সেন্টমার্টিন দ্বীপ যেভাবে বাংলাদেশের অংশ হলো

আকবর হোসেন:

বাংলাদেশের পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গার মাঝে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ অন্যতম।

কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে নয় কিলোমিটার দক্ষিণে নাফ নদীর মোহনায় এ দ্বীপটি অবস্থিত।

সম্প্রতি মিয়ানমার সরকার তাদের একটি জনসংখ্যা বিষয়ক মানচিত্রে সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে সে দেশের অংশ দেখিয়েছে বলে বাংলাদেশ সরকার অভিযোগ তুলেছে।

এমন প্রেক্ষাপটে ঢাকায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বাংলাদেশের তরফ থেকে বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।

কিভাবে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ হলো?

সেন্ট মার্টিন দ্বীপটি নারকেল জিঞ্জিরা হিসেবে পরিচিত। প্রচুর নারকেল পাওয়া যায় বলে এ নামটি অনেক আগে থেকেই পরিচিত হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক শেখ বখতিয়ার উদ্দিন এবং অধ্যাপক মোস্তফা কামাল পাশা সেন্ট মার্টিন দ্বীপ নিয়ে গবেষণা করেছেন। মি: পাশা বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত।

অধ্যাপক বখতিয়ার বলেন, প্রায় ৫০০০ বছর আগে টেকনাফের মূল ভূমির অংশ ছিল জায়গাটি। কিন্তু ধীরে ধীরে এটি সমুদ্রের নিচে চলে যায়।

এরপর প্রায় ৪৫০ বছর আগে বর্তমান সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ পাড়া জেগে উঠে। এর ১০০ বছর উত্তর পাড়া এবং পরবর্তী ১০০ বছরের মধ্যে বাকি অংশ জেগে উঠে।

গবেষক মোস্তফা কামাল পাশা জানালেন, ২৫০ বছর আগে আরব বণিকদের নজরে আসে এ দ্বীপটি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথে বাণিজ্যের সময় আরব বণিকরা

এ দ্বীপটিতে আরব বণিকরা বিশ্রাম নিতো। তখন তারা এ দ্বীপের নামকরণ করেছিল ‘জাজিরা’। পরবর্তীতে যেটি নারিকেল জিঞ্জিরা নামে পরিচিত হয়।

অধ্যাপক বখতিয়ার উদ্দিন বলেন, প্রায় ৩৩ হাজার বছর আগে সে এলাকায় প্রাণের অস্তিত্ব ছিল। বিভিন্ন কার্বন ডেটিং-এ এর প্রমাণ মিলেছে বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক বখতিয়ার।

ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯০০ সালে ভূমি জরিপের সময় এ দ্বীপটিকে ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া হয়।

যদিও সে সময়টিতে বার্মা ব্রিটিশ শাসনের আওতায় ছিল। কিন্তু তারপরেও সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে বার্মার অন্তর্ভুক্ত না করে ব্রিটিশ-ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল বলে জানান অধ্যাপক মোস্তফা কামাল পাশা।

বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনে ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, খ্রিস্টান সাধু মার্টিনের নাম অনুসারে দ্বীপটির নামকরণ করা হয়।

তবে অধ্যাপক বখতিয়ার উদ্দিন বলেন, দ্বীপটিকে যখন ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তখন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মার্টিনের নাম অনুসারে দ্বীপটির নামকরণ করা হয়।

বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের ওয়েব সাইট থেকে জানা যায়, ১৮৯০ সালে কিছু মৎস্যজীবী এ দ্বীপে বসতি স্থাপন করে।

এদের মধ্যে কিছু বাঙালি এবং কিছু রাখাইন সম্প্রদায়ের লোক ছিল। ধীরে-ধীরে এটি বাঙালী অধ্যুষিত এলাকা হয়ে উঠে।

কালক্রমে এ দ্বীপটি হয়ে উঠে বাংলাদেশের পর্যটনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে একটি।

গবেষকরা বলছেন, বর্তমানে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে প্রায় দেড় লাখ নারকেল গাছ আছে।

 

সূত্র: বিবিসি

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন