সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সংলাপ ও সহনশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ: আবুল কালাম

উখিয়া প্রতিনিধি:

সরকারের অতিরিক্ত সচিব, কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম বলেছেন, সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সংলাপ ও সহনশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রোহিঙ্গা ইস্যুতে কক্সবাজার বেতার তথ্যের আদান প্রদান এবং স্থানীয় ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মাঝে শান্তি ও সৌহার্দ্য সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

বুধবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ বেতার কক্সবাজার কেন্দ্র আয়োজিত বিশ্ব বেতার দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আবুল কালাম বলেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অনেক বড় বড় সমস্যার সমাধান করা যায়। সংলাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা যত বেশি হবে ততই মানুষ শান্তিতে থাকবে। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে রাজনীতির উচ্চ পর্যায়ে আমরা সংলাপ হতে দেখেছি। পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে একে অপরের সুখ-দুঃখ অনুধাবন ও কাছাকাছি আসা যায়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ বেতার কক্সবাজার কেন্দ্র রোহিঙ্গাদের সাথে যোগাযোগের একটি বিকল্প কার্যকর মাধ্যম উপস্থিত করেছে। বেতার কার্যক্রমকে মাঠ পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে রোহিঙ্গা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করেছে। এর মাধ্যমে রোহিঙ্গারা যেমন স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সামাজিক মূল্যবোধ, কৃষ্টি, কালচার ইত্যাদির প্রতি সম্মান জানাতে শুরু করেছে তেমনি রোহিঙ্গাদের প্রতি যে স্থানীয়দের মানবিক হতে হবে তা তারা অনুধাবন করতে পেরেছেন।

এবার দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল- সংলাপ, সহনশীলতা ও শান্তি। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আশ্রয়ের প্রেক্ষিতে বৈশ্বিক এ শ্লোগানটি কাকতালীয়ভাবে মিলে গেছে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, কক্সবাজার কেন্দ্রিক রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এ প্রতিপাদ্যটি অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান ও কক্সবাজার সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রকৌশলী প্রদীপ্ত খীসা ।  কক্সবাজার বেতারের সংবাদ পাঠক কবি সিরাজুল হক সিরাজ ও বার্তা বিভাগের অনুবাদক রোজিনা আক্তার রুজির যৌথ সঞ্চালনায় শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বেতার, কক্সবাজার এর উপ আঞ্চলিক পরিচালক মোহাম্মদ ফখরুল করিম।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব ও সমাপনী বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বেতার, কক্সবাজার এর আঞ্চলিক পরিচালক মো. মাহফুজুল হক। এর আগে কক্সবাজার বেতার ভবন প্রাঙ্গণ থেকে বিশ্ব বেতার দিবস উপলক্ষে বের করা হয় একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি। যা কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক অতিক্রম করে লিং রোড হয়ে বেতার ভবনে এসে শেষ হয়। র‌্যালির অগ্রভাগে ছিলেন প্রধান ও আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ। শেষে বেতারের শিল্পী ও কলাকুশলীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বেতার দিবসের কর্মসূচিতে বাংলাদেশ বেতার, কক্সবাজার কেন্দ্রের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, কর্মচারী, সাংবাদিক, শিল্পী, কলাকুশলী, শ্রোতা ও বিপুল সংখ্যক শুভাকাঙ্ক্ষী উপস্থিত ছিলেন। বেতার ভবন প্রাঙ্গণে স্থাপিত মঞ্চে আলোচনা শুরুর পূর্বে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মাওলানা নূর হোসাইন। অন্য কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন উপ আঞ্চলিক পরিচালক মো. মমিনুর রহমান, আঞ্চলিক প্রকৌশলী রাশেদুল আজম সিকদার, সহকারী পরিচালক (অনুষ্ঠান) সুলতান আহমেদ ও শুভাশিস বড়ুয়া, সহকারী বার্তা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ আরাফাত হোসেন। বার্তা বিভাগের অনুবাদক মহসিন শেখ, কক্সবাজার সদর উপজেলা সংবাদদাতা মো. রেজাউল করিম, উখিয়া উপজেলা সংবাদদাতা ফারুক আহমদ, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মোহাম্মদ ফাহাদ( শাকিব), অফিস সহায়ক বাবু জ্যোতি মল্লিক সহ সংবাদ সাপোর্ট শিল্পীরা অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।

টুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার বলেন, বেতার স্থানীয় পর্যায়ে শিশু অধিকার মানব পাচার মাদকের কুফল ট্রাফিক সিগনাল ব্যবস্থাসহ সমাজের জন্য জনহিতকর নানা বিষয় তুলে ধরছে তিনি এফ এম সিস্টেম বেতারের কার্যক্রম কে নতুন ভাবে উজ্জীবিত করেছে মর্মে উল্লেখ করেন।

অধ্যক্ষ প্রদীপ্ত খীসা বলেন, বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও কৃষ্টির এক উর্বর লীলাভূমি বাংলাদেশ বেতার। ১৯৩৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলাদেশ বেতার একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম হিসেবে গণমানুষের কথা প্রচার করছে নিরলস। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা লাভের পটভূমিতে ও বেতারের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ও গৌরব দীপ্ত ইতিহাস ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান ও প্রচারণার মাধ্যমে বাংলার মুক্তিকামী মানুষ খুঁজে পেয়েছিল এক যুদ্ধ জয়ের প্রেরণা।

আলোচনা পর্বের শেষে কক্সবাজার বেতার কর্তৃক ‘স্বপ্নযাত্রায় আমরা’ শীর্ষক কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ১০ বন্ধুর মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন