সাজেকের বাঘাইহাট বাজার আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি ইউপিডিএফের
নিজস্ব প্রতিবেদক:
স্থানীয় আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফের নামে রাঙ্গামাটি জেলার সাজেক থানার অন্তর্গত বাঘাইহাট বাজার আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে অভিযোগ জানিয়েছে বাঘাইহাট বাজার কমিটি।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬.৩০টার দিকে ০১৮৭৮২০০৮১৭ ও ০১৫৫২৭২৭১৯৩ নাম্বার থেকে বাঘাইহাট বাজার কমিটির লোকজনকে এই হুমকি দিয়েছে বলে জানান বাঘাইহাট বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি ডা:নাজিম উদ্দিন।
তিনি আরও বলেন আমরা এই হুমকি পাওয়ার পর নিরাপত্তা বাহিনীকে অবহিত করেছি এবং সাজেক থানায় নিরাপত্তা চেয়ে বাজার কমিটির পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়রি করা হয়েছে।
একই সময় বাঘাইহাটের নয়ন চাকমাকে মাচালং এলাকার ইউপিডিএফ’র কর্মী বেভিলন চাকমা ফোন করে বলেন সোমবারের মধ্যে যদি বাঙ্গালীরা গংগ্রাম উজো বাজারের বৈয়কট তুলে না নেয় তাহলে বাঘাইহাট বাজারের বড় ধরনের ক্ষতি ও বাংগালীদের অনেক ক্ষতি হবে; এসব কথা বাংগালীদের জানিয়ে দিতে বলেছে বলে জানিয়েছেন নয়ন চাকমা।
বাংগালীদের স্থানীয় একটি সুত্রে জানিয়েছে, ইউপিডিএফ বাঙ্গালী অধ্যুষিত এলাকার বা্ইরে নিজেদের এলাকায় বড় ধরনের একটি ঘটনা ঘটিয়ে বাঙালীদের ওপর দোষ চাপানোর পরিকল্পনাও করছে যাতে করে এলাকায় সমস্য সৃষ্টি করে সাজেক এলাকায় তাদের আধিপত্য ধরে রাখতে পারে।
উল্লেখ্য, বাঘাইহাট বাজার অত্র অঞ্চলের বৃহত্তম বাজার। রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার ৪-৫ টি উপজেলার ব্যবসায়ীরা এখানে ব্যবসা করেন। একই সাথে এই সকল অঞ্চলের সকল সম্প্রদায়ের বাসিন্দারা তাদের উৎপাদিত কাঁচামাল বিক্রি করে থাকেন। কিন্তু
২০১০ সালে পাহাড়ী-বাঙালী দাঙ্গার পর স্থানীয় পাহাড়ী একটি সংগঠনের হুমকি ও বয়কটের আহ্বানে দীর্ঘ ছয় বছরেও চালু করা যায়নি পার্বত্য এলাকার ঐতিহ্যবাহী বাঘইহাট বাজারটি। বিগত ৬ বছর ধরে বন্ধ থাকায় অচল হয়ে পড়েছে এ বাজারটি। যে বাজারে প্রতি সপ্তাহে হাটের দিন পাহাড়ি-বাঙালির জমজমাট মিলন মেলা হতো, সে বাজার এখন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়েছে।
আর সে খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের। বাঘাইহাট বাজারটি বয়কট বাতিল করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও পাহাড়ি সংগঠগুলোর নেতাদের সাথে বার বার বৈঠক করলেও কোন লাভ হয়নি বলে জানা গেছে। আঞ্চলিক সংগঠনটির চাপে স্থানীয় পাহাড়ি চাষীরা বাজারে আসতে পারছে না। অবধৈ অস্ত্রের প্রভাবে জিম্মি করে বাজার বয়কট করতে বাধ্য করেছে স্থানীয় পাহাড়ি জনগণ এবং জুম চাষীদের। বিভিন্নভাবে বাধার সন্মুখীন হচ্ছে তারা। অবৈধ অস্ত্রের শক্তির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে গোটা সাজেক ইউনিয়ন। নিয়মিত হাট না বসার কারনে সাধারণ মানুষ যেমন দূর্ভোগে পড়েছে। তেমনি পাহাড়ী বিক্রেতারা তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে না পেরে রীতিমত বিপাকে পড়েছে।
এদিকে বাঘাইহাট বাজার বয়কট করে পাহাড়ীরা উপজাতীয় অধ্যুষিত গঙ্গারাম মুখ এলাকার উজো বাজারে একটি বাজার বসিয়েছে। কিন্তু সেই বাজারে বাঙালী কোনো ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা ভয়ে যেতে পারেন না। তাদের অভিযোগ উজোবাজারে বাঙালী ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা গেলে তাদেরকে পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের ব্যাপক চাঁদাবাজির মুখে পড়তে হয়। চাঁদা না দিলে তাদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এই প্রেক্ষাপটে স্থানীয় বাঙালীরাও কিছুদিন ধরে উজোবাজার বয়কটের আহ্বান জানিয়েছে। বাঙালীদের মতে, পাহাড়ীরা বাঘাইহাট বাজার বয়টক তুলে না নিলে উজোবাজার তারা বয়কট করবে। বাঙালীদের শান্তিপূর্ণ আহ্বানে স্থানীয় বাসিন্দারা সাড়া দেয়ায় উজো বাজার অচল হয়ে পড়েছে। তারই প্রেক্ষাপটে ইউপিডিএফের এই হুমকি আসলো বলে স্থানীয়দের অভিমত।
এবিষয়ে ইউপিডিএফ’র কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক নিরন চাকমার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এটি মিথ্য ও অপপ্রচার। ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে বাঙালীরা নিজেরাই এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে।
এ বিষয়ে সাজেক থানার অফিসার ইনচার্জ নুরুল আনোয়ার বলেন, বাঘাইহাট বাজার আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকির বিষয়ে বাঘাইহাট বাজার কমিটির পক্ষ থেকে বিষয়টি আমাকে জানানো হয়েছে, আমি এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নিচ্ছি এবং বিষয়টি আমি দেখছি।