“সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন সূচকে পেছনে রেখে সরকারের ২০৪১ সালের স্বপ্ন বাস্তবায়ন অসম্ভব”

স্টাফ রিপোর্টার:

‘দেশের পশ্চাদপদ সংখ্যালঘু জাতিগুলোকে শিক্ষাদীক্ষা ও চাকুরীসহ উন্নয়ন সূচকে পেছনে রেখে আগমী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশে রুপান্তরিত করার সরকারের স্বপ্ন কখনোই বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকুরীতে সংরক্ষিত ৫% কোটা পুনর্বহালের দাবীতে আয়োজিত এক মানববন্ধনে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃবৃন্দরা একথা বলেন।

নেতারা বলেন, দেশকে উন্নত, সমৃদ্ধ ও আধুনিক করতে হলে সংখ্যালঘু জাতিগুলোকে সবদিক দিয়ে এগিয়ে নিতে হবে এবং এজন্য দরকার সরকারের বিশেষ পরিকল্পনা।’  অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত ৫% কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত অবিবেচনাপ্রসূত, অযৌক্তিক, বাস্তবতাবিবর্জিত ও সরকারের ভবিষ্যত উন্নয়ন পরিকল্পনার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠীগুলোকে এগিয়ে নেয়ার জন্য কোটা ব্যবস্থা পুনরায় চালু করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।

দেশে অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর জন্য প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারী চাকুরীতে সংরক্ষিত ৫% কোটা পুনর্বহালের দাবিতে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রবিবার (১৪ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

ছাত্রনেতা অর্পন চাকমার সঞ্চালনায় পিসিপি চবি শাখার সংগঠক ত্রিরত্ন চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সোহেল চাকমা, পিসিপি মহানগর শাখার সভাপতি হ্লাচিংমং মারমা, সাধারণ সম্পাদক অমিত চাকমা ও অর্থ সম্পাদক রীতা চাকমা। এছাড়া সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন পালি বিভাগের শিক্ষার্থী চিংমং মারমা এবং ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরাম এর তথ্য প্রচার সম্পাদক আবরণ ত্রিপুরা।

কোটা সংস্কার কমিটির সমালোচনা করে বক্তারা বলেন, মন্ত্রী পরিষদ সচিব ও কোটা সংস্কার কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, তাঁরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছেন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীও অনেক অগ্রসর হয়েছে। অথচ কোটা সংস্কার কমিটি দীর্ঘ পর্যালোচনা করে তাদের প্রতিবেদনে গত ১০ বছরের বিসিএসের তথ্য তুলে ধরেন, যেখানে ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর’ কোটা ৫% এর জায়গায় পূরণ হয়েছে মাত্র ১.১৭%। যদি তাই হয়, তাহলে কীভাবে তিনি (মন্ত্রীপরিষদ সচিব) বলেন যে, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী অনেক অগ্রসর হয়েছে এবং তাদের জন্য আর কোটার দরকার নেই? তার দেয়া পরিসংখ্যানই তার ‘অগ্রসর হওয়ার’ দাবিকে নাকচ করে দেয়।

বক্তারা আরো বলেন, পাহাড় ও সমতলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দের সাথে কোনো প্রকার আলোচনা ব্যতিরেকে তাঁদের জন্য সংরক্ষিত ৫% কোটা বাতিলের অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেয়া হযেছে এবং এ সিদ্ধান্ত ‘সংবিধানের ২৩ক, ১৯, ২৭, ২৮ ও ২৯ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী।’

সরকার কর্তৃক সংরক্ষিত কোটা ব্যবস্থার কল্যাণে পাহাড় ও সমতলের সংখ্যালঘু জাতিগুলো স্বাধীনতার পর থেকে শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে অনেকটা অগ্রসর হয়েছে বলে স্বীকার করে বক্তারা বলেন, ‘কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তাদের এই অগ্রসরতা তাদেরকে দেশের অন্যান্য অগ্রসর জনগোষ্ঠীর সাথে সমকক্ষ অবস্থানে নিয়ে এসেছে, যাতে এই কোটা ব্যবস্থা পুরোপুরি তুলে নেয়ার যৌক্তিকতা প্রতিপন্ন হয়। বরং দেখা যায় কোনো কোনো জাতিগোষ্ঠী শিক্ষা, চাকুরী ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে, কোনো কোনো জাতিগোষ্ঠী বলা যায় কেবল ইদানিং আধুনিক শিক্ষা গ্রহণে উদ্যোগী ও আগ্রহী হয়েছে। তাই সরকারী চাকুরীতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করা হলে তাদের এই অগ্রগতি দারুণভাবে বাধাগ্রস্থ হবে এবং এতে দেশের জনগণের একটি বড় অংশ চিরকাল পেছনে পড়ে থাকবে।’

বক্তারা অবিলম্বে পাহাড় ও সমতলে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য চাকুরি ক্ষেত্রে সংরক্ষিত কোটা পুনর্বহালের জোর দাবী জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন