সৈকত নগরী কক্সবাজারের আইনশৃংখলা অবনতি: ২০ দিনে ১১ খুন

খুন

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

কক্সবাজারে খুনের ঘটনা অস্বাভাবিক হারে বেড়েই চলছে। খুন যেমন হচ্ছে, তেমনি আত্মহত্যা, ছিনতাই অপহরণসহ ডাকাতির ঘটনাও ঘটে চলেছে। এ কারণে কক্সবাজারের সাধারণ মানুষের মাঝে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বেড়েই চলেছে।

তথ্যমতে, গত ২০ দিনে চকরিয়ায় শিক্ষক নারায়ণকে ঘরের ভেতরে গুলি করে হত্যাসহ কক্সবাজার জেলায় অন্তত ১১জনের খুনের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও বিচ্ছিন্ন সব ঘটনায় আহত হয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক। হত্যার চেষ্টা, অপহরণ, ডাকাতি, ধর্ষণ, চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে ১০০টিরও বেশি। এসব ঘটনায় আটক করা হয়েছে ২২ জনকে। অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে ৩টিরও বেশি। তবে তুলনামূলকভাবে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির ভাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র।

সংশ্লিষ্ট থানার তথ্যে মতে, গত ৯ অক্টোবর থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত জেলায় খুন হয়েছে ১১ জন। আর বিচ্ছিন্ন সব ঘটনায় আহত হয়েছে প্রায় শতাধিক নারী-পুরুষসহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। বিভিন্ন স্থান থেকে ৩টিরও বেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ঘটনা হলো ৯ অক্টোবর সদরে উপজেলার ঈদগাঁও দরগাহ পাড়া শ্বশুর বাড়িতে ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছে মনছুর আলম নামের এক যুবককে। উখিয়া রত্নাপালং ইউনিয়নে ভালুকিয়া তেলী পাড়া গ্রামে স্ত্রীর সাথে অভিমান করে আত্মহত্যা করেছে স্বামী গিয়াস উদ্দিন। রামু ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নে মধ্যম মেরুংলোয়া বড়ুয়া পাড়া তিন পথের মাথা নামক স্থানে বন্ধুর হাতে আরেক বন্ধু খুন হয়েছে। ১০ অক্টোবর রামুতে সহোদর ভাইয়ের চুরিকাঘাতে খুন হয়েছে হাছিনা আকতার নামের এক গৃহবধু। এসময় আহত হয়েছে ভাই সানাউল্লাহ, বোন নাছিমা আকতার ও ভাবী জাহেদা আক্তার। উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে পাষন্ড স্বামী হোছন আহমদ তার স্ত্রী হাছিনা বেগমকে গলা টিপে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। ইনানী সী-বিচে বেড়াতে গিয়ে বখাটের হামলায় ২ পর্যটক শিকার হয়েছে। ১১ অক্টোবর মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নে দেবাঙ্গা পাড়া এলাকায় প্রতিপক্ষের গুলিতে নেছারুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি খুন হয়েছে। একই দিন চকরিয়ায় ডাকাত দলের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের লোকজন গভীর রাতে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে শ্বাসরোধ করে খোরশেদ আলম নামের এক ব্যক্তিকে হত্যা ও তার ছোট ভাই মোর্শেদ আলমকে কুপিয়ে জখম করেছে। খুটাখালী চিংড়িজোন খ্যাত টকটকি ঘোনা নামক এলাকায় কয়েক দফা ডাকাতির ঘটনা সংঘঠিত হয়েছে। একই দিন উত্তর বন বিভাগের মাছুয়াখালী বিটে গুলাগুলির ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

১২ অক্টোবর চকরিয়া পৌরসভার কাহারিয়াঘোনার ছেনোয়ারা বেগম নামের এক গৃহবধুকে যৌতুকের জন্য শশুরবাড়ির লোকজন গলা টিপে হত্যার চেষ্টা করে। ঈদগাঁওতে বসত বাড়িতে গভীর রাতে দুর্বৃত্তদের হানা। একই দিন ঈদগাঁও বাস স্টেশনে ফলের দোকানে ভাংচুর। ১৩ অক্টোবর পৃথক বন্দুক যুদ্ধে ২ ডাকাত ও পুলিশসহ আহত হয়েছে ৮ জন। এসময় মনির আলম নামের এক ডাকাতকে আটক করেছে পুলিশ, একই দিন সৈয়দ হামজা নামের এক ব্যক্তিকে অপহরণ করেছে দুর্বৃত্তরা। ১৪ অক্টোবর শহরের দক্ষিণ তারাবনিয়ার ছড়া এলাকায় অসহায় পরিবারের উপর সন্ত্রাসী হামলা। ঈদগড়ে মুক্তিপণ দিয়ে উদ্ধার হন বড়বিল এলাকার মোহাম্মদ হোছনের পুত্র নূরুল আলম। টেকনাফের হ্নীলায় ইয়াবা চালান লুটের অভিযোগে এক ব্যক্তিকে অপহরণ, একই দিন রাতে ঈদগড়ে ডাকাতের কবলে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান। ১৫ অক্টোবর ঈদগাঁও-ঈদগড় সড়কে ৩ যানবাহনে ডাকাতি।

১৬ অক্টোবর উখিয়া থানার পুলিশের উপস্থিতিতে দুই পক্ষের মাঝে ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের ১০ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় ৫ জনকে আটক করেছিল পুলিশ। পেকুয়ায় নিখোঁজ হওয়ার দুই দিন পর কুতুবদিয়া চ্যানেলে বসানো বিহিন্দি জাল থেকে নূর ছৈয়দ নামে এক জেলের মৃতদেহ উদ্ধার। খুটাখালীর জলদাশ পাড়ায় বসত বাড়ির পেছনে জুয়া খেলায় বাধা দেওয়ায় ভাংচুর ও হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা এতে ৪জন আহত হয়। একই দিন চাঁদা আদায়কালে পুলিশের হাতে আটক হয় ঈদগাঁওয়ের ৩ জন। ১৭ অক্টোবর বঙ্গোপসাগরে মহেশখালীর অতিদূরে ৪ টি মাছ ধরার ট্রলারে ডাকাত দলের বেপরোয়া গুলি বর্ষণ এতে ৪ মাঝি মাল্লাসহ আহত হয় লুট করা হয় ট্রলার সহ বেশ কিছু মালামাল। মহেশখালীর মাতারবাড়িতে ৩ সন্তানের জননীকে নির্মমভাবে খুন করে দূর্বৃত্তরা। চকরিয়া খুটাখালী নানার বাড়ীতে বেড়াতে এসে গনধর্ষণে স্বীকার হয়েছে এক মহিলা। ইসলামাবাদে এক স্কুল ছাত্রী বখাটে কর্তৃক ইভটিজিং শিকার হন। শহরে ছিনতাইকালে হাসান প্রকাশ রনি নামের এক ছিনতাইকারীকে আটক করে পুলিশ, রামু উপজেলায় এক যুবককে অপহরণ করে মুক্তিপণ ও শারিরীক নির্যাতন করা হয়। একই দিন ঈদগাঁও কানিয়াছড়া এলাকায় যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে মারধর করেছে শশুর বাড়ির লোকজন। ১৮ অক্টোবর চকরিয়া পৌরসভার দিগর পানখালি এলাকায় সশস্ত্র ডাকাতের গুলিতে নারায়ণ দাশ নামের এক স্কুল শিক্ষক নিহত ও তার বয়োবৃদ্ধ মাসহ আহত হন ৪ জন। মহেশখালীর হোয়ানকে পুলিশ ডাকাত বন্দুকযুদ্ধে মোহাম্মদ মোস্তাক নামের এক ডাকাত গুলিবিদ্ধ ও ৪ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। এ সময় ঘটনাস্থল অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। ১৯ অক্টোবর চকরিয়ায় আটককৃত এক ডাকাতকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করতে অভিযানে গেলে পুলিশ-ডাকাত বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এতে ডাকাত আজিজসহ ৪ পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়। ঈদগড়ে দশ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে অপহরণ চক্রের হাত থেকে ছিদ্দিক আহাম্মদ নামের এক ব্যক্তি উদ্ধার করে। একই দিন চৌফলদন্ডীতে পুলিশ-ডাকাত বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এ সময় একটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। ২০ অক্টোবর শহরে প্রাইভেট পড়ানোর নামে ৪র্থ শ্রেণীর এক শিক্ষাথীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে লম্পট শিক্ষক। ঈদগাঁও বাজারে দোকানে চুরি, একই দিন হ্নীলায় আওয়ামীলীগ নেতার চুরিকাঘাতে ছাত্রলীগ নেতা রক্তাক্ত। ২১ অক্টোবর রামুর ঈদগড়ে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ৫ ডাকাত আটক। ২২ অক্টোবর চকরিয়া শাহার বিল ইউনিয়নে পারিবারিক কলহের জের ধরে বিষপানে আবু মইন নামের এক যুবকের আত্মহত্যার চেষ্টা। যুবলীগ নেতা মিজান হত্যা মামলার আসামীরা জামিন এসে বাদিকে মামলা তুলে নিতে নানা হুমকি। উখিয়ার থাইংখালী শাহপরীর দ্বীপ পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা ১২ হাজার ইয়াবাসহ ৩ লক্ষ টাকা ছিনতাই করে গায়েব করার অভিযোগ। কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কে দৈনিক সাগর দেশ পত্রিকার অফিসে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট করে দূর্বৃত্তরা। একই দিন ঈদগাঁও কবি নূরুল হুদা সড়কে ডাকাতি। ২৪ অক্টোবর চকরিয়া ও টেকনাফে অপহৃত ৩ শিশু, মুক্তিপণ আদায়কালে আটক ২। বীচ পার্ক মার্কেটে চুরি। একই দিন চকরিয়ায় মোটর সাইকেল চুরির অভিযোগে ৩ জনকে আটক। ২৬ অক্টোবর উখিয়া কুতুবপালং রোহিঙ্গা শিবির সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য। সাহাব উদ্দিন, সাকিব ও জুয়েল নামে ৩ প্রতারক নামধারী সংবাদিক পরিচয় দিয়ে এক আইনজীবি সহকারীর কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী কক্সবাজার সদর থানায় অভিযোগ দায়ের। ২৭ অক্টোবর রাত ৯টার দিকে পাহাড়তলী বাউবি বাজার এলাকায় এক রোহিঙ্গা থেকে শহরের ত্রাস নিশানের নেতেৃত্বে ৭২ হাজার ছিনতাই। চকরিয়া শিশু অপহরণের ঘটনায় ১ জনকে আটক। একই দিন পুলিশের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় উখিয়ার এক সাংবাদিককে মামলার হুমকি। সর্বশেষ শহরে দিন দুপুরে ব্যবসায়ীকে গুলি করে ৭ লক্ষ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ সব ঘটনায় বর্তমানে জেলার বিভিন্ন উপজেলার সাধারণ জনগণ উদ্বেগ, উৎকন্ঠায় দিনাতিপাত করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

এনিয়ে পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ জানান, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ প্রশাসন সর্তক রয়েছে। একশ্রেনীর পশু জাতের লোক বিশৃঙ্খলপূর্ণ কাজে জড়িয়ে পড়ে জনগণের জানমাল নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। পুলিশ বিষয়টি অধিক গুরুত্বসহকারে নজরে রাখবে।

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন