাইশারীতে ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্বপালন করে আসছেন।

আবু মুসা যোগদানের আগে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বাইশারীতে চরম অবনতি ঘটছিল। এলাকায় অপহরণ, মুক্তিপন বানিজ্য, চুরি ডাকাতি, খুন-খারাবি একের পর এক চলতে থাকায় তৎকালীন পুলিশ সুপার বর্তমান ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য বাইশারীতে ইনচার্জ হিসেবে প্রেরণ করেন।

সেই থেকে দীর্ঘ ১৭ মাস জেলার বহুল আলোচিত সমালোচিত আবু মুসা বাইশারী ইউনিয়ন সহ আশপাশ এলাকায় অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে সক্ষম হয়। সর্বশেষ গত সপ্তাহে অপহরণ চক্রের দুই সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে তাদের স্বীকারোক্তিতে অপহরণকারীর আস্তানার সন্ধান পায়। ঐসময় সঙ্গীয় ফোর্স সহ অভিযান চালিয়ে অপহরণকারীদের আস্তানা ধ্বংস করে দেন। বর্তমানে এলাকার লোকজন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন