সাজেকে আঞ্চলিক অস্ত্রধারী রাজনৈতিক দলের বাঁধায় পন্ড ঐতিহ্যবাহী বৈসাবি উৎসব

image-63e9a8edb86b253819648c0dd1c4b5cbccd41a3fa819a54cb4a66f3d1d793fe8-V

নিজস্ব প্রতিনিধি :
রাঙ্গামাটি জেলার সাজেক ইউনিয়নের সাধারণ পাহাড়ী জনগণের আনন্দ কেড়ে নিল আঞ্চলিক অস্ত্রধারী রাজনৈতিক দল। তাদের অযাচিত বাঁধায় এবারও পন্ড হয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী বৈসাবি অনুষ্ঠান। এলাকাবাসীর যৌথ উদ্যোগে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এর নেতৃত্বে বৈসাবি উদযাপন কমিটি নানা বর্ণিল আয়োজনে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি গ্রহণ করে। উক্ত অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে আঞ্চলিক অস্ত্রধারী রাজনৈতিক দল গুলো ব্যাপক চাঁদাবাজির পরিকল্পনা করে এবং এ লক্ষে বিভিন্ন্ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও সমিতির নিকট মোটা অংকের চাঁদা দাবী করে চিঠি ও ফোন করে।

আঞ্চলিক অস্ত্রধারী রাজনৈতিক দল এর লাগামহীন চাঁদা আদায় এলাকার পাহাড়ী-বাঙ্গালী সমাজ নির্বিশেষে সকলের জীবন দূর্বিসহ করে তোলেছে। ভুক্তভোগীরা নিরুপায় হয়ে স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীর শরনাপন্ন হলে নিরাপত্তা বাহিনী বিভিন্ন স্থানে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে চাঁদা সংগ্রহের জন্য প্রেরিত চিঠি এবং চাঁদার রসিদসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করে এবং পরবর্তীতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং অভিভাবকের জিম্মায় মুচলেকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর গৃহীত পদক্ষেপ আঞ্চলিক অস্ত্রধারী রাজনৈতিক দল কাঙ্ক্ষিত চাঁদা সংগ্রহে ব্যর্থ হয় বলে জানা যায়। এই যখন পরিস্থিতি তখন হঠাৎ করে বৈসাবি উদযাপন কমিটি সেনাবাহিনীকে উক্ত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রন জানালে তাদের মধ্যে এক প্রকার মতবিরোধ সৃষ্টি হয় যা পরবর্তীতে ঝগড়াতে রূপান্তরিত হয়। কাঙ্ক্ষিত চাঁদা অনাদায় এবং সেনাবাহিনীকে বৈসাবি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করাতে স্থানীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল উক্ত অনুষ্ঠান বাতিল করতে বাদ্য করেছে বলে জানা গেছে।

এই ব্যাপারে বৈসাবী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমা জানান যে, বৈসাবী উদযাপন এর জন্য গঠিত কমিটি স্বল্প পরিসরে আর্থিক অনুদান সংগ্রহ করেছেন। তবে কোন ব্যাক্তি বা আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের সন্ত্রাসীরা তার অগোচরে কমিটির নাম ব্যবহার করে জোর পূর্বক চাঁদাবাজি করছে কিনা তা তার জানা নেই।

উক্ত অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান যে, কমিটি স্বউদ্যোগে কিছুটা আর্থিক সাহায্য লাভের আশায় বাঘাইহাট জোন কমান্ডারকে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, কিন্তু নিজেদের হীন স্বার্থ হাসিল করার জন্য সন্ত্রাসীরা অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিতে চাপ দেওয়ায় কমিটির পক্ষ তেকে অনুষ্ঠান স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

উক্ত বিষয়ে বাঘাইহাট জোনের সাথে যোগাযোগ করা হলে জোন এ্যাডজুটেন্ট লে. হাসান মাহবুব মোর্শেদ জানান, গত ১০ই এপ্রিল ২০১৬ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এর নেতেৃত্বে স্থানীয় কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ একটি আমন্ত্রণ পত্র নিয়ে জোন সদরে আসে। কিন্তু অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার পূবের্ আঞ্চলিক অস্ত্রধারী রাজনৈতিক দলের চাপে তাদের অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়েছে বলে অনুষ্ঠান পরিচালনা কমিটি আমাদের জানায়।

এই ব্যাপারে বাঘাইহাট জোন কমান্ডার লে. কর্ণেল মুহাম্মদ আলী হায়দার সিদ্দিকী, পিএসসি বলেন, নিরাপত্তা বাহিনী সব সময় সাধারণ জনগণের সাথে ছিল, আছে এবং থাকবে। কোন ইস্যুকে কেন্দ্র করে কোন আঞ্চলিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কোন প্রকার এবং অস্ত্রের মুখে চাঁদাবাজি বরদাশত করা হবে না। স্থানীয় জনগণের ব্যাপারে নিরাপত্তা এবং এলাকার শান্তি-শৃঙখলা নিশ্চিত করতে আমরা সদা সচেষ্ট এবং বৈসাবী ও বিঝু সহ যেকোন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরিচালনায় আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুুত”।

এদিকে সাজেক বৈসাবি অনুষ্ঠান বাতিল হওয়ার সাধারণ জনগনের মধ্যে হতাশা এবং ক্ষোভ বিরাজ করছে। আঞ্চলিক অস্ত্রধারী রাজনৈতিক দল এর অতিরিক্ত চাঁদাবাজি এবং জনগণের প্রতি অন্যায় অবিচার সূলভ দৃষ্টিভঙ্গী এই ঘটনার মূল কারন বলে স্থানীয় জনগন মনে করেন। পাহাড়ে শান্তি অনায়নে চাঁদাবাজি কঠিন হাতে দমন করা উচিত বলে কেউ কেউ মত প্রকাশ করেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

2 Replies to “সাজেকে আঞ্চলিক অস্ত্রধারী রাজনৈতিক দলের বাঁধায় পন্ড ঐতিহ্যবাহী বৈসাবি উৎসব”

  1. ক্রসফায়ার নামক শব্দটি কি পার্বত্য অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য নয়??

  2. আমাদের প্রানের উৎসবকে বাঁধা দেয় এমন সংগঠন চাই না।বছরে ১বার যদি সবাই মিলে আনন্দ করতে না পারি তবে কেন বেঁচে থাকা?
    প্রত্যেক ধর্মতেই বড় কোন উৎসব থাকে আর সবাই সেটা খুব আনন্দ নিয়ে উদযাপন করে তাহলে আমরা কেন বাদ পড়বো?
    আমাদের অপরাধটা কোথায়??

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন