সাজেকে রিজার্ভ ফরেস্টে বুদ্ধমূর্তি স্থাপনের বিষয়ে প্রশাসনের সাথে উপজাতীয়দের বৈঠক অনুষ্ঠিত: পরবর্তী বৈঠক ৩ আগস্ট

Untitled-1

সাজেক থানা প্রতিনিধি:
রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক থানার গংগারাম মুখের উজো বাজার এলাকায় বুদ্ধমূর্তি স্থাপনের বিষয়ে বুধবার প্রশাসনের সাথে উপজাতীয়দের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় গংগারাম মুখের উজো বাজারে।

এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাঙ্গামাটি জেলার এ,এস,পি হাবিবুর রহমান ও রাঙ্গামাটি জেলার এ,ডি,এম মোঃ সাইফুদ্দিন, খাগড়াছড়ি জেলার এ,এস,পি মোঃ সরোয়ার হোসেন, বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন চৌধুরী, রাঙ্গামাটি জেলার নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সাব্বির আহাম্মেদ, বাঘাইছড়ি থানার ইনচার্জ আজিজুল হক, সাজেক থানার ইনচার্জ নুরুল আনোয়ার, পার্বত্য চট্রগ্রাম উত্তর বন বিভাগের কর্মকর্তা এ,সি,এফ, মোঃ মাকসুদ আলম, বাঘাইহাট ফরেষ্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা বাবু সুদাংশু রঞ্জন দাশ এবং সাজেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা।

এছাড়া উপজাতীয়দের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাজেক ভুমিরক্ষা কমিটির সভাপতি জ্ঞানেন্দু চাকমা, সাজেক নারী সমাজের সভাপতি নিরুপা চাকমা, প্রদীপ কুমার চাকমা, জ্যোৎসারানী চাকমা, সত্যজয় মেম্বার, অনুরুদ্র মাষ্টার প্রমুখ।

বৈঠকে সরকারের তরফ থেকে উপজাতি নেতাদের নিয়ম মেনে সরকারের নিকট মন্দির স্থাপনের জন্য জমি বরাদ্দের জন্য আবেদন করার অনুরোধ করা হয়। এবং এ ক্ষেত্রে সরকার বিষয়টি সহৃদয়তার সাথে বিবেচনার আশ্বাস দেন। কিন্তু উপজাতি নেতারা সরকারী অনুরোধ না মেনে সরাসরি মন্দির স্থাপনের দাবীতে অনড় থাকে।

দুপুর ২.৩০ টা থেকে ৪.৩০টা পর্যন্ত চলা দুইঘন্টা ব্যাপী চলা বৈঠকে কোন সমঝোতা না হওয়ায় বৈঠক থেকে উপজাতীয়দের প্রতিনিধিরা বৈঠক থেকে চলে যায়। এরপর প্রশাসনের লোকজন ফিরে যেতে চাইলে উপজাতীরা রাস্তায় শুয়ে অবরুদ্ধ করে রাখে এবং বুদ্ধমূর্তি নির্মাণ করার দাবীতে প্রতিকী অনশন ধর্মঘট পালন করে।

এসময় পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকলে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায় থেকে স্থানীয়ভাবে ১৪৪ ধারা জারী করা হয়। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে রাতে তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।

অবরুদ্ধ অবস্থায় সেখানে প্রশাসনের সাথে উপজাতীয় প্রতিনিধিদের আবার আলোচনা হয়। রাত ৮টায় আলোচনায় আগামী ৩ আগষ্ট পর্যন্ত কাজ স্থগিত রাখার ব্যাপারে উভয় পক্ষের মাঝে সমঝোতা হয়।

উল্লেখ্য, গত ২২ জুলাই মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে বুদ্ধমূর্তি স্থাপনের জন্য কাজ শুরু করে স্থানীয় উপজাতীয়রা। খবর পেয়ে বাঘাইহাট ফরেষ্ট রেন্জ কর্মকর্তা বাবু সুদাংশু রন্জন দাশ গিয়ে নির্মাণ কাজ স্থগিত রাখার জন্য বলেন। এরপরও কাজ চালিয়ে যায় স্থানীয় উপজাতীয়রা নিষেধ অমান্য করে নির্মান কাজ আব্যাহত রাখলে পরবর্তীতে পার্বত্য চট্রগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ডি,এফ,ও,মোঃ কায়সার ও এ,সি,এফ,মোঃ মাকসুদ আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং নির্মাণ কাজ স্থগিত রাখতে বলেন।

নির্মাণ কাজে বাধাঁ দেওয়ার প্রতিবাদে সেখানে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম সাজেক শাখার উদ্যোগে একটি বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়, সমাবেশে বলা হয় শরীরের শেষ রক্ত দিয়ে হলেও বুদ্ধমূর্তি স্থাপন করব। পরে পরিস্থিতি খারাপ হলে সেখানে বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাজেক থানার ও.সি. ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন এবং পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন পরিস্থিতি শান্ত না হওয়ায় সেখানে বিপুল সংখ্যাক পুলিশ মোতায়ন করা হয়। বর্তমানে এলাকায় উত্তেজনাকর পরিবেশ বিরাজ করছে।

এদিকে রাঙামাটির সাজেকে বিজিবি ব্যাটালিয়ন স্থাপনের নামে পাহাড়িদের ভূমি বেদখলের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন বুধবার খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।

গণমাধ্যমে পাঠানো পিসিপি খাগড়াছড়ি জেলা শাখার পাঠানোে এক প্রেস বার্তায় বলা হয়, খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভরের ইউপিডিএফ কার্যালয়ের সামনে থেকে বুধবার বেলা ২:৩০টায় একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি জেলা পরিষদ, নারাঙহিয়া, উপজেলা, কলেজ গেট হয়ে চেঙ্গী স্কোয়ার গেলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে সেখানে এক সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সামবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সদস্য সচিব রিপন চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রতন স্মৃতি চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রিনা চাকমা। পিসিপি’র খাগড়াছড়ি জেলা শাখার এল্টন চাকমা সমাবেশ পরিচালনা করেন।

বক্তারা বলেন, সরকার বিজিবি ব্যাটালিয়ন স্থাপনের নামে সাজেকে পাহাড়িদের ভূমি বেদখল করে তাদেরকে সেখান থেকে উচ্ছেদে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করছে। গতকাল ২২ জুলাই পাহাড়িরা উজো বাজার এলাকায় একটি বুদ্ধমূর্তি স্থাপন করতে গেলে প্রশাসন তাদের বাধা দিয়েছে। এর আগে ২০০৮ ও ২০১০ সালে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে নিরীহ পাহাড়িদেরকে উচ্ছেদের চেষ্টা করা হয়েছিল।

বক্তারা দীঘিনালা বাবুছড়ার ঘটনা উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, বাবুছড়ায় বিজিবি কর্তৃক উচ্ছেদকৃত পাহাড়িদের জমি এখনো ফেরত দেয়া দেয়া হয়নি। উপরন্তু মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদেরকে নানা হয়রানি করা হচ্ছে। যার ফলে তারা এখনো ঘরবাড়ি ছাড়া হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

বক্তারা হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, আমরা ২০০৮ ও ২০১০ সালের সাজেক ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না। কিন্তু সরকার যদি জোরপূর্বকভাবে পাহাড়ি জনগণকে নিজ বসতভিটা ও জায়গা-জমি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা করে তাহলে উদ্ভুত সকল পরিস্থিতির জন্য সরকারই দায়ী থাকবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন