শীলং জুয়া নামক ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা পেলো গুইমারাবাসি

 

গুইমারা  প্রতিনিধি:

অবশেষে গুইমারা থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে  শীলং জুয়া নামক ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা পেতে যাচ্ছে গুইমারাবাসি। কিছু দিন বিলম্ব হলেও চুড়ান্ত পর্যায়ে পদক্ষেপ নিতে কার্পন্ন করেনি গুইমারা থানা অফিসার ইনচার্জ মো. গিয়াসউদ্দিন। গুইমারা উপজেলার সকল পাড়ায় সম্প্রতি ছড়িয়ে  পড়েছিলো শীলংতীর জুয়া নামক ব্যাধিটি।

সমাজের সর্বস্ব লুটে নিয়ে  ধিরে ধিরে নিঃস্ব করে দিচ্ছিলো  প্রত্যেকটি পরিবারকে শীলং  নামক এই মহামারি  জুয়া খেলাটি। বর্তমানে এর প্রভাব পড়েছে সর্বত্র। দেশের সাধারণ মানুষের টাকা হাতিয়ে নেওয়া ভারতীয় দুষ্ট চক্রের একটি বিরাট ফাঁদ। গত ৬ মাস ধরে প্রায় ১৫টি স্পটে ছড়িয়ে পড়েছিলো ভয়ঙ্কর এই ‘শিলং তীর’ নামক জুয়াটি।

এসব জুয়ার আসরে রিকশা চালক, দিনমজুর, শিক্ষার্থী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে জুয়ার নেশায় মত্ত বড় ব্যবসায়ীরাও টাকা ঢালছেন। হাতেগোণা কয়েকজন ছাড়া  জুয়ার আসর থেকে  সিংহভাগই ফিরেছেন নিঃস্ব হয়ে।

সমাজের বেশীর ভাগ লোক যখন এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তখন স্থানীয় সুশীলরা অনেকেই ভাবছিলেন গুইমারা থেকে কি এই ক্যান্সারটি প্রতিরোধের জন্য কোন চিকিৎসকের আভির্ভাব হবে না? কিন্তু গতকাল থেকে শীলং জুয়া বন্ধের লক্ষে গুইমারা থানা অফিসার ইনচার্জ বিশেষ অভিযান চালান।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে গুইমারা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. গিয়াস উদ্দিন নিজেই মাদক আর শীলং নামকএই জুয়ার বিরুদ্ধে অভিযান চালান। পরে বিকালে মাজহারুল নামে একজনকে আটক করতে সক্ষম হন তিনি। তাকে জুয়া আইনে মামলা দিয়ে  খাগড়াছড়ি জেলহাজতে প্রেরন করা হয়।

এবিষয়ে হাফছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান চাইথোয়াই চৌধুরী বলেন, গুইমারায় এই জুয়ার কারণে অনেক  বেকার তরুন যুবকরা লোভে পড়ে চুরিসহ নানান অপকর্মে  জড়িয়ে পড়েছে। স্কুল গামী ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রী থেকে উপজাতী পরিবারের নারীরাও আসক্ত এ শীলংজুয়ায়। আমি এটি বন্ধ বা প্রতিরোধের বিষয়ে আমতলী পাড়া, রামছুবাজারে সামাজিক ভাবে বেশ কয়েকটি মিটিং করেছি। পাড়াবাসী সাড়া দিয়েছি এটি প্রতিরোধের বিষয়ে। তবে গুইমারা থানা অফিসার ইনচার্জের বিশেষ তৎপরতায় গতকাল থেকে মহামারি শীলং জুয়াটি  বন্ধ হয়েছে শুনে অনেক আনন্দিত হয়েছি। অফিসার ইনচার্জ মো. গেয়াস উদ্দিনকে এমন একটি মহৎ কাজের জন্য তিনি অভিনন্দন জানান।

জানাযায়, প্রথমে  বেকারদের যুবক টার্গেট করে ভারতের শিলং থেকে পরিচালিত ডিজিটাল জুয়া “শিলং তীর” খেলাটি গুইমারায় পরিচালিত হয়েছিলো। পরে যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে উপজেলার প্রতিটি সমাজে প্রতিটি পরিবারে। যার কারণে বিষয়টি গুইমারা আইন শৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন সভা সেমিনারে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিলো।

পাড়া কার্বারী সহ স্থানীয় সুশীলদের নিকট জানতে চাইলে তারা বলেন, গুইমারার  যৌথখামার, আমতলী পাড়া, বটতলী, হাজীপাড়া দেওয়ান পাড়া, হাতিমুড়া, রামছুবাজার ডাক্তারটিলার নিচে, নতুন পাড়া, বুধংপাড়া বরইতলী, হাতিমুড়ায় যে সব এজেন্টরা ছিলো বর্তমানে পুলিশের অভিযান  তৎপরতায়  তারা সবাই গাঁ ঢাকা দিয়েছে। এ খেলার মূল হোতা খন্দ মার্মা ও বর্মানে গাঁ ঢাকা দিয়েছেন। তার মোবাইল ফোনে সংযোগ না পাওয়ায় স্থানীয়দের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন  এখন তাকে আর গুইমারায় দেখা যায়না। হয়ত ভারত চলে গেছে সে তবে বর্তমানে খেলাটি বন্ধ রয়েছে  বলেও জানিয়েছেন স্থানীয় অনেকে ।

গুইমারা সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, শীলং তো শুধু জুয়া নয় এটি একটি মানি লন্ডারিং। আমাদের দেশের টাকা বাইরে পাচার হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এ জুয়াটিতে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও আসক্ত হয়েছিলো।  তাই আগামীর সম্ভাবনাময় গুইমারার জন্য খেলাটি সাময়িক বন্ধ নয় স্থায়ী ভাবে বন্ধ হওয়া উচিৎ বলে তিনি মনে করেন।

এবিষয়ে গুইমারা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. গিয়াসউদ্দিন এর নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন,  ‘শিলং তীর’নামক জুয়াটি মূলত  একটি কৌশলগত জুয়া। তথ্য প্রযুক্তিগতভাবে মোবাইল ফোনে দূর্গম পাড়ায় বেকার যুবকরা নিজেরা এজেন্ট হিসেবে খেলে এ খেলাটি।  পুলিশ খবর পেয়ে খেলার স্থানে পৌঁছানোর আগেই তাদের সোর্সের মাধ্যমে খবর পেয়ে যায় তারা। আমরা মূলত ইতিপূর্বে হাতে নাতে ধরতে অনেক চেষ্টা চালিয়েছি। বর্তমানে যারা এখেলার সাথে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনার জন্য চেষ্টা করছি। আশা করছি গুইমারায় এ খেলা আর চালাতে পারবেনা কেও।

তিনি আরও বলেন, গুইমারায় ওসি হিসেবে আমি থাকবো না হয় মাদক আর শীলং জুয়া থাকবে। আমি থাকলে মাদক আর শীলং জুয়া থাকবেনা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন