এসআই আবু মুসা বাইশারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে ইনচার্জ হিসাবে পুনরায় দায়িত্বে

বাইশারী প্রতিনিধি:

বান্দরবানের বহুল আলোচিত রাবার শিল্প নগরী হিসাবে খ্যাত নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার একটি বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন বাইশারী। ভৌগোলিক দিক দিয়ে তিন পাশেই রয়েছে কক্সবাজার জেলা। বাইশারীবাসী শান্তপ্রিয় হলেও পার্শ্ববর্তী বহিরাগত লোকজন এসে প্রায় সময়ই অপরাধ এবং সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে বার বার হানা দেয় বাইশারীতে।

বাইশারীর পাশে রয়েছে ঈদগড় ইউনিয়নের গহীন বন ও পাহাড়, ঈদগড় রেঞ্জের সংরক্ষিত বনাঞ্চল। সেখানে রয়েছে দীর্ঘকাল থেকে দেশীয় তৈরী অস্ত্রের কারখানা। বহুবার র‌্যাব-পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে অস্ত্র তৈরীর সরঞ্জামসহ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র গোলা বারুদ ও অস্ত্র তৈরী কারিগরদের গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠায়।

উক্ত এলাকা থেকে দেশীয় তৈরী অস্ত্র সস্তা দামে ক্রয় করে  সন্ত্রাসীরা বাইশারীতে ঢুকে পড়ে । প্রতিনিয়ত রাবার বাগানের ম্যানেজারদের নিকট চাঁদার দাবিতে হুমকি, অপহরণ, মুক্তিপন বানিজ্য, চুরি, ডাকাতিতে অস্বস্তিতে এলাকার কর্মজীবিসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।

তবে বিগত এক বছর যাবত আইন শৃঙ্ক্ষলা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে বলে জানান স্থানীয় সুশীল সমাজের লোকজন। তুলনামূলকভাবে এসআই মুসা দায়িত্ব পালনকালে ভাল রয়েছেন বলে ও জানালেন অনেক প্রবীণ ব্যক্তিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২০১৬ সালের আগস্ট মাসের ১ম সপ্তাহে বাইশারী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে যোগদান করেন বর্তমান ইনচার্জ উপপরিদর্শক আবু মুসা।

এসআই মো. আবু মুসা যোগদানের তিন মাস আগে বাইশারী বাজারে শক্তিশালী বোমা বিষ্ফোরণ ঘটায় সন্ত্রাসীরা। এসময় এক পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হয়। এছাড়া পরপর ভান্তে হত্যা, আওয়ামী লীগ নেতা মংশৈলুং মার্মা হত্যা, অপহরণ, মুক্তিপন বানিজ্য সহ নানা অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল। একটার পর একটা ঘটনা লেগেই ছিল। কিন্তু বিগত ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে এসআই মুসা যোগদানের পর থেকে আস্তে আস্তে কমে যায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম। বন্ধ হয়ে যায় খুন-খারাবি, অপহরণ, চাঁদাবাজি ও মুক্তিপণ বানিজ্য।

খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, বিগত এক বছরে খুন, ডাকাতি, অপহরণের মত বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি বলে স্থানীয়রা অভিমত ব্যক্ত করেন। তবে কিছু কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও বড় ধরনের ঘটনা থেকে রেহাই পেয়েছে বাইশারীবাসী। এছাড়া বিগত এক বছরে দু’একটি মামলা ছাড়া কোন ধরনের মামলা ও রেকর্ড হয়নি বলে স্থানীয়রা জানান।

বর্তমানে আবারো এসআই আবু মুসা এক বছরের জন্য ইনচার্জ হিসাবে দায়িত্ব পাওয়ার পর সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসছে।

পার্বত্যনিউজ প্রতিবেদকের সাথে কথোপকথনের এক পর্যায়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বর্তমান ইনচার্জ মো. আবু মুসা বলেন, এই পর্যন্ত এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে তার। পুলিশ সদস্যদের রাতের বেলা ঘুম হারাম করতে হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ টহলের পাশাপাশি ছয়টি স্থানে রাতের বেলায় পুলিশ ডিউটি বসানো হয়েছে। যেমন- চাকপাড়া, করলিয়ামুরা, ধৈয়াবাপের পাড়া, বটতলী বাজার, ব্রীকফিল্ড ও বাইশারী বাজার এলাকা। এছাড়া তিনি পুলিশের পাশাপাশি জনসাধারণকে রাত জেগে পাহারা বসিয়ে সম্ভাব্য স্থানে অভিযান ও পরিচালনা করেছেন।

ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম বলেন, এসআই আবু মুসার বিচক্ষণতায় ও কলা কৌশলে অপরাধ প্রবণতা অনেকটা কমে গেছে। পুনরায় ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ায় বাইশারীবাসীর পক্ষ থেকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানান।

ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি ও বাইশারী বাজার সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বাহাদুর বলেন, পুনরায় ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার কথা তিনি শুনেছেন। বিগত এক বছরে তার কার্যক্রম সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আপোষহীন মনোভাব থাকায় এলাকার লোকজন শান্তিতে বসবাস করেছে, এবং এলাকায় শান্তির সুবাতাস বইছে। আবারো নতুনভাবে তিনি দায়িত্ব পাওয়ায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন এবং ধন্যবাদ জানান।

এ বিষয়ে ওসি নাইক্ষ্যংছড়ি এসএসএম তৌহিদ কবির বলেন, তার কর্মদক্ষতা কারণে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আবারো স্বপদে বহাল রেখেছেন।

এ বিষয়ে এএসপি সার্কেল (লামা) আব্দুস সালাম জানান, বিগত এক বছরের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করায় আবারো ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। আশা করি এবারো তিনি ভাল করবেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন