শীতকালীন আগাম সবজি চাষে নেমেছে প্রান্তিক কৃষক

চকরিয়া প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের চকরিয়ায় আগাম শীতকালীন  সবজি চাষে নেমে পড়েছে প্রান্তিক চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং চলতি বছর তেমন বন্যা না হওয়ায় অন্যান্য বছরের চেয়ে প্রায় একমাস আগেই লক্ষ্যমাত্রার ৮ হাজার হেক্টর মধ্যে ২ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ করে ফেলা হয়েছে রকমারী সবজির। ইতিমধ্যে মাতামুহুরী নদীর দুই তীর ও কোন কোন ইউনিয়নের ক্ষেত থেকে আগাম শীতকালীন সবজি তুলে বাজারে বিক্রিও শুরু করছেন চাষিরা। তবে আগামী একমাসের মধ্যে রকমারী এসব সবজির পুরোদমে দেখা মিলবে বাজারে। এই সময়ের মধ্যে বাকী ৬ হাজার হেক্টর জমিতেও আবাদ সম্পন্ন করার কথা বলছেন কৃষি কর্মকর্তা এবং চাষিরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায়, বড় ধরণের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বন্যার ধকল না পড়ায় উপজেলার অন্তত ১৩টি ইউনিয়ন, পৌরসভা ও মাতামুহুরী নদীর দুই তীরজুড়ে আগাম শীতকালীন সবজি চাষে নামার জন্য চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। এতে প্রায় একমাস আগে থেকেই নানা সহায়তা দিয়ে আগেভাগে মাঠে নামানো হয় মাতামুহুরী নদীর দুই তীরের পৌরসভার বিভিন্ন ব্লক ছাড়াও বিএমচর, কোনাখালী, পূর্ব বড় ভেওলা, সাহারবিল, কৈয়ারবিল, কাকারা, চিরিংগা, সুরাজপুর-মানিকপুর, হারবংসহ অন্তত ১৩টি ইউনিয়নের প্রায় ৮ হাজার কৃষককে।

শীতকালীন আগাম সবজি ঘরে তুলতে প্রান্তিক কৃষকরা বেগুন, মরিচ, টমোটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন জাতের সবজির আবাদ করতে ইতিমধ্যে শুরু করেছে। এনিয়ে প্রান্তিক কৃষক এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন মাঠে। শীতকালীন সবজি ছাড়াও বছরের বার মাসজুড়ে এসব কৃষক মাতামুহুরী নদীর মিঠাপানির আশীর্বাদ এবং তীরের উর্বর মাটির ক্ষেতে রেকর্ড পরিমাণ নানান রকমারী ফসল উৎপাদন করে আসছেন। এবারও শীতকালীন সবজির লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে বাম্পার উৎপাদন হওয়ার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে কৃষক আর্থিকভাবে ব্যাপক সাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি এর সুফল ভোক্তা পর্যায়েও ছড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সরেজমিন মাতামুহুরী নদীর তীর ও কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, মাতামুহুরী নদীর চকরিয়া অংশের দুই তীরের বিস্তীর্ণ এলাকা ও বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামীণ প্রান্তিক কৃষকরা শীতকালীন আগাম সবজি চাষে  মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছে। কৃষি বিভাগের দেওয়া পরামর্শে আগে থেকেই মাঠে নেমে পড়েছে কৃষকরা। অন্যান্য বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে একমাস আগে থেকেই সবজি উৎপানের জন্য কৃষকরা বীজ তলা তৈরি, বীজ বপন, সেচ দেওয়া, আগাছা পরিষ্কার করা, কীটনাশক ও সার প্রয়োগসহ আনুষাঙ্গিক কাজও শেষ করতে দেখা মেলে। এছাড়াও ইতিমধ্যে কোন কোন ক্ষেত থেকে নতুন উৎপাদিত সবজি বাজারেও যাচ্ছে। আগামী দু’একমাসের মধ্যে রকমারী বিভিন্ন সবজির আবাদে ফসলের ক্ষেত সবুজে সমারোহ হয়ে উঠবে।

চকরিয়া পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের আমান্যার চর এলাকার কৃষক মো. গোলাম কাদের বলেন, আগাম শীতকালীন সবজি চাষের জন্য শ্রমজীবী লোক নিয়োগ দিয়ে প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করানো হচ্ছে। চারা রোপন থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত মাতামুহুরী নদীর মিঠাপানির সঙ্গে সারও প্রয়োগ করা হচ্ছে ক্ষেতে। তিনি বলেন, শীতকালীন সবজি হিসেবে বেগুন, মরিচ, টমোটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, পুইঁশাক, ধনিয়া পাতা, মুলার চাষ করা হচ্ছে প্রায় ৬০শতক জমিতে।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহ বলেন, উপজেলায় শীতকালীন সবজি চাষের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে। এবার বন্যা না হওয়ায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় শুষ্ক মৌসুম শুরুর আগেই কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয় শীতকালীন আগাম সবজি চাষে। এতে পৌরসভাসহ মাতামুহুরী তীরের অন্তত ১৩টি ইউনিয়নের প্রায় ৮ হাজার কৃষক সবজি চাষে মাঠে নেমেছেন। ইতিমধ্যে নদীতীরের কোন কোন ক্ষেত থেকে উৎপাদিত আগাম সবজিও বিক্রি শুরু করেছেন।

কৃষিবিদ আতিক উল্লাহ আরো বলেন, বরাবরের মতোই মাতামুহুরী নদীর মিঠাপানির ব্যবহার করে এবারও সবজি উৎপাদনে রেকর্ড গড়বেন এখানকার কৃষকেরা। এজন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তাও দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন