Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

সন্ধিক্ষণে মিয়ানমারের শান্তি-প্রক্রিয়া, হতাশ হয়ে পড়ছেন সু চি

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

চলতি মাসের শেষ দিকে পাঙলঙ শান্তি সম্মেলনের তৃতীয় সভা হওয়ার কথা। তবে সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, মিয়ানমারের শান্তি-প্রক্রিয়া ততই ভঙ্গুর বলে মনে হচ্ছে। সরকার চাচ্ছে, আসন্ন কনভেনশনে যাতে সর্বোচ্চ সংখ্যক অংশগ্রহণকারী উপস্থিত হয় এবং যত বেশি সম্ভব জাতিগত বিদ্রোহী গ্রুপকে শান্তিচুক্তি তথা জাতীয় যুদ্ধবিরতি সমঝোতায় (এনসিএ) সই করানো যায়। তবে জাতিগত বিদ্রোহী অনেক গ্রুপই তাদের এলাকায় সামরিক বাহিনীর ক্রমবর্ধমান হামলা ও ভীতি প্রদর্শনের মুখে সম্মেলনে যোগদানে অনীহা প্রকাশ করছে। শান্তি-প্রক্রিয়া দ্রুততার সাথে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে প্রবেশ করতে থাকার প্রেক্ষাপটে পুরোপুরি ভণ্ডুল হওয়ার শঙ্কায় পড়ে গেছে।

মতপার্থক্য নিরসন করার লক্ষ্যে সংলাপের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ততই অভিন্ন সমঝোতা সৃষ্টি কঠিন বলে মনে হচ্ছে। সাবেক থিন সেন শাসনকালে বৈঠক ও আলোচনার প্রথম পাঁচটি বছর অতিবাহিত করার পর আমাকে খোলামেলাভাবে এ কথাই বলেছিলেন চুক্তির অন্যতম এক আলোচক। শেষ পর্যন্ত মাত্র আটটি গ্রুপ এনসিএতে সই করে।

এখন মিয়ানমারের বেসামরিক নেতা স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি বুঝতে পারছেন, এই প্রক্রিয়া কত কঠিন ও ভঙ্গুর। নিশ্চিতভাবেই বলা চলে, মনে হতে পারে যে সেনাবাহিনী বা তাতমাদাও তার সাথে রয়েছে, আসলে দেশটির সামরিক বাহিনী এই প্রক্রিয়াকে কোনোভাবেই সহজ করছে না।

সু চি’র ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, অংশগ্রহণকারীদের দরকষাকষি ও দৃষ্টিভঙ্গিতে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন, বুঝতে পেরেছেন যে শান্তি ও সমন্বয় সাধন সহজ বা তাড়াহুড়ার ব্যাপার নয়। তার সাথে সম্প্রতি কথা বলেছেন এমন কূটনীতিকরা মনে করছেন, তিনি হতাশ এবং কোনো সমাপ্তির কোনো লক্ষণ দেখতে পাচ্ছেন না।

আর নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, সেনাবাহিনী এটিই চায়। তারা কোনো রাজনৈতিক আলোচনা চায় না, যদিও পরবর্তী রাউন্ডের বহুপক্ষীয় আলোচনায় সে দিকেই নজর দেওয়া হবে, ‘ফেডারেল নীতিমালা’ নিয়ে কথা হবে। সু চি কয়েক মাস আগেও মনে করতেন, অংশগ্রহণকারীরা ফেডারেল নীতিমালার ধারণার সাথে একমত পোষণ করে। চতুর্থ পাঙলঙ সভা পর্যন্ত নিরাপত্তাবিষয়ক আলোচনা স্থগিত থাকবে। তিনি মনে করেন, সামরিক বাহিনীকে শান্ত করতে এবং তাদের কট্টর অবস্থান নমনীয় করতে এটিই যথেষ্ট।

কিন্তু সেনাবাহিনীর রয়েছে ভিন্ন আইডিয়া। যে শান্তি-প্রক্রিয়া সাংবিধানিক পরিবর্তন এনে তাদের রাজনৈতিক ভূমিকা হ্রাস করবে, বেসামরিক ভূমিকা বাড়াবে, জাতিগত গ্রুপগুলোর রাজনৈতিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে, তা তারা চায় না। সামরিক বাহিনী দীর্ঘ খেলা খেলে যাচ্ছে। তারা যত বেশি সম্ভব প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত করতে চায়, অন্তত ২০২০ সালে অনুষ্ঠেয় পরবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত। আর সু চি চান আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই সংবিধান পরিবর্তন করার ব্যাপারে তার লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে। আশা দ্রুত মিইয়ে যাচ্ছে বলে অনেক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষকের মনে হচ্ছে।

মনে হচ্ছে সু চির নেতৃত্বাধীন বেসামরিক সরকার কূলকিনারা পাচ্ছে না। কৌশল ও পরিকল্পনার অনুপস্থিতি প্রকট বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন সরকারের সাথে সাম্প্রতিক আলোচনায় অংশ নেওয়া কয়েকজন জাতিগত নেতা। পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, সরকারের প্রধান উদ্বেগ হলো পরবর্তী পাঙলঙ সভার আগে যত বেশি সম্ভব জাতিগত গ্রুপকে এনসিএতে নিয়ে আসা এবং শান্তি সম্মেলনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।

এই লক্ষ্য জাতিগত গ্রুপগুলোর মধ্যে কেবল দূরত্বই আরো বাড়াবে, আস্থা ও বিশ্বাস নস্যাৎ করে দেবে। যে কয়েকটি বিষয়ে জাতিগত সব নেতা একমত তা হলো, কয়েক দশকের সঙ্ঘাত ও গৃহযুদ্ধ অবসান ঘটাতে হলে পাঙলঙ প্রক্রিয়া অবশ্যই হতে হবে অন্তর্ভুক্তমূলক।

গত মাসের শেষ দিকে আরো দুটি জাতিগত গ্রুপ এনসিএতে সই করতে রাজি হয়। এরা হলো নিউ মন স্টেট পার্টি (এনএমএসপি) ও লাহু ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন (এলডিইউ)। সু চি ও সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইঙের সাথে বৈঠকের প্রেক্ষাপটে তারা এ সিদ্ধান্ত জানায়। তারা ইতোমধ্যেই যুদ্ধবিরতিতে সই করা কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নসহ আটটি গ্রুপের সাথে যোগ দেবে। এসব গ্রুপ আগে ইউনাইটেড ফেডারেল কাউন্সিলের (ইউএনএফসি) মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে আলোচনায় অংশ নিয়েছিল। তবে তাদের একতরফা সিদ্ধান্ত সংগঠনের অন্যদের কাছে বিস্ময় হিসেবে বিবেচিত হয়।

দুটি গ্রুপ এনসিএতে সই করার ইচ্ছার কথা ঘোষণা করার পরপরই ইউএনএফসি এক বিবৃতিতে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে জানায়, দলনমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশে দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। ফেডারেলব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আলোচনায় অংশ নেওয়ার প্রধান শর্ত হিসেবে এনসিএতে সই করা বাধ্যতামূলক করার ধারণারও বিরোধিতা করে তারা। তারা এক বিবৃতিতে জানায়, অর্থপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক সংলাপই জোরালো ও দৃঢ় শান্তিচুক্তির ব্যবস্থা করতে পারে।

জাতিগত গ্রুপটির অন্যতম এক নেতা বলেন, এনসিএতে সই করার বিষয়টি আসলে সেনাবাহিনীর ‘বিভক্ত করে শাসন করা’র নীতি। এটি ফাঁপা ও অর্থহীন ইঙ্গিত।

তিনি বলেন, এনসিএ জাতীয়ভিত্তিক, যুদ্ধবিরতি জাতীয় কিছু নয়। এটি জাতিগত গ্রুপগুলোকে বিরক্ত করছে।

গত ডিসেম্বরে তাতমাদাও শান রাজ্যে হেলিকপ্টার হামলা চালায়। এতে করে কচিন ইন্ডিপেন্ডেন্ট আর্মি ও তাঙ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির সাথে নতুন করে সঙ্ঘাত শুরু হয়। এসব হামলা এখনো হচ্ছে।

মিয়ানমারবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লিকে মিয়ানমারে প্রবেশ করতে না দিলেও তিনি বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের উদ্বাস্তু শিবিরগুলো পরিদর্শন করেছেন। তিনি জাতিগত গ্রুপগুলোর সাথে সেনাবাহিনীর সঙ্ঘাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

এসব এলাকায় বৈরিতা অব্যাহত থাকায় এবং এনসিএতে সই না করা গ্রুপগুলোর নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত থাকায় পাঙলঙ সম্মেলন অর্থহীন হয়ে পড়েছে।

এদিকে এনসিএতে সই করা কেএনইউ এখন আর শান্তি সম্মেলনে অংশ নিতে চাচ্ছে না। অবশ্য নর্দার্ন অ্যালায়েন্সের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চীনা চাপ সত্ত্বেও তারা অংশ নেওয়ার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করে আসছে। অচলাবস্থার অবসান ঘটাতে চীনাদের মধ্যস্ততায় কচিন আর্মি নেতার সাথে তাতমাদাওয়ের আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তাতেও তাদের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা বাড়েনি। কচিন সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে আসলে আলোচনার পরিবেশ ছিল না, বরং সেনাবাহিনী তাদেরকে হুমকি দিতে বৈঠককে ব্যবহার করেছে।

সামরিক বাহিনীর শক্তি প্রদর্শন ও বাধা দেওয়ার মনোভাবের ফলে বেশির ভাগ জাতিগত গ্রুপের মধ্যে এই ধারণার সৃষ্টি হয়েছে, সেনাবাহিনী আসলে শান্তি বা ফেডারেল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আগ্রহী নয়, বরং শান্তি-প্রক্রিয়াকে ব্যবহার করে তারা জাতিগত বিদ্রোহী সেনাবাহিনীগুলোকে নিরস্ত্রীকরণ ও ভেঙে দেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। অং সান সু চি যদি নতুন নির্দেশনা ও ভিশন দিতে না পারেন, তবে আসন্ন শান্তি সম্মেলন আরো বিলম্বিত হবে, আবারো পুরোপুরি ভণ্ডুল হয়ে যেতে পারে।

 

সূত্র: সাউথ এশিয়ান মনিটর

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন