সন্ধ্যা নামলেই পেকুয়া মাদকের হাট

পেকুয়া প্রতিনিধি:
পেকুয়ায় সন্ধ্যা নামলেই মাদকের হাট বসে বিভিন্ন স্পটে। হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা, বাংলা মদ ও হেরোইনসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। পুরো পেকুয়ায় মাদকের ছড়াছড়ি হয়েছে। যাকে মাদকসেবী ও বিক্রেতারা ‘বাবা’ বা ‘গুটি’ হিসেবেই ট্রিট করে।

পেকুয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ২৫টি স্পটে অবাধে বিক্রি চলছে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য। মাদক বিরোধী অভিযান খুব একটা জোরদার না থাকায় মাদক ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে বলে স্থানীয়দের অভিমত। প্রকাশ্যে এসব স্পটে মাদক বিক্রি চললেও রহস্যজনক কারণে নীরবতা পালন করছে পুলিশ। মাদকদ্রব্য সহজলভ্য হওয়ার কারণে এর দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এলাকার যুবসমাজ। এতে প্রতিনিয়তই বেড়ে যাচ্ছে সামাজিক অপরাধের মাত্রা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলা সদর চৌমুহনীতে তিনটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে মাদক ব্যবসা। এরমধ্যে যুবদলের এক নেতার নেতৃত্বে মিয়াপাড়া এলাকায় ৪ সদস্যের একটি সিন্ডিকেট বিক্রি করছে ইয়াবা। চাহিদামত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ইয়াবা সরবরাহ করে ওই সিন্ডিকেট। অপর দুটি সিন্ডিকেটের মধ্যে একটি গাজা ও ইয়াবা এবং অপরটি বিক্রি করছে গাজা ও চোলাই মদ। এছাড়াও ইউনিয়নের সাবেক গুলদী এলাকায় মাদক বিক্রি করছে অপর একটি সিন্ডিকেট।

একইভাবে পেকুয়া বাজার কেন্দ্রিক মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে আরো পাঁচটি সিন্ডিকেট। এরমধ্যে বাইম্যাখালী রোডে দুইটি সিন্ডিকেটের মধ্যে একটি ইয়াবা ও অপর সিন্ডিকেট বিক্রি করছে মদ ও গাজা। একইভাবে বাজারের অদূরে ফাঁসিয়াখালী এলাকায় রয়েছে একটি মাদক স্পট। যেখানে প্রায়ই সবধরণের মাদক সেবনের সুবিধাও দিচ্ছে শক্তিশালী ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা। ভোলাইয়া ঘোনা এলাকায় শ্রমিকদল নেতার নেতৃত্বে ইয়াবা বিক্রি করছে অপর একটি সিন্ডিকেট। যেখানে মাদক সরবরাহ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে নারী ও শিশু। এছাড়াও মামা ভাগিনার দোকান এলাকায় দুটি সিন্ডিকেট বিক্রি করছে গাঁজা, মদ ও ইয়াবাসহ সব ধরণের মাদক।

এদিকে উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের লঞ্চঘাট এলাকায় ইয়াবা বিক্রি করছে দুইটি সিন্ডিকেট। যারা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় মাদক ফেরি করে বেড়ায়। উজানটিয়া ইউনিয়নের সোনালী বাজার ও করিমদাদ মিয়াঁ ঘাট এলাকায় ইয়াবা, গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদক বিক্রি করছে একটি সিন্ডিকেট। রাজাখালী ইউনিয়নের সবুজ বাজারের পশ্চিমে পাশে মদ বিক্রি করছে একটি সিন্ডিকেট। নোয়াখালী ব্রীজ এলাকায় বিভিন্ন ধরণের মাদক বিক্রি করছে একটি সিন্ডিকেট। এছাড়াও আরবশাহ বাজার এলাকায় মাদক বিক্রি করছে একাধিক সিন্ডিকেট। টইটং ইউনিয়নের হাজী বাজার এলাকায় মাদক বিক্রি করছে শক্তিশালী দুটি সিন্ডিকেট। এরমধ্যে টইটং ইউপির এক সদস্যের জামাতার নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট টইটং কেন্দ্রিক মাদক ব্যবসা চালালেও তারা উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে নিজস্ব লোকজন দিয়ে সরবরাহ করছে ইয়াবা। এছাড়াও ইউনিয়নের ধনিয়াকাটা এলাকায় ও টইটং বাজার এলাকায় মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে আরো দুইটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। বারবাকিয়া ইউনিয়নের সওদাগর হাট কেন্দ্রিক মদ, গাজা ও ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরণের মাদক বিক্রি করছে দুইটি সিন্ডিকেট। শীলখালী ইউনিয়নের জারুলবনিয়া ষ্টেশন এলাকায় একটি দোকান কেন্দ্রিক বিক্রি ও সেবন করা হচ্ছে ইয়াবা। এছাড়াও ইউনিয়নের আলেকদিয়া পাড়ায় একটি সিন্ডিকেট ও বাঘগুজারা সাঁকোর পাড় এলাকায় মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে আরো একটি সিন্ডিকেট।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে মাদক ব্যবসা থেকে ফিরে আসা এক ব্যক্তি জানায়, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্নীতিগ্রস্ত সদস্যদের সাথে আতাত করে উপজেলায় চাহিদার সিংহভাগ ইয়াবা সরবরাহ করা হচ্ছে পেকুয়া উপজেলা সদর থেকে।

তিনি আরো জানিয়েছেন, মায়ানমার থেকে চোরাচালানীদের হাত দিয়ে এদেশে প্রবেশ করা ইয়াবা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচারের রোড হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে পেকুয়াকে। পুলিশ প্রশাসনের নজরদারী না থাকায় ইয়াবার বড় ধরণের চালান পাচার করতে এই এলাকাকে ট্রানজিট হিসেবে বেচে নিয়েছে চোরাকারবারিরা। বাশঁখালী থানা পুলিশের তল্লাশি অভিযান অব্যাহত থাকায় নিয়মিত ধরা পড়ছে ইয়াবা পাচারকারীরা। উদ্ধার হচ্ছে বিপুল পরিমাণ। যার সিংহভাগ পেকুয়ার উপর দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও এসব পাচার চক্রে জড়িয়ে পড়ছে পেকুয়ার লোকজন। পেকুয়া উপজেলার বেশ কয়েকজন ট্রলার মালিক ইয়াবা পাচার চক্রে জড়িয়ে পড়েছে এমন তথ্যও অনুসন্ধানে জানা গেছে।

এব্যাপারে পেকুয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মনজুর কাদের মজুমদার বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে থানা পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এলাকায় মাদক বিক্রি ও মাদকসেবী সময়ের সাথে তুলনামূলকভাবে কমে এসেছে। কিন্তু মাদক বিক্রেতারা অভিনব পন্থা অবলম্বন করছে। তাই পুলিশকে কাজ করতে একটু বেগ পেতে হচ্ছে। তারপরেও মাদকের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ। খুব শীঘ্রই পেকুয়াকে মাদক মুক্ত উপজেলায় রূপান্তর করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন