শ্রীলঙ্কায় মুসলিম নির্যাতনের প্রতিবাদে রাস্তায় বৌদ্ধ ভিক্ষুরা

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

শ্রীলঙ্কায় মুসলিমবিদ্বেষী সহিংসতার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছেন শত শত বৌদ্ধ ভিক্ষু ও আন্দোলনকারীরা। ‘সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ জাতীয় ঐক্য ধ্বংস করে’ দাবি করে দেশটির জাতীয় ভিক্ষু ফ্রন্ট শুক্রবার কলম্বোতে এই মৌন প্রতিবাদ জানান। এমনকি শুক্রবার জুমার নামাজের সময় বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে তারা মুসলিমদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। যেসব স্থানে মসজিদ ধ্বংস হয়েছে সেখানে খোলা মাঠে জুমার নামাজ পড়তে মুসলিমদের সহায়তাও করেন বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হয়ে উঠেছেন দেশের ক্রিকেট তারকাসহ সচেতন মানুষেরা। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।

গত বছর থেকেই শ্রীলঙ্কায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বিরাজ করছিল। সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর উগ্র বৌদ্ধরা হামলা চেষ্টা করছিল। বুধবার এক গ্রেনেড হামলায় একজন নিহত হওয়ার পর জরুরি অবস্থা জারি করে শ্রীলঙ্কা। তিনদিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় ফেসবুক, ভাইবার ও হোয়াটসঅ্যাপ। ৫ মার্চ ২০১৮ সোমবার ক্যান্ডিতে নতুন করে মুসলিম মালিকানাধীন একটি দোকান জ্বালিয়ে দেয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলি বৌদ্ধরা। মূলত ওই অগ্নিসংযোগ থেকেই দাঙ্গার সূত্রপাত। দাঙ্গায় আহত এক বৌদ্ধের মৃত্যুর পাশাপাশি পুড়ে যাওয়া ভবন থেকে এক মুসলিমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এরপর সংঘাত চরম আকার ধারণ করে।

উদারপন্থী বৌদ্ধ নেতারা ও দেশটির ক্রিকেটাররা কান্ডি শহরের ঘটে যাওয়া সহিংসতার নিন্দা জানান। অনেক শ্রীলঙ্কান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জুমার নামাজে বিভিন্ন মসজিদে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিদর্শনের ছবি প্রকাশ করেছেন। শ্রীলঙ্কার সাবেক ক্রিকেটার কুমার সাঙ্গাকারা তার টুইটার অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, কোনও শ্রীলঙ্কান তাদের নৃ-তত্ত্ব বা ধর্মের কারণে বঞ্চিত, হুমকি বা ক্ষতির মুখে পড়তে পারে না। আমরা এক দেশ, এক জাতি। ভালবাসা, বিশ্বাস ও সহনশীলতাই আমাদের সাধারণ নীতি হওয়া উচিত। এখানে বর্ণবাদ ও সহিংসতার কোনও জায়গা নেই। থামাও। সবাই একত্রে ও শক্তিশালী অবস্থান নিন।

আরেক ক্রিকেট তারকা মাহেলা জায়বর্ধানে টুইট বার্তায় বলেন, আমি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাই। বর্ণ, জাতি, ধর্ম নির্বিশেষ যারাই এই ঘটনায় জড়িত অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমি ২৫ বছর ধরে চলা একটি গৃহযুদ্ধের মধ্যে বড় হয়েছি। আমার পরবর্তী প্রজন্ম এর মধ্য দিয়ে যাবে আমি তা চাই না।

এদিকে সহিংসতার শিকার কান্ডি শহরে জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। শুক্রবার বিপুল সংখ্যক সেনা সদস্যের উপস্থিতিতে অনেক দোকান আবারও খোলা হয়েছে। আর পুলিশ জানিয়েছে, এই দাঙ্গার মূল হোতাসহ বৃহস্পতিবার ১৪৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মূল হোতা হিসেবে অমিত বিরাসিংঘি নামে একজনকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। তিনি মুসলিমবিরোধী আন্দোলনকারী হিসেবে পরিচিত। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অনেক উসকানিমূলক পোস্ট দিয়ে আসছেন।

সেনা কমান্ডার মাহিস সেনানায়েকে বলেন, ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন পুলিশ ও শীর্ষ পুলিশ বিশেষ টাস্ক ফোর্স ঘটনার সময় তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিল। যদি অভিযোগ সত্যি হয় তাহলে এটা দুঃখজনক। আমরা আরও সেনা রাস্তায় নামানোর কথা জানিয়েছি। লোকবল বাড়িয়ে এলাকার নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে।

কান্ডি শহরে বন্ধ করে দেওয়া ইন্টারনেট সুবিধা শুক্রবার আবারও চালু করা হয়েছে। তবে ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো শ্রীলঙ্কা জুড়ে এখনও বন্ধ রয়েছে। আর দেশটির পর্যটন বোর্ড বলেছে, চা বাগান ও বৌদ্ধ স্থাপনার জন্য বিখ্যাত কান্ডি শহর এখন বিদেশি পর্যটকদের জন্য নিরাপদ।

প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের ঘটনায় সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীলঙ্কায় মুসলিমবিদ্বেষ বাড়ছিল। জীবন বাঁচাতে কিছু রোহিঙ্গা মুসলিম শ্রীলঙ্কায় আশ্রয় নিলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে দেশটির উগ্রপন্থীরা। গত সেপ্টেম্বরে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের নেতৃত্বে রাজধানী কলম্বোতে জাতিসংঘের একটি সেফ হাউসে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ওপর হামলে পড়ে একদল উচ্ছৃঙ্খল জনতা।

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন