সংস্কারের অভাবে অযত্নে অবহেলায় উপকূলের দুটি খাদ্য গুদাম

চকরিয়া প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের চকরিয়ায় উপকূলীয় ইউনিয়ন বদরখালীতে অযত্নে অবহেলায় দীর্ঘদিন ধরে পড়ে রয়েছে এক হাজার টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি খাদ্য গুদাম।

অথচ এ গুদামগুলো চালু করা গেলে উপকূলীয় সাতটি ইউনিয়ন ছাড়াও পার্শ্ববর্তী পেকুয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলার খাদ্য সরবরাহ নির্বিঘ্ন করা যেত। বর্তমানে গুদাম রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আজও সেখানে নিয়োজিত রয়েছেন একাধিক কর্মচারী। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেদিকে নজর না দিয়ে বছরের পর বছর অযত্নে অবহেলায় ফেলে রেখেছে এ খাদ্য গুদাম।

জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা খাদ্য বিভাগ ১৯৬১ সালে প্রায় ২ একর জমি অধিগ্রহণ করে অবিভক্ত চকরিয়া উপজেলার উপকূলীয় বদরখালীতে দুটি খাদ্য গুদাম নির্মাণ করে। নির্মাণের সময় পরিকল্পনায় ছিল চকরিয়ার উপকূলীয় ইউনিয়ন ছাড়াও পার্শ্ববর্তী পেকুয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলায় সরকারি কর্মসূচির খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা। পরিকল্পনা অনুযায়ী এখান থেকে খাদ্য সরবরাহ হয়ে আসছিল।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার সারাদেশে নতুন করে খাদ্য গুদাম নির্মাণের কর্মসূচি হাতে নিয়ে অগ্রসর হলেও চকরিয়ার উপকূলীয় ইউনিয়ন বদরখালীতে এক হাজার টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি খাদ্য গুদাম রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে খাদ্য গুদামগুলো এভাবে পড়ে থাকায় দিন দিন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। সামান্য অর্থ ব্যয়ে সংস্কার করা হলে গুদাম দুটি অনায়াসে ব্যবহার করা যাবে।

সূত্র জানায়, বদরখালীর খাদ্য গুদাম দুটি থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত খাদ্য সরবরাহ অব্যাহত ছিল। পরে খাদ্য গুদামে কোনো ধরনের খাদ্যশস্য মজুদ না করে কিছুদিন সরকারিভাবে ক্রয়কৃত লবণ মজুদ রাখার পর খাদ্য গুদাম দুটির কপালে নেমে আসে অন্ধকার। মূলত এর পর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে গুদাম দুটি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চকরিয়া উপজেলা খাদ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, বদরখালীর খাদ্য গুদাম দুটি দেখেছি। গুদামের বিভিন্ন অংশ বেশ ভালো আছে। মাত্র কয়েক লাখ টাকার বাজেটে গুদাম দুটি ভালোভাবে সংস্কার করলে অন্তত ২০টি বছর পর্যন্ত পুরোপুরি সচল রাখা যাবে। কিন্তু উপজেলা ও জেলা খাদ্য বিভাগ থেকে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নজরে আনা হলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার তাগাদা দেওয়া হলেও ফিরতি কোনো নির্দেশনা বা ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় অযত্নে অবহেলায় পড়ে রয়েছে গুদাম দুটি। তবে গুদাম রক্ষণা-বেক্ষণের জন্য সেখানে একাধিক কর্মচারী নিয়োজিত রয়েছেন। তাঁরা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সরকারি বেতন-ভাতা তুলছেন এবং গুদাম দুটির পাশে থাকা সরকারি কোয়ার্টার ভাড়া দিয়ে অর্থ হাতাচ্ছেন প্রতিমাসে।

বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খাইরুল বশর জানান, খাদ্য গুদাম দুটি সরকারি সম্পদ। দীর্ঘদিন ধরে গুদাম  ব্যবহার না হওয়ায় কারণে বর্তমানে ঝোপঝাড় ও ভুতুড়ে পরিবেশে অযত্নে অবহেলায় খাদ্য গুদাম দুটি পড়ে রয়েছে। কোনো সংস্কার না করায় দিন দিন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। বিষয়টি খাদ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনেকবার বলা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলার খাদ্য বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, বদরখালীর খাদ্য গুদাম দুটি চালু করা হলে চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়াসহ অন্তত ২৫টি ইউনিয়নে সরকারি কর্মসূচির খাদ্য সরবরাহ সহজ হতো। এতে পরিবহন খাতে সরকারি অর্থের ব্যয় কমার পাশাপাশি নানা বিড়ম্বনা থেকে পরিত্রাণ পেত সবাই। যদি সহসা খাদ্য গুদাম দুটি সংস্কার করা না হয় তাহলে ভবিষ্যতে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা ছাড়া কোনো গত্যন্তর থাকবে না।

চকরিয়ার চিরিঙ্গা খাদ্য গুদাম ও বদরখালীর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-এলএসডি) সুনীল দত্তের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এ ব্যাপারে কয়েকদিনের মধ্যে সরেজমিন পরিদর্শনের পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করব।

পরবর্তীতে নির্দেশনা মোতাবেক বদরখালীর খাদ্য গুদাম দুটি নিয়ে কী করা যায় সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন