শুক্রবার বান্দরবানে বোমাং রাজপুণ্যাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
পার্বত্যাঞ্চলের প্রাচীনতম লোকজ উৎসব বোমাং রাজপুণ্যাহ ১৯ ডিসেম্বর শুক্রবার বান্দরবান শহরের ঐতিহ্যবাহী রাজার মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এদিন সকাল সাড়ে ৯টায় জেলার রাজবাড়ি মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী সিংহাসনে আরোহণ করে রাজা বার্ষিক খাজনা আদায় শুরু করবেন।

পার্বত্য চট্টগ্রামে তহশিলদার প্রথা নেই। সরকারের পক্ষে রাজারাই বার্ষিক খাজনা আদায় করেন। আদায়কৃত খাজনার ৩৭ শতাংশ রাজা, ৩৭ শতাংশ মৌজা হেডম্যান এবং অবশিষ্ট অংশ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়। সরকারের পক্ষে ভূমিকর আদায় উপলক্ষে বোমাং সার্কেলে প্রতিবছর এ উৎসবের আয়োজন করা হয়। রাঙামাটি জেলার ১৪টি মৌজাসহ বোমাং সার্কেলভুক্ত ১০৯টি মৌজার হেডম্যান-কার্বারিরা রাজপ্রথা অনুসরণ করে এদিনে সার্কেল চিফ বা রাজাকে আনুষ্ঠানিক প্রণাম জানিয়ে কর পরিশোধ করেন।

১৮৭৫ সালে নবম বোমাং রাজা সাক হ্নাইন প্রু রাজকর আদায় উপলক্ষে রাজপুণ্যাহ উৎসবের প্রচলন করেন। রাজ পরিবারের উত্তরসূরিরা বংশ পরম্পরায় এ ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৩৭তম রাজপুণ্যাহ উৎসব।

উৎসব উপলক্ষে ১৭তম বোমাং রাজা বোমাংগ্রী উ চ প্রু ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব প্রজার শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেছেন। এ ছাড়া স্থানীয় রাজবাড়ি মাঠে পাঁচ দিনব্যাপী লোকজ মেলার আয়োজন করা হয়েছে।

উৎসবের সময় জেলা শহরে বোমাং সার্কেলভুক্ত ১১টি উপজাতি জনগোষ্ঠী, বাঙালি এবং দেশ-বিদেশের হাজারো পর্যটক বেড়াতে আসেন। পর্যটক ও অতিথিদের নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক কে এম তারিকুল ইসলাম।

সার্কেল চিফের অফিস প্রধান অরুণ দাশ জানান, বান্দরবান জেলার ৯৫টি মৌজা (পুরো জেলা) এবং রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই ও রাজস্থলী উপজেলার ১৪টি মৌজা বোমাং সার্কেলের অন্তর্ভুক্ত। ইতিমধ্যে মৌজা প্রধান ও কারবারিরা (পাড়া প্রধান) জেলা সদরে এসে পৌঁছেছেন।

প্রসঙ্গত, মোগল আমল থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলটি তিনজন রাজার হাতে শাসিত হয়ে আসছে। পরে ১৯০০ সালে এ-সংক্রান্ত একটি রেগুলেশন জারি করা হয়। পর্যায়ক্রমে ব্রিটিশ সরকার, পাকিস্তান সরকার এবং স্বাধীন বাংলাদেশেও রাজাদের এ অস্তিত্ব অক্ষুণন্ন রয়েছে। এ জন্য রাজা, মৌজা হেডম্যান ও পাড়ার কারবারিরা প্রতিমাসে সরকারি ভাতা পেয়ে থাকেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন