সিন্দুকছড়িতে হামলা-মামলা, বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘর ছাড়া

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার সিন্দুকছড়িতে আওয়ামী লীগ অফিস ভাংচুরের অভিযোগে হামলা-মামলার কারণে বিএনপিমনা পরিবারগুলো ধরপাকড় ও ভয়-ভীতিতে আতঙ্কে দিনযাপন করছেন বলে ভুক্তভোগীদের দাবি।

এলাকায় আওয়ামী লীগের লোকজন এবং মহিলা ছাড়া বাঙ্গালী পরিবার গুলো প্রায় পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে বলে বিএনপির নেতারা দাবি করছেন।

বুধবার (১৭ এপ্রিল)  রাত ১০টায় একটি বিচারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ অফিস ভাংচুরের অভিযোগে স্থানীয় ছাত্রদলসহ বিএনপির  ২০জন নেতাকর্মীকে এজাহারে এবং ১০-১৫ জনকে অজ্ঞাত করে গুইমারা থানায় একটি মামলা করা হয়।

সিন্দুকছড়ি আওয়ামী লীগের নেতা মোহাব্বত আলী বাদী হয়ে এ মামলাটি করেন। মামলায় এযাবত ৬জনকে আটক করে পুলিশ আদালতে প্রেরণ করলে ৩জনকে আদালত জামিন দেন। সরকারি ছুটিতে বন্ধের কারণে বাকি তিনজন জেল হাজতে রয়েছে বলে বিএনপি সূত্রে জানা যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানাযায় নববর্ষকে বরণ করতে স্থানীয় রুপান্তর মানব কল্যান ক্লাবের পক্ষে শুভ নববর্ষ  লিখলে স্থানীয় ছাত্রলীগ সদস্য জয়নাল  মোটর সাইকেল দিয়ে দুইবার লেখাটি নষ্ট করে দেয়। এ নিয়ে  প্রতিবাদ করলে কলেজ ছাত্র তাহাজুলকে মারধর করে ছাত্রলীগের সদস্য জয়নাল ।

পরে ক্লাবের সদস্যরা বিষয়টি যুবলীগের সহ-সভাপতি খলিল ও রফিক এবং তার বড় ভাই শেখ রাসেল সংসদের সভাপতি ইউসুফকে জানালে তারা বিষয়টি সামাজিক ভাবে বসে মিমাংসা করার জন্য ১৭ এপ্রিল রাতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক রেজাউলের নেতৃত্বে তার দোকানে বৈঠক বসে।

ওই বৈঠককে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে মামলার সৃষ্টি করা হয়। এ বিষয় নিয়ে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সিন্দুকছড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করায় নেতা কর্মী ও সাধারণ জনগণ আরও  আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে ও এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানাযায়।

এ বিষয়ে হাফছড়ি ইউপি সদস্য ও গুইমারা উপজেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক আরমান হোসেন বলেন, একটি সামাজিক সংগঠনের বিচারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ পরিকল্পিত ভাবে  আমাদের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজিয়েছে। এটি একটি হয়রানি মূলক মিথ্যা মামলা। মামলার কারণে সিন্দুকছড়িতে বর্তমানে বিএনপিমনা পুরুষরা এলাকা ছাড়া এবং পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে এলাকা। আমি এর তিব্র নিন্দা জানাই।

গুইমারা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক নবী হোসেন বলেন, এ ধরনের মিথ্যা বনোয়াট মামলা দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার জন্য প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। সিন্দুকছড়িতে সাধারণ মানুষের ঘরবাড়িতে পর্যন্ত রাতে হামলা করছে, দোকান পাটে হামলা করছে। লোকজন এলাকাছাড়া আমরা প্রশাসনের কাছে নিরপেক্ষ সগযোগিতা কামনা করছি এবং ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি এহেন মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাচ্ছি।

গুইমারা উপজেলা পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পূর্ণ্ কান্তি ত্রিপুরা বলেন, সামাজিক বিচারকে কেন্দ্র করে সিন্দুকছড়িতে এলাকার লোকজনদের নামে গড়হারে মামলা হয়েছে। এ কারণে এলাকায় বিএনপি পরিবারগুলোতে পুরুষ নেই।

মামলায় ভূক্তভোগি সিন্দুকছড়ির আব্দুল আজিজ, মো. গোলাম হোসেন মো. গোলাপ রহমান ও যুবদলের নেতা আলতামুরের পরিবার দাবি করে বলেন,  তাদের লোকজন নির্দোষ। তাদেরকে কেন এভাবে দোষারোপ করে হয়রানি করা হচ্ছে সেটা তারা জানেননা। তাদের ছেলে মেয়ে গুলো কয়েকদিন না খেয়ে আছে। অপর দিকে সাপ্তাহিক কিস্তির যন্ত্রনায় ভূগছেন তারা।

গুইমারা থানা অফিসার ইনচার্জ গেয়াস উদ্দিন বলেন, সিন্দুকছড়ি আওয়ামী লীগ অফিস ভাংচুরের ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা মোহাব্বত আলী বাদি হয়ে থানায় মামলা করেছেন।

পুলিশ ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায়  ৬ জনকে আটক করেছে এবং আটককৃতসহ এজাহারে উল্লেখিত ২০জন এবং অজ্ঞাত ২০-১৫জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৪৩/৪৪৮/৩২৩/৩০৭/৩৮৯/৪২৭/৫০৬ ধারায় মামলা দায়ের করেছে।  গুইমারা থানার মামলা নং-৪। এলাকার শান্তি শৃংখলা রক্ষার্থে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে মর্মেও তিনি জানান।

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন