সারা দিনের গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে লবণ চাষিদের দূর্ভোগ

মহেশখালী প্রতিনিধি:

কক্সবাজারে উপকূলীয় এলাকায় সারা দিনের গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে থমকে গেছে লবণ উৎপাদন কাজ। ফলে চরম দূর্ভোগে লবণ চাষিরা। দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদনকারী জেলা কক্সবাজারে লবণ উৎপাদন মৌসুমে এ বৃষ্টিতে কয়েক কোটি টাকার লবণ ভেসে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছে চাষিরা।

মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিপাত শুরু হয়। দিন ভর টানা বৃষ্টিপাতের কারণে লবণ উৎপাদনকারী এলাকা মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, চকরিয়া, টেকনাফ ও সদর উপজেলায় বৃষ্টির পানিতে মাঠেই লবণ ভেসে যায়। বিশেষ করে পলিথিন পদ্ধতিতে উৎপাদিত সাদা লবণ পানির সাথে মিশে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান কৃষকরা।

চলতি বছর লবণ মৌসুম শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত প্রতি কানিতে ৮০ থেকে ১শ মন লবণ উৎপাদন করতে পেরেছে। মাঠে আবার লবণ উৎপাদনে কমপক্ষে এক সপ্তাহ সময় লাগবে। তবে বৃষ্টির ফলে আপাতত উৎপাদন বন্ধ রয়েছে বলে জানান চাষিরা।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, এক দিনের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে প্রায় ২ লাখ টনের বেশি লবণ। ফলে অর্ধশত কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি এক সপ্তাহ লবণ উৎপাদন বন্ধ থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন লবণ চাষি ও ব্যবসায়ীরা। লবণ চাষি কমিটির নেতা ও বিসিক কর্মকর্তারা বলছেন, সাময়িক এ ক্ষয়ক্ষতি লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় প্রভাব ফেলবেনা।

সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার জেলার হাজার হাজার লবণ শ্রমিক, চাষি ও ব্যবসায়ীরা আবহাওয়া অনূকূল থাকার স্বপ্ন নিয়ে আশাতীত ফলনের আশায় লবণ চাষাবাদ শুরু করে। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে বৃষ্টিতে লবণ চাষাবাদ প্রায় ৪/৫দিন পিছিয়ে যায়। ফের মঙ্গলবার সকাল হতে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ও দূর্যোগ আবহাওয়া বিরাজমান থাকায় লবণ চাষাবাদ ব্যাহত হয়। ঝড়ো হাওয়ার বৃষ্টিপাতে মানুষ ক্ষণিক স্বস্তি পেলেও জেলার লবণ চাষে ক্ষয়ক্ষতির বিরাট ধাক্কা বলে চাষাবাদে নিয়োজিত চাষিরা মত প্রকাশ করেন।

কক্সবাজার বিসিক লবণ শিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-মহাব্যবস্থাপক বলেন, এ বছর দেশে লবণের চাহিদা রয়েছে প্রায় ১৬ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১৮ লাখ মেট্রিক টন।
আর ৪ মার্চ পর্যন্ত মৌসুমের ৩ মাসে জেলার প্রায় ৬০ হাজার একর জমিতে ৮লাখ ৫ হাজার ২০০ টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে। কিন্তু বৃষ্টিতে এসব মাঠে লবণ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। আর বৃষ্টি বন্ধ হলে মাঠকে উৎপাদন উপযোগী করতে আরো ৭ দিন সময় লাগবে। এতে উৎপাদনে লবণ কম হবে। ফলে জেলার প্রায় ৬০ হাজার প্রান্তিক লবণ চাষী ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তিনি আরও জানান, সামনে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ সাময়িক ক্ষতিতে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রায় কোন ধরণের ব্যাঘাত ঘটবে না।

মহেশখালীর লবণ চাষি গিয়াস উদ্দিন জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে দু’দফা বৃষ্টিতে আমাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

কুতুবদিয়ার লবণ চাষি সমিতির শাহ আলম জানিয়েছেন, থেমে থেমে বৃষ্টির পর আবারও বৃষ্টি হলে মাঠ পর্যায়ে লবণ উৎপাদন বিলম্বিত হবে। এমনিতে প্রতি মণ লবণের দাম ২০০ থেকে ১৮০ টাকা তার উপর বৃষ্টিতে লবণ ভেসে যাওয়ার ফলে আমাদের বিশাল ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।

মহেশখালী লবণ চাষি সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি আনোয়ার পাশা চৌধুরী জানান, বর্তমানে দেশব্যাপী পরিশোধিত লবণের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তবে প্রান্তিক চাষিরা লবণের ন্যায্য মুল্যে না পাওয়ায় আগামী মৌসুমে এই লবণ চাষ করা থেকে বিরত থাকবে চাষিরা। তিনি লবণ আমদানী বন্ধ রাখতে সরকারের প্রতি আকুল আবেদন জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন