সব হারিয়ে আমি নি:স্ব, আমার আর কেউ রইল না- চাইহ্লাগ্য মারমার আহাজারী
নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি:
খাগড়াছড়ির আলুটিলা পর্যটন এলাকায় মর্মান্তিক ট্রাক চাপায় নিহত আট জনের মধ্যে একই পরিবারের তিন জনসহ ছয় জনই মহালছড়ি উপজেলার চৌংড়াছড়ি গ্রামের। এদের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষার্থী রয়েছে দু’জন। এখন ওই গ্রামে চলছে শোকের মাতম। মহালছড়ি উপজেলার চোংড়াছড়ি হেডম্যান পাড়ার এ গ্রামে মারমা সম্প্রদায়ের বসবাস।
শুক্রবার সকালে এ গ্রামের বাসিন্দারা দলবেধে যান খাগড়াছড়ি আলুটিলা পর্যটন এলাকায় ধাতুচৈত্য বৌদ্ধ বিহারে জনবল বৌদ্ধ বিহার অধ্যক্ষ চন্দ্রমনি মহাস্থবিরের দাহক্রিয়া অনুষ্ঠানে। সকাল সোয়া ১০টার দিকে পাথর ভর্তি একটি ট্রাক ঘাতক কেড়ে নেয় এ গ্রামের একই পরিবারের তিনজনসহ ছয় জনের প্রান। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ গ্রামের আরও দু’জন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
চৌংড়াছড়ি গ্রামের নিহতরা হলেন, চাইহ্লাগ্য মারমার স্ত্রী নেইম্রা মারমা, অষ্টম শ্রেনীতে পড়ুয়া মেয়ে ববি মারমা ও শিশু কন্যা নুনুমং মারমা। মমং মারমার শিশু কন্যা মাটিং মারমা (৬),মং মারমার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলে উচানুং মারমা (১৫) ও মংক্রু মারমার এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলে অংক্রইচিং মারমা। স্বজন,জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী এ ঘটনায় উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও দায়ীদের শাস্তি জানিয়েছেন।
প্রিয়জনকে হারিয়ে চৌংড়াছড়ি পুরো গ্রাম এখন স্তদ্ধ। অনেকে কান্নার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। স্বজন হারানোর শোকে মূর্ছা যাচ্ছে বার বার। শান্তনা দেওয়ার ভাষাও জানা নেই কারো।
স্ত্রী ও দুই সন্তান হারিয়ে শোকে কাতর চাইহ্লাগ্য মারমা এ ঘটনার দায়ীদের উপযুক্ত বিচার দাবী করে বলেন, আমার আর কেউ রইল না। পরিবারের সব সদস্যকে হারিয়ে আমি এখন নি:স্ব। আমার মতো আর কেউ যেন না হয়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রতন কুমার শীল বলেন, চালক হেলপারকে দিয়ে ট্রাকটি চালানোর কারণে এ মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায় পুরো মহালছড়ি উপজেলাবাসী শোকাহত। আমরা এর উপযুক্ত বিচার দাবি করছি।
এ দিকে শনিবার সকালে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী চৌংড়াছড়ি গ্রাম পরিদর্শন করে নিহতদের পরিবারগুলোকে জনপ্রতি ১৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্য দিয়েছেন। এ সময় ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনার জন্য প্রশাসনের গাফিলতিকে দায়ী করে তিনি অভিযোগ করেন, ফিটনেস বিহীন গাড়ী, হেলপার দিয়ে গাড়ী চালানোর কারণে প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে এবং প্রাণহানি হচ্ছে। অথচ প্রশাসন নির্বিকার। এ সময় জেলা পরিষদ সদস্য জুয়েল চাকমাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
মাটিরাঙা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাহাদত হোসেন টিটু জানান, ট্রাকটি চালাচ্ছিল হেলপার। এ ঘটনায় মাটিরাঙা থানায় ড্রাইভার ও সহকারীকে আসামী করে মামলা হয়েছে। চালককে গ্রেফতারের অভিযান চালাচ্ছে।
আলুটিলায় বিপুল প্রাণহানির ঘটনায় খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূইয়া গভীর শোক, শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও হতাহতদের আত্মার সদগতি কামনা করেন এবং আহতদের সকলের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের হতাহতদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
এদিকে শনিবার দুপুরে চৌংড়াছড়ি মহাশ্মশানে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ি নিহতদের দাহক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে যথাযথ আইনী প্রয়োগ ও সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন মনে করেন সচেতন মহল।