Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

সাবেক সেনাপ্রধানের`মঈন ইউ আহমেদ’ নামটি আগে ছিলো না এটি সে পরে গ্রহণ করেছে

আ ল ম ফজলুর রহমান

(নয়)

দুমদুমিয়া থুমে অপারেশনাল ক্যাম্প স্হাপনের আদেশ ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার থেকে মেসেজের মাধ্যমে পাবার পরে আমি ব্যাটালিয়ান অফিসার এবং জেসিওদের সাথে কনফারেন্স করলাম করণীয় ঠিক করার জন্য। পরে ব্রিগেড কমান্ডার কর্ণেল ইমতিয়াজের সঙ্গে ( তখনও তিনি অফিশিয়েটিং ব্রিগেড কমান্ডার ) অয়ারলেস সেটে দুমদুমিয়া থুমে অপারেশনাল ক্যাম্প বিষয়ে কথা বললাম।

একজন ফুল কর্ণেল প্রথমে অফিশিয়েটিং ব্রিগেড কমান্ডার হিসেবে পোস্টিং হয়। ছয় মাস অফিশিয়েটিং ব্রিগেড কমান্ডার থাকার পরে তাঁকে তার জেনারেল আফিসার কমান্ডিং( জিওসি ) এর নিকট থেকে এই মর্মে একটি এন্যুয়াল কনফিডেন্সিয়াল রিপোর্ট ( এসিআর ) অর্জন করতে হয় যে তিনি ব্রিগেড কমান্ড করতে সক্ষম। তার পরেই তিনি ব্রিগেডিয়ার পথে পদোন্নতি পান। তো কার্ণেল ইমতিয়াজ ঐসময় অফিশিয়েটিং কমান্ডে ছিলেন।

কর্ণেল ইমতিয়াজকে যেমন তাঁর জিওসি’র নিকট থেকে এসিআর নিতে হবে, তেমনি আমাকেও আমার ব্রিগেড কমান্ডারের কাছ একই প্রকার ব্যাটালিয়ান কমান্ড কনফার্ম করতে এসিআর নিতে হবে। তাই দুমদুমিয়া থুমে অপারেশনাল ক্যাম্প স্হাপনের বিষয়টি শুধু আমার জন্যই নয় আমার ব্রিগেড কমান্ডার হিসেবে অফিশিয়েটিং ব্রিগেড কমান্ডে থাকা কর্ণেল ইমতিয়াজের জন্যও এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ বা টক্কর ছিলো।

kkk

কর্ণেল ইমতিয়াজ খুব উচ্চ মানসিকতার একজন রুচিশীল ভদ্রলোক ছিলেন ( বর্তমানে মৃত )। তিনি আমাকে খুব স্নেহ করতেন। তিনি তাঁর ব্রিগেডের তরফ থেকে আমাকে যতটুকু সাহায্য ও সহযোগীতা করা সম্ভব তা তিনি আমার ব্যটালিয়ানকে করবেন বলে তাঁর সাথে অয়ারলেস সেটে কথোপকথনের সময় আমাকে নিশ্চিত করলেন। পরে আমি ব্রিগেড মেজর( বিএম ) মেজর মঈনের সাথে দুমদুমিয়া থুমে যাবার রুট এবং মোড অব ট্রান্সপোর্টেশন কি হবে সে বিষয়ে সেটে ( অয়ারলেস সেট ) তার সঙ্গে কথা বললাম যাতে সে যেন এই সব ইনফরমেশন ব্রিগেডের অপারেশন ম্যাপে মার্ক করতে পারে ।

আল্লাহ না করুন দুমদুমিয়া থুমে যাত্রার পথে যদি আমাদের উপরে শান্তি বাহিনীর আক্রমণ হয় তবে গ্রিড রেফারেন্স অনুযায়ী ব্রিগেডের তরফ থেকে অতি সত্ত্বর যেন আমাদের জন্য সাহায্য প্রেরণ করা সম্ভব হয়। এই মেজর মঈনই হলেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ। আমার যতটুকু মনে পড়ে মেজর মঈনের নাম ঐসময় মঈন ইউ আহমেদ ছিলো না। মঈন ইউ আহমেদ নামটা সে পরে গ্রহণ  করেছে । আমাদের ক্যাম্প স্হাপনের সব সম্ভাব্য ইনফরমেশন আমি বিএম মেজর মঈনকে দিলাম অর্থাৎ দুমদুমিয়া থুমে অপারেশনাল ক্যাম্প স্হাপনকারী পেট্রোল কোন পথে দুমদুমিয়া থুমে যাবে এবং কোথায় কোথায় সম্ভাব্য রাত্রি যাপনের স্হান হতে পারে? ঐ পথে যেতে কত সময় লাগবে এবং কখন সম্ভবতঃ দুমদুমিয়া থুমে অপারেশনাল পেট্রোল পৌছতে পারে এইসব ।

আমি মেজর মঈনকে অনুরোধ করলাম চিটাগাং ডিভিশন হেডকোয়ার্টারে জিএসও ওয়ান সিআই এর সাথে কথা বলে রাখতে যাতে দুমদুমিয়া থুমে অপারেশনাল ক্যাম্প স্হাপনের সাথে সাথে যেন হেলিকপ্টার সাপোর্টের আগাম আ্যারেঞ্জমেন্ট করে রাখে। আমার ধারণা ছিলো যে, রেশন পোর্টাররা বহন করে দুমদুমিয়া থুমে যাবে তা ওখানে পৌছানোর পরে বড় জোর চার থেকে পাঁচ দিন চলতে পারে। এর মধ্যেই হেলিকপ্টার প্যাড (হেলিপ্যাড ) স্হাপনসহ ক্যাম্প তৈরির প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করতে হবে। এর সাথে সাথেই ক্যাম্পে রেশন এবং ফ্রেশ পাঠাতে হেলিসাপোর্টের তড়িৎ ব্যবস্থা করতে না পারলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হবে। কারণ হাটা পথে রেশন পাঠিয়ে দুমদুমিয়া থুমে অপারেশনাল ক্যাম্প মেইনটেইন করা অসম্ভব।

আমি ব্যাটালিয়ান এডজ্যুটেন্টকে লোক বাছাই করে অপারেশনাল পেট্রোল রেডি করার আদেশ দিলাম। সাথে পোর্টার যোগাড়ের ব্যবস্থাসহ পেট্রোলের জন্য মালছামান যা প্রয়োজন তার ব্যবস্হা দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করারও নির্দেশ দিলাম। কখন পেট্রোল দুমদুমিয়া থুমে যাত্রা করবে তারও একটা সম্ভাব্য সময় বেধেঁ দিলাম। প্রস্তুতি দ্রুততার সাথে চলছে।

ইতিমধ্যে আমি ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলাম এই ভেবে যে, দুমদুমিয়া থুমে যাত্রার এই দুর্গম পথে একজন অভিজ্ঞ অফিসার প্রয়োজন যিনি অপারেশনাল পেট্রোলকে নিরাপদে এবং সময়মতো দুমদুমিয়া থুমে শুধু পৌছাবে না ক্যাম্প স্হাপনের পরে উদ্ভুত চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতেও সক্ষম হবে। এই নিয়ে আমার অফিসে বসে যখন ভাবছিলাম আমার অফিস রানার আমাকে স্যালুট দিয়ে জানালো যে, টুআইসি সাহেব মানে আমার কোর্সমেট মেজর কাদের আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন। আমি টুআইসি সাহেবকে পাঠাতে রানারকে বললাম।

মেজর কাদেরে আমার অফিসে এসে বললেন দোস্ত তোমার কি দুমদুমিয়া থুম সম্বন্ধে কোনো ধারণা আছে? আমি জবাবে বললাম, ধারণা এতোটুকুই যে আমি এখান থেকে দুমদুমিয়া থুম দেখত পাচ্ছি এবং অপারেশনাল ম্যাপে ব্রিফিং এর সময় এডজ্যুটেন্ট আমাকে যতটুকু ব্রিফ করেছে ততোটুকুই । আমরা চা পান করছি এমন সময় মেজর কাদের আমাকে বললেন, দোস্ত তোমার কোনো চিন্তা নাই। আমি ঠিক করেছি আমি দুমদুমিয়া থুমে অপারেশনাল ক্যাম্প স্হাপনের সব দায়িত্ব পালন করবো এবং পেট্রোল লিড করে আমি নিজে দুমদুমিয়া থুম যাব। ঘাম দিয়ে যেন জ্বর ছেড়ে গেল।

আর্মিতে আতিশয্য প্রকাশের একটা লিমিট আছে তাই মেজর কাদেরকে ধন্যবাদ দিয়ে কথা শেষ করলাম। এবং মেজর কাদেরকে নির্দেশ দিলাম অপারেশনাল পেট্রলের যাত্রার প্রস্তুতি যেন আমার দেওয়া সময়ের মধ্যেই শেষ হয় তা নিশ্চিত করতে । কারণ এই ধরনের প্রস্তুতিতে একবার কোথাও দেরী হলে তার অভিঘাত সব খানে দেরীর সৃষ্টি করে যা কাম্য নয়। পোর্টারসহ অপারেশনাল পেট্রোল যথাসময়ে দুমদুমিয়া থুমে যাত্রার জন্য প্রস্তুত এমন সংবাদ এডজ্যুটেন্ট আমাকে জানালে আমি পোট্রলের সামনে দাঁড়ালাম।

চলবে..

♦ মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান: প্রাক্তন মহাপরিচালক বিডিআর


এই ধারাবাহিকের আগের লেখাগুলো পড়ুন

  1. ♦ পার্বত্য চট্টগ্রামে আমার অভিজ্ঞতা
  2. ♦ জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় বসেই মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম অঞ্চলে পোস্টিং করেন
  3. ♦ বঙ্গবন্ধু আর্মি অফিসার মেস থেকে মদের বার তুলে দেন
  4.  ফারুয়া ব্যাটালিয়ান সদরে প্রথম দিন 
  5.  পাহাড় পথে হাঁটার প্রথম অভিজ্ঞতা হলো
  6.  সব হেডম্যানের সাথে শান্তিবাহিনীর যোগাযোগ আছে
  7.  পাহাড়ীরা সর্বভূক এমন কিছু নাই যে খায় না
  8. ♦ পার্বত্য চট্টগ্রামের চিনা জোঁকের আক্রমণ একটা মহাসমস্যা

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন