সাজেকে আলোচিত বাঙালী নেতা আলকাস হত্যা মামলার আসামী শুদ্ধধোন চাকমা ৯ বছর পর আটক

পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট:

গত ৩ জুলাই রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলী ও রুপকারী শাখার ইউপিডিএফের পরিচালক এবং ইউপিডিএফ’র বিচার বিভাগীয় পরিচালক অটল চাকমা(৫৫) ও তার সহকারী শুদ্ধজয় চাকমা(৪২) কে আটক করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। সোমবার ভোর পাঁচটার দিকে মধ্য বঙ্গলতলীর সতিরঞ্জন চাকমার বাড়ী থেকে তাদের আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২টি এলজি, ১টি দেশীয় বন্দুক, ১০ রাউন্ড কার্তুজ, ১৫টি চাঁদার রশিদ বই, ১ সেট সামরিক পোশাক, ৪টি মোবাইল, ১টি নোট বুক, ১টি রেডি সহ গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করা হয়।

আটক শুদ্ধজয় চাকমাই হচ্ছে ৯ বছর পূর্বে ২০০৮ সালে সাজেকে আলোচিত বাঙালী নেতা আলকাস লিডার ও তার সহকারী হত্যা মামলার নথিভূক্ত ২ নং আসামী শুদ্ধধোন চাকমা। ধরা পড়ার পর পূর্বের মামলা থেকে আত্মরক্ষা করতে নিজের নাম কিছুটা পরিবর্তন করে ফেলে শুদ্ধধোন চাকমা। তবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে ঠিক সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। বাঘাইচড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমির হোসেন পার্বত্যনিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেকের গংগারাম মুখ এলাকায় ২০০৮ সালে ঘটে যাওয়া সম্প্রদায়িক দাঙ্গার জেরে অপহণের পর হত্যা করা হয় সেই সময়ে গংগারাম এলাকায় বসবাসরত বাঙ্গালীদের লিডার(মাতব্বর) আলকাছ(৪৮) ও তার সহকারী মজিবুর রহমানকে(৪৫)। আর ঐ হত্যা মামলার অন্যতম আসামি হচ্ছে গত ৩ জুলাই নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক হওয়া শুদ্ধধন(রাজা) চাকমা(৪২)।

স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, ২০০৮সালের পূর্ববর্তী সময়ে বাঙ্গালীরা গংগারাম এলাকায় বসবাস করে আসছিল আর গংগারাম মুখ এলাকার বাঙ্গালীদের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিল ঐ এলাকার বাঙ্গালীদের লিডার মো. আলকাছ। তখনকার সময়ে সেখানে বাঙ্গালীদের সংখ্যা বাড়তে থাকলে এলাকায় আধিপত্যে থাকা আঞ্চলিক সংগঠনের নজরে আসে এবং সেটি নিয়ে রাজনীতি শুরু করে সংগঠনটি। তারই সুত্র ধরে সাজেকে ২০০৮সালে সংগঠিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা।

দাঙ্গার পরেও সেখানে বাঙ্গালীরা বসবাস করতে থাকে এবং পরবর্তীতে লিডার আলকাছ উপজাতীদের সাথে ভালো সু-সম্পর্ক গড়ে তোলে, এবং সেখানে সকলেই শান্তিতে বসবাস করতে থাকে। একে অপরের প্রতি বিশ্বাস সৃষ্টি হয়, আর এমন বিশ্বাসের-সরলতার সুযোগ নিয়ে ২০০৮ সালের ৪মে তার নিজ বাড়ী থেকে আঞ্চলিক সংগঠনের পক্ষ থেকে উপজাতি এক লোককে দিয়ে কথা বলার নামে আলকাসকে ডেকে নিয়ে যায়।

বিশ্বাস করে তিনি যেতে থাকেন তাদের সাথে। লিডার আলকাছ তার সঙ্গে করে নিয়ে যায় তার সহকারী মজিবুর রহমানকে। নিয়ে যাওয়ার পর থেকে তাদের পরিবার তাদের সাথে আর কোনো যোগাযোগ করতে পারেনি।

যোগাযোগ না থাকায় পরিবারের পক্ষ থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়। নিয়ে যাওয়ার তিনদিন পর আইন-শৃক্সখলা বাহিনী সাজেকের নাকসাছড়ি(২নং কালভার্ট) এর গহীন জংগল থেকে তাদের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে।

স্থানীয় সুত্রে আরও জানা যায়, মুলত ২০০৮সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রতিশোধ এবং গংগারাম মুখ এলাকা থেকে বাঙ্গালীদের বিতাড়িত করতেই তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে।

জানা যায়, সেই সময়ে মৃত লিডার আলকাছ এর স্ত্রী তাজিনুর বেগম বাদী হয়ে বাঘাইছড়ি থানায় ১০মে ২০০৯ সালে হত্যা মামলা দায়ের করেন। বাঘাইছড়ি থানার ১০/০৫/২০০৯ মামলা নং ২ এ ৮জনের নাম উল্লেখ করে মামলা রয়েছে। উল্লেখিত মামলার আসামীরা হলেন , ১. শান্তি প্রিয় চাকমা(সুমন), পিতা-বিজয় কার্বারী, সাং- ডানে ভাইভাই ছড়া, বাঘাইহাট। ২.শুদ্ধধন চাকমা(রাজা), পিতা- চিত্তরঞ্জন চাকমা, সাং- চামিনী ছড়া, বাঘাইহাট/সংগলা-দিঘীনালা। ৩. সত্যং/মধ্যং চাকমা, পিতা-তরনী সেন চাকমা, সাং-গংগারাম, বাঘাইহাট। ৪. জীবন শান্তি চাকমা, পিতা-তরনী সেন চাকমা, সাং-চামিনী ছড়া, বাঘাইহাট। ৫.কৃপায়ন চাকমা(কালা ছোগা), পিতা- অনিল বরণ চাকমা, সাং- গংগারাম। ৬. সুনেষ চাকমা, পিতা-সুভাস বসু চাকমা, সাং- গংগারাম। ৭. শষি চাকমা, পিতা-তোক চান চাকমা, সাং-ডানে ভাইভাই ছড়া, বাঘাইহাট। ০৮. গোবিন্দ চাকমা হেডম্যান, পিতা-রাজ মণি চাকমা, সাং-ডানে ভাইভাই ছড়া, বাঘাইহাট।

এবিষয়ে বাঘাইছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ আমির হোসেন বলেন, আলকাছ হত্যা মামলার ২ নম্বার তালিকাভুক্ত আসামী হচ্ছে শুদ্ধধন চাকমা। আটক শুদ্ধজয় চাকমাই হচ্ছেন আলোচিত শুদ্ধধোন চাকমা। প্রথমে তিনি তার পরিচয় গোপন করলেও পুলিশ তাকে ঠিকই সনাক্ত করে ফেলে।

এই হত্যা মামলার আসামীদের খুঁজছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এবং এমনকি আদালত থেকে তাদের অনুপুস্থিতিতে তাদের সম্পত্তি ক্রোকেরও নির্দেশ ছিল আদালতের। বর্তমানে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে, নাকি সাজার রায় হয়েছে কিনা সে বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে আদালতে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য গত ৩জুলাই বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলী ও রুপকারী শাখার পরিচালক এবং ইউপিডিএফ’র বিচার বিভাগীয় পরিচালক অটল চাকমা(৫৫) ও তার সহকারী আলকাছ হত্যা মামলার অন্যতম আসামী শুদ্ধধন(রাজা) চাকমা(৪২) কে আটক করেছে নিরাপত্তা বাহিনী।

নিরাপত্তা বাহিনী সুত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৪ইস্ট বেঙ্গল বাঘাইহাট সেনা জোন থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর একটি টিম অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করে। আটক অটল চাকমা একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী।

গত ৩এপ্রিল একই এলাকা থেকে পরিচালক সুগত চাকমাকে আটকের পর ঐ দায়িত্বে আসে অটল চাকমা আর আসার পর থেকেই এলাকার ছোট বড় সকল ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সে লাগামহীন চাঁদাবাজী করতে থাকে আর অস্ত্র দিয়ে প্রতিনিয়ত লোকজনের মাঝে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিল তারা। তাদেরকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায় এবং তাদের দেওয়া তথ্যমতে এলাকায় অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে সুত্রটি।

আটক ইউপিডিএফ নেতা অটল চাকমা বাঘাইছড়ি উপজেলার কাট্রলী গ্রামের মৃত মনিন্দ্র চাকমার ছেলে এবং তার সহকারী শুদ্ধজয় চাকমা দীঘিনালা উপজেলার সংগলা গ্রামের চিত্তরন্জন চাকমার ছেলে বলে জানা যায়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন