শিক্ষকতা পেয়ে পানছড়ির চাঁদনী সাঁওতালের মুখে চাঁদের হাসি

 

নিজস্ব প্রতিবেদক, পানছড়ি:

এই প্রথম শিক্ষকতা পেশায় পানছড়ি সাঁওতাল সম্প্রদায় থেকে কৃতকার্য হয়েছে চাঁদনী সাঁওতাল। সাঁওতাল সম্প্রদায়ের বিশেষ কোটা থেকে সে নির্বাচত হয়। তার রোল ছিল ১৪৪৩।

চাঁদনী পানছড়ি সাঁওতালপাড়া গ্রামের মৃত সুনীল সাঁওতাল ও সুমি সাঁওতালের মেয়ে। জানা যায়, ছোট বেলায় বাবাকে হারিয়ে মাকে নিয়ে আশ্রয় নেয় নানা মুনসী সাঁওতালের বাড়িতে। খাগড়াছড়ি মধুপুরের শিশু সদনে থেকেই তার লেখাপড়ার জীবন শুরু।

খাগড়াছড়ি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১১ সালের এসএসসি ও খাগড়াছড়ি সরকারী কলেজ থেকে ২০১৩ সালে এইচএসসি পাশ করে মানবিক বিভাগ থেকে। বর্তমানে সে খাগড়াছড়ি সরকারী কলেজে ইতিহাসে অনার্স ৩য় বর্ষে অধ্যয়নরত।

নানার সহযোগিতা, টিউশনি ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী প্রজেক্টে খন্ডকালীন চাকুরী করেই তার পড়ালেখা ও খরচাদি চলত। এরি মাঝে এবারের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতকার্য হয়ে তার মুখে ফোটে চাঁদের হাঁসি। চাঁদনী সাঁওতালের সাথে কথা হলে সে জানায়, যখন সবাই বলতে লাগল আমি কৃতকার্য হয়েছি তখনও বিশ্বাস হচ্ছিল না। তাছাড়া ভাবিও নাই যে আমার চাকুরী হবে। ফলাফল বিবরণীতে নিজ চোখে দেখে বিশ্বাস করি।

চাকুরীতে দরখাস্ত করার ব্যাপারে পানছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিজয় কুমার দেব ও খাগড়াছড়ি সরকারী কলেজের বিএ শেষ বর্ষের ছাত্র মানিক সাঁওতাল আমাকে উৎসাহ যুগিয়েছে। মূলত তাদের উৎসাহে আমি দ্বিগুন উৎসাহিত হয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় ভালো করেই চুড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছি। বিশেষ করে স্থানীয় সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরীকে সে বার বার কৃতজ্ঞতা জানায়।

এদিকে সাঁওতাল উন্নয়ন সংসদের সভাপতি মিন্টু সাঁওতাল জানায়, চাঁদনীদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই করুণ। অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া করে একটা সরকারী চাকুরী পেয়েছে তার জন্য আমরা খুবই খুশী। সাঁওতাল উন্নয়ন সংসদ গরীব শিক্ষার্থীদের সব সময় সহায়তা দেয় চাঁদনীকেও দিয়েছিল।

চাঁদনী এ পার্বত্যনিউজকে জানায়, এখন যোগদান পত্র হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে আছি। সে শিক্ষকতার পাশাপাশি লেখাপড়া অব্যাহত রেখে মাষ্টার্স শেষ করে বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কৃতকার্য হওয়ার ব্যাপারেও আশা প্রকাশ করছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন