সাঙ্গু নদীতে ফুল ভাসিয়ে বিষু উৎসব শুরু
নিজস্ব প্রতিবেদক, বান্দরবান:
সাঙ্গু নদীতে ফুল ভাসিয়ে বান্দরবানে চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা স¤প্রদায়ের বিষু উৎসব শুরু হয়েছে।
বৃস্পতিবার (১২এপ্রিল) সকালে মধ্যম পাড়ার সাংঙ্গু নদীর ঘাটে তরুণ তরুণীরা, শিশু কিশোর তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী পোষাক পরে নানান রংয়ের সাজে ফুল বিজুতে অংশ নেয়। নদীতে নানান রংয়ের ফুল নদীর জলে ভাসিয়ে উৎসবের সুচনা করা হয়।
এসময় নদীর পাড়ে পাহাড়ী বাঙ্গালীদের মিলন মেলায় পরিণত হয়।
এদিকে তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায় বর্ষবরণ উৎসবে তরুণ তরুণীরা দল বেঁধে ঐতিহ্যবাহী ঘিলা খেলায় মেতে উঠেছে। নতুন বছরের শুরুতে বর্ষবরণে তঞ্চঙ্গ্যারা ঘিলা খেলার আয়োজন করে। বিকালে বালাঘাটা বিলকিছ স্কুল মাঠে তঞ্চঙ্গ্যা স¤প্রদায়ের ঐহিত্যবাহী ঘিলা খেলার উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি। ঘিলা খেলা টুর্নামেন্টে ৩২টি পাড়ার তরুণ-তরুণী দল অংশগ্রহণ করেছে।
পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যাদের উৎসবের তিন দিনের আজ প্রথম দিন ফুল বিজু শুক্রবার মূল বিজু ও শনিবার গইজ্জা পইজ্জা।
অন্যদিকে অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য চলছে নানা করমের সবজি দিয়ে পাচন তৈরীর কাজ।
বিষু উৎসব উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব কাঞ্চন জয় তঞ্চঙ্গ্যা জানান, প্রকৃতিক ভাবে পাহাড়ে জম্মানো লতায় যে ফল ধরে তর নাম ঘিলা। তঞ্চঙ্গ্যার সম্প্রদায়ের বিশ্বাস ঘিলার লতায় ফ‚ দেখা ভাগ্যর ব্যাপার। শুধু যারা মহামানব হয়ে জন্ম গ্রহণ করেছেন তারাই একমাত্র ঘিলা ফুলের দেখা পান।
ঘিলা পবিত্র হিসেবে সংগ্রহ করে রাখেন তঞ্চঙ্গ্যারা। ঘিলা বাড়িতে খারাপ দেবতা বাড়িতে প্রবেশ করতে পারে না এবং বজ্রপাত, বিপদ আপদ থেকে রক্ষা পায় তাদের বিশ্বাস। এদিকে মারমারা সাংগ্রায়ং বা বর্ষবরণে নানা প্রস্তুতি নিয়েছে।
এদিকে শুক্রবার ১৩ এপ্রিল সকালে বান্দরবান শহরের রাজার মাঠ থেকে মারমা জনগোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব ‘সাংগ্রাইং পোয়েঃ’ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেবেন।
বিকালে সাংঙ্গু নদীর চরে চন্দনের পানিতে বৌদ্ধমূর্তিকে স্নান করানো হবে।
বাঙলা নববর্ষ উপলক্ষে ১৪ এপ্রিল সকাল ৭টায় রাজার মাঠ থেকে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হবে।
বাঙালি ছাড়াও পাহাড়ে বসবাসকারী মারমা, চাকমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, ম্প্রো , খুমি, খেয়াং, চাক, বম, পাংখো এবং লুসাই জনজাতির সংস্কৃতিকর্মীরা নিজ নিজ ঐতিহ্যবাহী পোশাক নিয়ে সর্বজনীন এই মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেবেন।
১৫ এপ্রিল বিকেল ৩টায় রাজার মাঠে মারমা জনগোষ্ঠীর বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব ‘মৈত্রী পানি বর্ষণ’ ও লোকজ খেলাধুলা অনুষ্ঠিত হবে।
পরের দিন ১৬ এপ্রিল বিকেল ৩টা রাজার মাঠে ‘মৈত্রী পানি বর্ষণ’ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে।
১৬ এপ্রিল সকাল ৯টায় রোয়াংছড়ি উপজেলার সাংকিং পাড়ায় খুমি জনজাতির ‘সাংক্রাইং’ উৎসব, ১৮ এপ্রিল সকাল ৯টায় সদর উপজেলার রাজবিলা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মারমা বর্ষপঞ্জি ‘সাক্রয়-১৩৮০’ বর্ষবরণ উৎসব এবং ১৯ এপ্রিল সকাল ১০টায় রোয়াংছড়ি উপজেলার আন্তাহা ত্রিপুরা পাড়ায় ত্রিপুরাদের ‘বৈসু’ উৎসব আয়োজন করেছে কেএসআই।