Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

সেনা সদরের সতর্কবাণী : পার্বত্য চট্টগ্রাম যেন পূর্ব তিমুর না হয়

ততত
এম এ নোমান:

পার্বত্য চট্টগ্রামে যাতে পূর্ব তিমুর ও দক্ষিণ সুদানের মতো কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সেজন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন নীতিনির্ধারণী মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে সেনা সদর দফতর। সেনা সদর দফতর থেকে বলা হয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ও সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো অস্ত্রশস্ত্র জোগাড় করছে।

মিয়ানমার ও ভারতীয় কয়েকটি গ্রুপের কাছ থেকে পার্বত্যাঞ্চলে অস্ত্র আসছে। সম্প্রতি পূর্ব তিমুর ও দক্ষিণ সুদানের রাজনৈতিক পরিবর্তন লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, সেখানে এর সূচনা হয়েছিল প্রায় ৭৫-৮০ বছর আগে। পার্বত্য চট্টগ্রামে যাতে দক্ষিণ সুদান ও পূর্ব তিমুরের মতো কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে, তা এখন থেকেই সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে।

আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সপ্তম সভায় সেনা সদর দফতর থেকে এ আশঙ্কা ব্যক্ত করে বেশ কিছু প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সেনা সদর দফতরের এ বক্তব্যের বিষয়ে বৈঠকে উপস্থিত তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিভিন্ন দেশের হাইকমিশনার ও রাষ্ট্রদূতরা ঘন ঘন পার্বত্য চট্টগ্রাম সফর করছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিদেশি সাংবাদিক ও বিভিন্ন লোকের আনাগোনাও বেড়ে গেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে ঘিরে বিদেশিদের নিশ্চয় কোনো গোপন এজেন্ডা রয়েছে।

আর্কাইভ থেকে
বৈঠকে উপস্থাপিত এসব আশঙ্কা, প্রস্তাব ও বক্তব্যের সমন্বয়ে তৈরি করা কার্যবিবরণী ফেব্রুয়ারি মাসেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ও সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদর দফতরগুলোতে দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বৈঠকের আলোচ্য বিষয় ও সুপারিশমালা সম্পর্কে
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যাতে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সহাবস্থান নিশ্চিত থাকে সেজন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিরা কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন। সে অনুযায়ী সুপারিশ করা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি ও বাঙালি নির্বিশেষে সবার মধ্যে সহাবস্থান ও শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আমাদের সেনাবাহিনী তাদের মেধা, যোগ্যতা, দক্ষতা ও কঠোর শ্রম দিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। শান্তিচুক্তিবিরোধী কোনো গোষ্ঠী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা করছে।

উল্লেখ্য, পূর্ব তিমুর ও দক্ষিণ সুদান যথাক্রমে ইন্দোনেশিয়া ও সুদানের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দুটি দেশ থেকে পূর্ব তিমুর ও দক্ষিণ সুদানকে বিচ্ছিন্ন করে পৃথক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানিয়েছে, সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ৭ম সভা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের সার্বিক অবস্থা নিয়ে অনুষ্ঠিত এ সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, সচিব, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর প্রতিনিধি ও সেনা সদর দফতরের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তাদের সবার বক্তব্য, প্রস্তাব, সুপারিশ এবং সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত কার্যবিবরণী আকারে তৈরি করে এর আলোকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তা মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী, তথ্যমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র সচিব, প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার সেনা সদর দফতর, চিফ অব জেনারেল স্টাফ সেনা সদর দফতর, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিজিবি মহাপরিচালক, ডিজিএফআই মহাপরিচালক, এনএসআই মহাপরিচালক ও র‌্যাব মহাপরিচালককে দেয়া হয়।

সেনা সদরের আশঙ্কা ও প্রস্তাব :

বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ পার্বত্য চট্টগ্রামের বিষয়ে সেনা সদরের বক্তব্য প্রসঙ্গে কার্যবিবরণীর ২য় পৃষ্ঠার ১০নং প্যারায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে সভায় উপস্থিত সেনা সদরের প্রতিনিধি সভাকে অবহিত করেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি শান্ত রাখার জন্য আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নিয়মিত রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। পার্বত্য চট্টগ্রামের সীমান্ত অস্ত্র ও মাদকের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।’

একই কার্যবিবরণীর ১১নং প্যারায় সেনা সদরের প্রতিনিধির উদ্ধৃতি দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে, ‘সেনা সদরের প্রতিনিধি সভাকে আরও জানান, সম্প্রতি দক্ষিণ সুদান ও পূর্ব তিমুরের রাজনৈতিক পরিবর্তন লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এর সূচনা হয়েছিল প্রায় ৭৫ থেকে ৮০ বছর আগে। পার্বত্য চট্টগ্রামে যাতে এ ধরনের কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে, তা এখন থেকেই আমাদের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে চিন্তা করতে হবে। সেনা সদরের প্রতিনিধি আরও উল্লেখ করেন যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীদের কাছে আর্মস আসে মূলত মিয়ানমারের বিভিন্ন গ্রুপ থেকে। পাশাপাশি ভারতীয় কিছু গ্রুপও আর্থিক কষ্টে পড়লে পার্বত্য চট্টগ্রামের সন্ত্রাসীদের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে।
সেনা সদরের ওই প্রতিনিধি আরও জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি ইস্যু একটি বিরাট সমস্যা। এ সমস্যার সন্তোষজনক সমাধান হওয়া প্রয়োজন। এছাড়াও অনেকদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচন হচ্ছে না। জরুরি ভিত্তিতে এ নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন।

দাতা সংস্থাকে দায়ী করছে ডিজিএফআই :
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই’র প্রতিনিধির উদ্ধৃতি দিয়ে কার্যবিবরণীর ১২নং প্যারায় উল্লেখ করা হয়েছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, ইন্টারনেটের কারণে তথ্য আদান-প্রদান খুবই সহজ হয়েছে। কোনো কোনো বিষয়ে বিদেশি সাংবাদিকরা চট্টগ্রামে না গিয়েও তথ্য সংগ্রহ করছেন।

ইউএনডিপিসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে নিয়োগকৃত উপজাতীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা থেকে এটা স্পষ্ট যে, এতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধর্মান্তরিত খ্রিস্টান উপজাতীয়রা চাকরির মাধ্যমে পুনর্বাসিত হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সাধারণত উপজাতীয়রা গভীর জঙ্গলে বসবাস করে। তারা ছোটখাটো দোকান, নদী, খাল ও লেকে বোট চালিয়ে এবং জুম চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা যাতে তাদের দরিদ্রতার সুযোগ গ্রহণ করে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন উদ্দেশ্য সাধন করতে না পারে সেজন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়নসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজন। এতে পার্বত্য এলাকার অধিবাসীদের সঙ্গে দেশের অন্যান্য জেলার অধিবাসীদের সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হবে। সম্প্রতি ইউপিডিএফের কার্যক্রম শক্তিশালী হয়ে পড়েছে, এটা বড়ই উদ্বেগজনক।

তথ্যমন্ত্রীর উদ্বেগ :
তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের উদ্ধৃতি দিয়ে কার্যবিবরণীর ১০নং প্যারায় বলা হয়েছে, তথ্যমন্ত্রী সভাকে জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি কমিশন নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। বিভিন্ন দেশের হাইকমিশনার ও রাষ্ট্রদূতরা ঘন ঘন পার্বত্য চট্টগ্রাম সফর করছেন। বিদেশি সাংবাদিক ও বিভিন্ন লোকের আনাগোনাও বেড়ে গেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে ঘিরে বিদেশিদের নিশ্চয়ই কোনো গোপন অ্যাজেন্ডা রয়েছে। এখানে কিছু লোক উস্কানিও দিচ্ছে। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন।

কমিটি পুনর্গঠনের সুপারিশ :
বিস্তারিত আলোচনা শেষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে নেয়া সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে—পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশনের কাজ যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় সে বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩টি জেলায় স্থানীয় সরকারগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই। এজন্য আইনশৃঙ্খলাসহ নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থানীয় সরকারগুলোর নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামকে ঘিরে যাতে কোনো দেশি-বিদেশি চক্রান্ত সফল না হয় এবং অশান্ত পরিস্থিতির উদ্ভব না হয়, সে বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নবিষয়ক জাতীয় কমিটিতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত করে কমিটি পুনর্গঠন করা যেতে পারে।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য :
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতীয় ও বাঙালিদের মধ্যে সহাবস্থান নিশ্চিত করা এবং শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থেই শান্তিচুক্তি করা হয়েছিল। শুরু থেকেই চারদলীয় জোটসহ কয়েকটি মহল এ চুক্তির বিরোধিতা করে আসছে। তারপরও শান্তিচুক্তি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, সেনাবাহিনী বরাবরই পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বৈঠকে তারা তাদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে কিছু প্রস্তাব দিয়েছে।

সরকার বরাবরই পার্বত্য ভূমি বিরোধ সমস্যাসহ অন্যান্য সমস্যা নিরসন করতে আন্তরিকভাবে কাজ করে চলেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোসহ কিছু সংগঠন শান্তিচুক্তির বিরোধিতা করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে। আমরা তাদের সেই ফায়দা হাসিলের সুযোগ দেব না।

তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতীয় ও বাঙালি নির্বিশেষে সবার মধ্যে সহাবস্থান ও শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আমাদের সেনাবাহিনী তাদের মেধা, যোগ্যতা, দক্ষতা ও কঠোর শ্রম দিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

♦ সূত্র: ২০১১ সালের ১০ এপ্রিল দৈনিক আমার দেশে প্রকাশিত প্রতিবেদন

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পার্বত্য চট্টগ্রাম, পূর্ব তিমুর, সেনা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন