সাজেকে উপজাতীয় দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় কাচালং নদী থেকে আহত আরো ২ জন উদ্ধার

updf

সাজেক প্রতিনিধি:

রাঙামাটি বাঘাইছড়ি উপজেলা সাজেকের বাঘাইহাটে উপজাতীয় দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে ঘটনায় গতকাল জেএসএসের(সংস্কার) ২ সমর্থক আহতের খবরের পর একই ঘটনায় আহত হওয়া আরো ২ জনকে রবিবার কাচালং নদী থেকে স্থানীয় লোকজন মমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করেছে।

আহতরা হলেন বুদ্ধং চাকমা(২২), পিতা- জ্ঞানরতন চাকমা ও স্বাগতম চাকমা পুদাংগে (২১), পিতা: অরবিন্দু চাকমা। আহতদের মমূর্ষ অবস্থায় সকাল ৯টার দিকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ বিষয়ে স্বাগতম(পুদাংগে) চাকমার বড় ভাই নিবেশ শান্তি চাকমা জানায়, আমি গতকাল বাসায় ছিলাম না। তবে শুনেছি গতকাল রাতে গুচ্ছগ্রামে যে ঘটনা ঘটেছে, সেখানে সংস্কারের লোকজন আমার ভাইকে ও আরেকটি ছেলেকে মারধর করে মমূর্ষ অবস্থায় কাচালং নদীতে ভাসিয়ে দেয়। আমি বাড়ীতে খবর নিয়ে জানতে পারি যে, গতকাল সন্ধ্যার দিকে আমার ভাই ও যে ছেলেটি আহত হয়েছে তারা বাজার করতে গুচ্ছগ্রামের নিরুপমের দোকানে যায়। সেখানেই ওদেরকে মারধর করা হয়।

তারা রাতে বাসায় না ফেরায় আমার পরিবারের লোকজন তাকে রাতে খোঁজাখুজি করে একপর্যায়ে জানতে পারে যে, তাদেরকে মারধর করে মারা গেছে মনে করে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপর আমার পরিবারের লোকজন স্থানীয় লোকজনকে সাথে নিয়ে নদীতে খুঁজতে থাকে। এরপর রাত সাড়ে ৯-১০ টার দিকে ডিপু পাড়ার নিচে কাচালং নদী থেকে তাদেরকে জীবিত অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। গুরুতর অসুস্থ্ খবর পেয়ে আমি এখন বাসায় যাচ্ছি।

এ বিষয়ে জেএসএস সংস্কারের সাজেক ইউনিটের চিক্কমণি চাকমা বলেন, আমরা জানতে পেরেছি উল্লিখিত দুইজনই ইউপিডিএফ’র সক্রিয় কর্মী। তাদেরকে গতকাল গুচ্ছগ্রামে ইউপিডিএফ গুপ্তচর/সোর্স হিসেবে পাঠিয়েছিল তারা, আমাদের লোকজনের কাছে তাদের চলাফেরা ও গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে তাদের কাছে পরিচয় জানতে চায়। এমন অবস্থায় তারা দৌড় দেয় । তাদেরকে আমাদের লোকজন ধাওয়া করলে তারা নিজেকে আত্মরক্ষার জন্য নদীতে ঝাঁপ দেয়।

ইউপিডিএফ’র সাজেক ইউনিটের সমন্বয়ক জুয়েল চাকমা বলেন, বাঘাইহাটে গতকাল যে ঘটনাটি ঘটেছিল তার জন্য সংস্কারের লোকরা আমাদের সংগঠনের উপর মিথ্যা ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছিল। আজকেই তার প্রমাণ হল যে, গতকাল সন্ধ্যায় যে ঘটনা ঘটেছে সেখানে দুইজন নিরীহ লোককে ইউপিডিএফ’র কর্মী মনে করে মারধর করে। এমনভাবে মারধর করেছে যে, তাদের মৃত্যু হয়েছে মনে করে নদীতে তাদের মমূর্ষ অবস্থায় ভাসিয়ে দেয়।

জুয়েল চাকমা আরো জানান, আহতরা আমাদের দলের কেউ না, এমনকি আমরা তাদের চিনিও না।

উল্লেখ্য, রাঙামাটি বাঘাইছড়ি উপজেলা সাজেকের বাঘাইহাটের নোয়াপাড়া(গুচ্ছুগ্রাম) এলাকায় শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার সময় উপজাতীয় দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে ঘটনায় জেএসএসের(সংস্কার) ২ সমর্থক আহত ।

আহতরা হলেন রবিন চাকমা(২৭) ও সুমন্ত চাকমা(২২), আহত দুজনই জেএসএসের(সংস্কার) সমর্থক বলে নিশ্চিত করেছে সাজেক এলাকায় জেএসএসের(সংস্কার) দায়িত্বে থাকা শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা ।
গুরুতর আহত অবস্থায় জেএসএসের(সংস্কার) সদস্যরা আহতদের উদ্ধার করে বাঘাইহাট বাজারে ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসেন।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শনিবর সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার সময় হঠাৎ করে নোয়াপাড়া(গুচ্ছগ্রাম) এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইউপিডিএফ’র ১২-১৪জনের মত লোক এসে প্রতিপক্ষ জেএসএস সংস্কারপন্থী সমর্থকদের এলেপাথারি মারধর শুরু করে। এসময় দুই জনকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্বকভাবে জখম করে। তখন তাদের চিৎকারে এলাকার লোকজন এবং সংস্কারের সদস্যরা এগিয়ে আসলে তারা পালিয়ে যায়।

এ বিষয়ে সংস্কারের সাজেক ইউনিটের চিক্কমণি চাকমা বলেন, বাঘাইহাটের গুচ্ছগ্রামে আমাদের দলের সমর্থকদের উপর সন্ধ্যার দিকে ইউপিডিএফ’র ১২-১৫ জনের মত লোকজন আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসে ব্যাপক মারধর করে এসময় আমাদের দুইজন সমর্থক গুরুতর আহত হয় এবং গতকাল শুক্রবার রাত ১২টার দিকে একই ঘটনাস্থলে আমাদের দলের এক সদস্যের বাড়ীর চালের উপর ব্রাশ ফায়ার করে ইউপিডিএফ’র সশস্ত্র গ্রুপ।

তিনি আরও বলেন, ইউপিডিএফ’র ব্যাপক চাঁদাবাজী সাধারণ জনগনের উপর অন্যায় অত্যাচারের কারণে সাধারণ জনগণ তাদের বন্দিদশা থেকে মুক্তি চায় এবং সাধারণ জনগণ এখন তাদের কথামত কাজ না করায় প্রতিনিয়ত তারা সাজেকে বসবাসরত জনগণের উপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে ইউপিডিএফ’র সাজেক ইউনিটের সমন্বয়ক জুয়েল চাকমার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই ঘটনাটি আমি শুনেছি এবং জানতে পেরেছি যে, তাদের দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে তাদের সদস্যদের মাঝেই মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় এমন ঘটনা ঘটেছে। এতে আমাদের জড়িত থাকার প্রশ্নেই ওঠেনা আমাদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ মিথ্যা ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

– গতকালের আহতদের ছবি।

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন