শিলং থেকে আমি সালাহউদ্দিন আহমদ বলছি

দেশবাসিকে খোলা চিঠি

কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজার-০১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে চারবার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপির বর্তমান স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সুদূর শিলং থেকে দেশবাসির উদ্দেশ্যে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। ওই খোলা চিঠির শিরোনাম দেয়া হয়েছে, ‘শিলং থেকে আমি সালাহউদ্দিন আহমদ বলছি’।

আগামী ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে তিনি এই চিঠি দিয়েছেন। এই চিঠিতে তিনি নিজের দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি মনের আকুতি দিয়ে বলেছেন, ‘বড় সাধ জাগে মনে, একবার আপনাদের মাঝে আসি; দেশের মাটি স্পর্শ করি; আলিঙ্গন করি আমার দেশবাসীর সাথে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, আজো প্রতীক্ষার সমাপ্তি হলো না।’

খোলা চিঠিতে সালাহউদ্দিন আহমদ তাঁর নির্বাচনী এলাকা চকরিয়া-পেকুয়ার উদ্দেশ্যেও কথা বলেছেন। তিনি চকরিয়া-পেকুয়ার জনতার উদ্দেশ্যে লিখেন, আমি আপনাদের সন্তান হিসেবে আপনারা আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে বারেবারে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে জয়ী করে জাতীয় সংসদে পাঠিয়েছেন। আপনাদের কাছে আমরা চিরজীবন ভালবাসার ঋণে আবদ্ধ হয়ে আছি এবং থাকবো।

তিনি লিখেন, এলাকার মাটি ও মানুষের সেবায় সারাজীবন কাজ করেছি। এলাকার উন্নয়নের সুপরিকল্পিত মাস্টার প্ল্যানের যা কিছু অসম্পূর্ণ আছে তার সবকিছুই ইনশাআল্লাহ ধানের শীষের সরকার গঠিত হলে বাস্তবায়ন করা হবে।

সালাহউদ্দিন আহমদ চিঠির শেষাংশে চকরিয়া-পেকুয়াবাসিকে লিখেছেন, আপনাদের দোয়া ও ভালবাসায় আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।

তিনি লিখেন, আজকে দেশ ও জাতির এই চরম ক্রান্তিলগ্নে রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের কারণে আমি বিদেশের মাটিতে নির্বাসিত জীবনযাপন করছি। আপনাদের দুয়ারে আমার প্রিয়তমা সহধর্মিনীকে পাঠিয়েছি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে। ধানের শীষকে জাতীয় ঐক্য ও গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে প্রার্থী মনে করে আশা করি আপনাদের পুত্রবধূ এডভোকেট হাসিনা আহমদকে আবারও জয়যুক্ত করবেন।

সরকার বিরোধী লাগাতার গণআন্দোলন চলাকালে সালাহউদ্দিন আহমদ যখন বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন, গ্রেফতার এড়িয়ে যখন ভিডিও বার্তা দিয়ে পুরো দেশবাসিকে উজ্জীবিত করে তুলেছিলেন ঠিক ওই সময়ে সরকারের আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর পরিচয় সাদা পোষাকের একদল অস্ত্রধারি লোক ঢাকার উত্তরার একটি ভবন থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। ওই ঘটনার পর তিনি দীর্ঘ ৬২ দিন ‘গুম’ থাকার পর ভারতের শীতল পাহাড়ি রাজ্য মেঘালয়ের শিলং শহরের গলফ লিংক মাঠে রাতের আঁধারে চোখ বাঁধা অবস্থায় ছেড়ে দেয়া হয়েছিল সালাহউদ্দিন আহমদকে। সেই থেকে আজ প্রায় ৪ বছর ওখানেই তিনি নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। ওই গলফ লিংক মাঠ থেকেই তিনি স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশের কাছে যান। আর শিলং পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে কাগজপত্রবিহীন ভারতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা ঠুকে দেয়। যদিও ভারতের আদালতে চলা সেই মামলায় তিনি বেকসুর খালাস পেয়েছেন। তারপরও তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না।

সেই ঘটনাবহুল সময়ের কথা উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ খোলা চিঠিতে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের গণমানুষের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী, গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নির্জন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্টে বন্দি। স্বৈরাচার বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সংগ্রামী পুরুষ, বাংলার গণমানুষের ভবিষ্যত কান্ডারী জননেতা তারেক রহমান আজো নির্বাসনে। এ সবই একই সূত্রে গাঁথা, বর্তমান অবৈধ অনির্বাচিত আওয়ামী বাকশালী স্বৈরশাসক প্রযোজিত ও পরিচালিত দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রেরই অংশ।’

তিনি আরও লিখেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে বাক, ব্যক্তি ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। নাগরিকের প্রতিবাদের ভাষা কেড়ে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশে মানুষের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার, সাংবিধানিক কোন অধিকার সুরক্ষিত নেই। এভাবেই বর্তমান অনির্বাচিত অবৈধ আওয়ামী সরকার গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করেছে। মানুষের ভোটের অধিকারকে হরণ করেছে। সমগ্র দেশটাই যেন আজ কারাগারে পরিণত হয়েছে। সংক্ষিপ্ত পরিসরে আওয়ামী দুঃশাসন-নির্যাতন-নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরা সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগের ইতিহাস গণতন্ত্র হত্যার ইতিহাস।’

তিনি আগামি ৩০ ডিসেম্বরের ভোট নিয়ে লিখেন, এই নির্বাচন বিলুপ্তপ্রায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নির্বাচন, স্বৈরাচারী আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীকে পরাজিত করে জনগণের ভোটের অধিকার, মানবাধিকার, মৌলিক অধিকারসহ সকল সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার নির্বাচন। কথা বলার অধিকার, প্রতিবাদের অধিকার আদায় ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার নির্বাচন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রকে সুসংহত করার সর্বশেষ সুযোগ এই নির্বাচন।

তাঁর মতে, ‘আমাদের সন্তানদের জন্য সুন্দর নিরাপদ বসবাসযোগ্য গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য এই ভোটযুদ্ধে ব্যালটের মাধ্যমে ধানের শীষকে জয়যুক্ত করা ছাড়া বিকল্প নেই। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, সন্তানহারা মায়ের অশ্রুজলে নৌকা এবার ডুবে যাবে ইনশাহ্ আল্লাহ।’

পাঠকদের জন্য সালাহউদ্দিন আহমদের সেই চিঠি পূর্ণাঙ্গ তুলে ধরা হলো।

শিলং থেকে আমি সালাহউদ্দিন আহমদ বলছি প্রিয় দেশবাসী, আস্সালামু আলাইকুম।

প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইল। অনেক দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে নির্বাসিত জীবনের বেদনা নিয়ে লিখতে বসেছি। বড় সাধ জাগে মনে, একবার আপনাদের মাঝে আসি; দেশের মাটি স্পর্শ করি; আলিঙ্গন করি আমার দেশবাসীর সাথে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, আজো প্রতীক্ষার সমাপ্তি হলো না।

বাংলাদেশের গণমানুষের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী, গণতন্ত্র ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নির্জন কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্টে বন্দি। স্বৈরাচার বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সংগ্রামী পুরুষ, বাংলার গণমানুষের ভবিষ্যত কান্ডারী জননেতা জনাব তারেক রহমান আজো নির্বাসনে। এ সবই একই সূত্রে গাঁথা, বর্তমান অবৈধ অনির্বাচিত আওয়ামী বাকশালী স্বৈরশাসক প্রযোজিত ও পরিচালিত দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্রেরই অংশ।

সারা বাংলায় বাতাসে আজ লাশের গন্ধ ভেসে বেড়ায়। মাঠে-ঘাটে-প্রান্তরে লাশের ছড়াছড়ি। নদীতে মাছের বদলে লাশ ভেসে উঠে। গুম, খুন, অপহরণ, ধর্ষণ যেন দৈনন্দিনের নিয়মিত কর্মে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন নামে ক্রসফায়ারের মাধ্যমে বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষদের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড মহামারি আকার ধারণ করেছে। নাগরিকদের স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সকল সরকারি-বেসরকরি ব্যাংকের অর্থ লুটপাটের মাধ্যমে দেশের আর্থিক খাতকে দেউলিয়া করে দিয়েছে সরকার দলীয় লোকেরা। শেয়ার বাজার লুট করে লক্ষ লক্ষ বিনিয়োগকারীদের নিঃস্ব করেছে এ আওয়ামী লুটেরা বাহিনী। মোটকথা দেশে লুন্ঠনের অর্থনীতি ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন চালু করেছে আওয়ামী লীগ।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হরণ করে আইনের শাসনকে নির্বাসিত করা হয়েছে। যে দেশে প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের নলের মুখে দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয় সে দেশে সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়া অলীক স্বপ্ন মাত্র।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে বাক, ব্যক্তি ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। নাগরিকের প্রতিবাদের ভাষা কেড়ে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশে মানুষের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার, সাংবিধানিক কোন অধিকার সুরক্ষিত নেই। এভাবেই বর্তমান অনির্বাচিত অবৈধ আওয়ামী সরকার গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করেছে। মানুষের ভোটের অধিকারকে হরণ করেছে। সমগ্র দেশটাই যেন আজ কারাগারে পরিণত হয়েছে। সংক্ষিপ্ত পরিসরে আওয়ামী দুঃশাসন-নির্যাতন-নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরা সম্ভব নয়। আওয়ামী লীগের ইতিহাস গণতন্ত্র হত্যার ইতিহাস।

এমনি একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সংসদের নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচন বিলুপ্তপ্রায় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নির্বাচন, স্বৈরাচারী আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীকে পরাজিত করে জনগণের ভোটের অধিকার, মানবাধিকার, মৌলিক অধিকারসহ সকল সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার নির্বাচন। কথা বলার অধিকার, প্রতিবাদের অধিকার আদায় ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষার নির্বাচন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রকে সুসংহত করার সর্বশেষ সুযোগ এই নির্বাচন।

সুতরাং, আসুন, দেশরক্ষার স্বার্থে, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার স্বার্থে, আইনের শাসন ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যের প্রতীক ধানের শীষকে জয়যুক্ত করি। অবৈধ আওয়ামী স্বৈরচারের গুম, খুন, অপহরণ-নির্যাতন-নিপীড়ন-হামলা-মামলার কবল থেকে দেশের জনগণকে রক্ষার জন্য ধানের শীষের প্রার্থীকে জয়যুক্ত করি। আমাদের সন্তানদের জন্য সুন্দর নিরাপদ বসবাসযোগ্য গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য এই ভোটযুদ্ধে ব্যালটের মাধ্যমে ধানের শীষকে জয়যুক্ত করা ছাড়া বিকল্প নেই। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, সন্তানহারা মায়ের অশ্রুজলে নৌকা এবার ডুবে যাবে ইনশাহ্ আল্লাহ।

প্রাণপ্রিয় চকরিয়া ও পেকুয়ার সম্মানিত জনগণ, আমি আপনাদের সন্তান হিসেবে আপনারা আমাকে এবং আমার স্ত্রীকে বারেবারে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে জয়যুক্ত করে জাতীয় সংসদে প্রেরণ করেছেন। আপনাদের কাছে আমরা চিরজীবন ভালবাসার ঋণে আবদ্ধ আছি এবং থাকব। এলাকার মাটি ও মানুষের সেবায় সারাজীবন কাজ করেছি। এলাকার উন্নয়নের সুপরিকল্পিত মাস্টার প্ল্যানের যা কিছু অসম্পূর্ণ আছে তার সবকিছুই ইনশাআল্লাহ ধানের শীষের সরকার গঠিত হলে বাস্তবায়ন করা হবে।

আপনাদের দোয়া ও ভালবাসায় আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আজকে দেশ ও জাতির এই চরম ক্রান্তিলগ্নে রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের কারণে আমি বিদেশের মাটিতে নির্বাসিত জীবনযাপন করছি। আপনাদের দুয়ারে আমার প্রিয়তমা সহধর্মিনীকে প্রেরণ করেছি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে। ধানের শীষকে জাতীয় ঐক্য ও গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে প্রার্থী মনে করে আশা করি আপনাদের পুত্রবধূ এডভোকেট হাসিনা আহমদকে জয়যুক্ত করবেন।

আল্লাহ্ হাফেজ, আল্লাহ্ আমাদের সহায় হোন।

বিনীত-

সালাহউদ্দিন আহমদ, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, বিএনপি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন