সেনাপ্রধানের সঙ্গে আকস্মিক বৈঠকে বাধ্য হয়েছেন পোপ

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

মিয়ানমারের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাংয়ের সঙ্গে দেখা করতে বাধ্য করা হয়েছে পোপ ফ্রান্সিসকে। ভ্যাটিকান মুখপত্র ক্রাক্স নিউজের এক প্রতিবেদনে এই দাবি করা হয়েছে। ভ্যাটিকান প্রতিবেদকের ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী,  মিয়ানমারের কার্ডিনাল চার্লস মং বো’র নির্দেশনা মেনেই তিনি শীর্ষ সামরিক নেত্বত্বের সঙ্গে গতকাল সোমবারের আকস্মিক সেই ১৫ মিনিটের অনির্ধারিত বৈঠকে মিলিত হন। মিয়ানমারের কার্ডিনাল নিজেও এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

পোপের সফরসূচি অনুযায়ী মিয়ানমারের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর ব্যক্তি সিনিয়র জেনারেল মিং-এর সঙ্গে পোপের নির্ধারিত বৈঠকটি শেষ দিন ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে শুরুর দিনেই ইয়াঙ্গুনে আর্চ বিশপের বাসভবনে পোপের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন মিয়ানমারের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা। জেনারেল মিং অনের অফিশিয়াল ফেসবুক পোস্ট এবং ভ্যাটিক্যান মুখপত্র ক্রাক্স-এর ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, বিশেষ অভিযান ব্যুরোর তিনজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাও ছিলেন সেই বৈঠকে। শীর্ষস্থানীয় এই সামরিক কর্মকর্তাদেরই রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নিধন এবং ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে দেশছাড়া করার মূল হোতা বলে মনে করা হয়।

উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীরাও পোপের সফরকালে তাকে হুমকি দিয়েছে। পৌঁছানোর আগেই কার্ডিনাল চার্লস মং বো তাকে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করতে মানা করেন। ভ্যাটিক্যান প্রতিবেদক তার প্রতিবেদনে বলেছেন, ১১ ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রা শেষে পোপের বিশ্রাম করার কথা ছিল বলেই ওইদিন কোনও আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি রাখা হয়নি। তবে কার্ডিনাল চার্লস মং বো পোপকে শীর্ষ সেনাকর্মকর্তা মিন অং হ্লাংয়ের সঙ্গে দেখা করার নির্দেশনা দেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মিয়ানমারের কার্ডিয়াল পোপকে বৈঠকের তাগিদ দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। ভ্যাটিক্যান প্রতিবেদককে তিনি জানান, পোপ এই নির্দেশনা না মানলে মিয়ানমারের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন নেমে আসতে পারত।

সিনিয়র জেনারেলের দাফতরিক ফেসবুক পাতায় দেওয়া এক পোস্ট অনুযায়ী, পোপকে স্বাগত জানিয়ে দাবি করা হয়েছে, মিয়ানমারে কোনও সাম্প্রদায়িক বিভেদ নেই। সেখানকার কর্তৃপক্ষ সব সম্প্রদায়ের মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। সেনাবাহিনীও কারও প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করে না। ভ্যাটিকানের মুখপাত্র এ নিয়ে সাংবাদিকদের বিস্তারিত কিছু জানাননি সোমবার। অনুষ্ঠিত বৈঠককে অনানুষ্ঠানিক আখ্যা দিয়ে তিনি সোমবারের প্রতিবেদনে বলেছেন, চলমান গণতান্ত্রিক সংস্কার প্রক্রিয়ায় মিয়ানমারে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব-কর্তব্যের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে ওই বৈঠকে।

পোপ ফ্রান্সিস প্রথমবারের মতো সোমবার দুপুরে মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে পৌঁছান রোহিঙ্গা প্রশ্ন সঙ্গে নিয়ে। ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার সদস্য তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও সংগীতের মাধ্যমে পোপকে শুভেচ্ছা জানায়। এদিকে উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীরা তাকে রোহিঙ্গা প্রশ্নে কোনও কথা না বলার হুমকি দিয়েছে। এক কঠিন কূটনৈতিক পরীক্ষার জমিনে দাঁড়িয়ে আছেন ইতিহাসের আলোচিত এই ক্যাথলিক ধর্মগুরু। তিনদিনের সফর শেষে ৩০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের উদ্দেশে নেপিদো ছাড়বেন তিনি।

 

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন