সাধন কার্বারীর হাতেই খুন হয়েছে পানছড়ির বালাতি ত্রিপুরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, পানছড়ি:

পানছড়ি উপজেলার ৫নং উল্টাছড়ি ইউপির পাইয়ং কার্বারী পাড়ার বালাতি ত্রিপুরা হত্যার ছয় দিনের মাথায় খুনের মূল নায়ককে খুজে বের করেছে পানছড়ি থানার চৌকস অফিসার্স ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান। তিনি পানছড়ি থানায় যোগদানের ঘন্টাখানেকের মাঝেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল ১২ সেপ্টেম্বর।

ঘটনার দিন রাত ৮টার দিকে স্থানীয় ইউপি সদস্য শিবু ত্রিপুরা মাধ্যমে খবর পেয়ে সংগীয় পুলিশ সদস্যদের নিয়ে পায়ে হেঁটে নির্জন এলাকায় নিজেই ছুটে যায় অফিসার্স ইনচার্জ মিজান। ঘটনাস্থল থেকে কিছু আলামত সংগ্রহ করেই শুরু করে রহস্য উৎঘাটনের কাজ।

রহস্য উৎঘাটনের সূত্রপাত:

ওসি মিজানুর রহমান জানায়, ঘটনাস্থলে সাধন কার্বারীর হতভম্বতা, ঘটনার পর দিন গোঁফ ও দাড়ি কেটে ফেলা, বাম হাতি ও প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে উল্টাপাল্টা বক্তব্য প্রদান থেকেই তাকে নজর বন্দী ও অবস্থান সম্পর্কে সচেতন থাকি।

কে এই সাধন জয় কার্বারী:

৫নং উল্টাছড়ি ইউপির পাইয়ং কার্বারী পাড়ার পাইয়ং কার্বারীর ছেলে সাধন জয় কার্বারী। তার বর্তমান বয়স প্রায় চল্লিশ।

কি কারণে খুন হলো বালাতি:

কার্বারী সাধন জয় ত্রিপুরার মেয়ে রনিকা ত্রিপুরা সাথে প্রেমের সম্পর্ক ঘটে উল্টাছড়ি এলাকার নুর হোসেনের। এ সম্পর্ক থেকে তারা দু’জন প্রায় ৪মাস আগে পালিয়ে বিয়ে করে। এ বিষয়ে সামাজিকভাবে এক শালিশে নুরু কার্বারীর মেয়ে রনিকাকে ফেরত দেয় এবং নুরুর নব্বই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এদিকে নুরুর ৫টি গরু বর্গা হিসেবে লালন-পালন করত বালাতি ত্রিপুরা। সাধনের মেয়ে নুরুর সাথে নিরুদ্দেশ হওয়ার পর কয়েকজন অজ্ঞাতনামা বালাতির কাছে থাকা গরুগুলি জোর পূর্বক নিয়ে যায়। নুরুর গরু বর্গা ও মেয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ও শালিশে জরিমানার নব্বই হাজার টাকার কিছু অংশ দাবী করে বালাতি। এসব কারণেই বালাতি খুন হয়েছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক এলাকাবাসীর দাবি।

সাধন কার্বারী আটক ও লোমহর্ষক বিবরণ:

পানছড়ি থানা অফিসার্স ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান জানায়, বালাতি হত্যার প্রথম খবর শিবু মেম্বারকে জানায় সাধন। শিবু মেম্বারের কাছে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সাধনকে হতভম্ভ, গোঁফ ও লম্বা চুলের অধিকারী দেখা গিয়েছিল। ঘটনার পরের দিন পানছড়ি কলেজ গেইট এলাকায় হিল উইমেন্স ফেডারেশন আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সাধনের বক্তব্য ছিল খুব সংক্ষিপ্ত। যার মাঝে ছিল সেটেলর বাঙ্গালী কর্তৃক বালাতি হত্যা হয়েছে,  খুনীদের অভিলম্বে ফাঁসি চাই। তখন তার গোঁফ ও লম্বা চুল ছিলনা। এসব সূত্র ধরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়।

এ ব্যাপারে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও সাধনের বক্তব্য, কথা বার্তায় ছিল ভিন্নতা ও অসংলগ্ন। পরবর্তীতে রবিবার বিজ্ঞ আদালতে হাজির করা হলে সে ১৬৪ ধারায় ঘটনার লোমহর্ষক বর্ননা দেয়।

কিভাবে বালাতিকে খুন করে:

ঘটনার দিন ১২ সেপ্টেম্বর বেলা আড়াইটার দিকে পাইয়ং পাড়া এলাকার  নির্জন স্থানের জুম ঘরে (হুঁকো) দাবা টানছিল বালাতি। এ সময় সাধনজয় কার্বারী গিয়ে কথাবার্তার এক ফাঁকে নিজেও  (হুঁকো) দাবা টানে। বিকাল ৩টার দিকে তার সাথে থাকা আরো দু’তিনজনসহ মিলে বালাতির চুলের মুঠি ধরে পাহাড় থেকে প্রায় একশত ফুট নিচের ধান ক্ষেত দিয়ে টেনে-হিচড়ে নিয়ে যায় ঝিরির (চরা) ধারে। সেখানে সাধন বা’হাতে দা’ দিয়ে বালাতিকে কোপ দিলে বালাতিও বা’হাত দিয়ে তা প্রতিহত করে। পরবর্তীতে তার পিঠে এলোপাতাড়ি দু’তিন কোপ দেয় এ সময় বালাতি নিস্তেজ হয়ে পড়লে গলায় কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। সন্ধ্যা ৭টার দিকে সে স্থানীয় ইউপি সদস্য শিবু ত্রিপুরার মাধ্যমে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে রাত দশ’টায় লাশ উদ্ধার করে।

এ ব্যাপারে বালাতির স্বামী চন্দ্র বিশু ত্রিপুরা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামী করে পানছড়ি থানায় একটি মামলা দায়ের করে। খব অল্প সময়ে পানছড়ি থানায় সদ্য যোগ দেয়া ওসি মো. মিজানুর রহমানের দক্ষতা ও চতুরতা দিয়ে বালাতির খুনীকে আটক করায় এলাকার সকল সম্প্রদায়ের মাঝে ফিরে এসেছে স্বস্তির নি:শ্বাস। আতংঙ্কে থাকা বিদ্যালয় পড়ুয়ারাও আতংঙ্ক কাটিয়ে ফিরছে নিজ নিজ বিদ্যালয়ে।

পানছড়ি থানার অফিসার্স ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে এ প্রতিবেদককে জানায়, মামলার তদন্তের স্বার্থে আপাতত কিছু বলা যাচ্ছে না। আরো কে বা কারা ঘটনার জড়িত আছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সাধনজয় কার্বারীকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন