সাগরে মহেশখালীর ১৫ জেলের সলিল সমাধি: বেঁচে থাকা নুরুল হুদা দিল ঘটনার বর্ণনা

 moheshkhali pic 28-8-16 copy

মহেশখালী প্রতিনিধি:

সাগরে মহেশখালীর ১৬ জেলে সহ ফিশিং ট্রলারের নিখোঁজের ১৫ দিন পর জানা গেছে হতভাগা জেলেরা আর বেঁচে নেই।এ নিয়ে জেলে পরিবারে চলছে শোকের মাতম । ১৬ জেলের মধ্যে ভাগ্যক্রমে মৃত মোস্তাকের পুত্র মেহেরিয়ার পাড়ার বাসিন্দা নুরুল হুদা (প্রকাশ বান্ডু) নামের এক জেলে শনিবার জীবিত  উদ্ধার হয়েছে সাগর থেকে।

উদ্ধার হওয়া জেলে নুরুল হুদা ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জানান, ‘আমরা গত ১২ আগষ্ট মাছ ধরার জন্য সাগরে গেলে ৩দিন পর গভীর সাগরে দূর্ঘটনার শিকার হয় আমাদের ট্রলারটি। যখন আমাদের ট্রলারটি পানির ঢেউয়ের তোড়ে  ডুবে যাচ্ছে তখন আমাদের ১০ জন জেলে ছিল ট্রলারের মাছ রাখার কলেষ্টর এর  ভিতর। আর আমি সহ বাকী ৬ জন ছিল উপরে। প্রবল ঢেউয়ের আঘাতে ট্রলারটি ডুবে যাওয়ার পর আমরা একেক জন একেক দিকে চলে যাই। আমার সামনে ৪ জন জেলে পানিতে  ডুবে মারা যেতে দেখেছি। আমি কোন রকমে গলায় পরনের লুঙ্গি পেছিয়ে ফুলিয়ে সাগরে ভাসতে থাকি দিনের পর দিন। এভাবে ৫ দিন পানিতে ভাসার পর ধলঘাটার শুক্কুর মাঝির ট্রলারটি আমাকে উদ্ধার করলে আমি সাথে সাথেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে ওরা আমাকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে।

নিহত জেলেরা হলেন আবদু শুক্কুর মাঝি, মোহাম্মদ হাসেম, মো. জোবাইর, সোনামিয়া, শাহাজাহান, মো. আমান উল্লাহ,  আলতাজ মিয়া, শাহ আলম, মিজান, শওকত ওসমান, ছৈয়দ করিম, আকতার কামাল, রাসেল, রুবেল, মোকারম। এরা সবাই মহেশখালীর উপজেলার কুতুবজুমের খোন্দাকার পাড়া, কামিতার পাড়া, মেহেরিয়াপাড়া বাসিন্দা।

ট্রলার মালিক নুরুল কবির মেম্বার  বলেন, ‘আমার ট্রলার চলে গেছে তাতে আমার কোন দুঃখ নেই আমার এলাকার এত গুলি মানুষ সাগরে মারা গেছে, তার ক্ষতি পূরন হওয়ার নয় ।’

এব্যাপারে কুতুবজুম ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলে সাগরে নিহত জেলেদের পরিবারকে আর্থিক ভাবে সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে এবং  নিহতের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আবুল কালাম জানান, জেলেরা নিখোঁজ হওয়ার থেকে আমরা বিয়য়টি নিয়ে তৎপর ছিলাম। গতকাল (শনিবার) জানতে পারলাম যে ১৫ জনের সলিল সমাধি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমরা নিহতের পরিবারকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

সাগরে জেলের নিহতের ঘটনায় মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সাংসদ আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক  নিহতের পরিবারবর্গের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন।

উল্লেখ্য, কক্সবাজার জেলার মহেশখালীর কুতুবজুম ইউনিয়নের খোন্দকার পাড়া গ্রামের হাজি ফজল করিমের পুত্র  সাবেক মেম্বার নুরুল কবির এর মালিকানাধীন ৩৭ অশ্বশক্তি সম্পন্ন ইঞ্জিনযুক্ত ভাসা জালের ফিশিং ট্রলার ‘এফবি আবছর -৪’ গত ১২ আগষ্ট  ১৬ জন মাঝিমাল্লা ৩৩ ফিস ভাসা জাল, বরফ ও অন্যান্য আনুসাঙ্গিক মালামাল সহ মাছ ধরার উদ্দেশ্যে সাগরে যায়। সম্প্রতি সময়ে সাগরে বৈরী আবহাওয়ায় পড়ে ১৬ জন মাঝিমাল্লাসহ  নিখোঁজ হয়। নিহতের তালিকায় ট্রলার মালিকের আপন ভাই ও ভগ্নীপতিও রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন