শান্তিচুক্তির ১৯ বছরে কী পেয়েছে জাতি?

peace-treety

মো. মনিরুজ্জামান মনির ::

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত হয়েছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি, তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকারের পক্ষে সংসদের চীফ হুইফ আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এবং পাহাড়ের দুই যুগ যাবত সশস্ত্র রাষ্ট্রদ্রোহী সন্ত্রাসযুদ্ধে লিপ্ত তথাকথিত শান্তিবাহিনী বা জনসংহতি সমিতির চেয়ারম্যান বাবু সন্তু লারমা ঐ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। আজ থেকে ১৯ বছর আগে স্বাক্ষরিত ঐ চুক্তিকে সরকার ও তার অন্ধ সমর্থকরা মিডিয়ার কাছে অভিহিত করেন পার্বত্য শান্তিচুক্তি নামে। অন্যদিকে এই চুক্তির কারণে যারা সাংবিধানিক অধিকার ও মানবাধিকার নিয়ে আশঙ্কিত ছিলেন তারা একে বলেন- পার্বত্য কালোচুক্তি হিসেবে। এছাড়াও, সন্তুলারমা বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে বলে বেড়াচ্ছেন- তাদের সাথে নাকি হাসিনা সরকারের একটি মৌখিক সমঝোতাও হয়েছিল যা অলিখিত চুক্তি বলে খ্যাত। যদিও চাকমা মন্ত্রী কল্পরঞ্জনসহ আরো অনেকেই সন্তুলারমার দাবীকৃত অলিখিত চুক্তির কথায় বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন চুক্তি সবসময়ই লিখিত হতে হবে, মৌখিক বা অলিখিত চুক্তি বলে আইনের দৃষ্টিতে কোনচুক্তি করা বা দাবী করা হাস্যকর উদ্ভট দাবী মাত্র। আসল কথা হল- বিগত ১৯ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামের এক ধরনের উপজাতীয় নেতা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন, সাধারণ বাঙালি ও উপজাতি জনগোষ্ঠী শান্তি চুক্তির বিন্দুমাত্র সুফল পান নাই। শান্তি চুক্তির ষোলআনা লাভের গুড় কতিপয় মতলববাজ উপজাতীয় পিপড়ার পেটে গিয়ে জমা হয়েছে।

শান্তিচুক্তি বা কালোচুক্তি বা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যে নামেই একে ডাকা হোক না কেন, এর সুফল ভোগ করে যাচ্ছে সন্তুলারমা ও তার দোসরেরা। পাহাড়ে-জঙ্গলে অমানবিক জীবন-যাপনরত হতদরিদ্র উপজাতীয় নারী-পুরুষের ভাগ্যেও জুটেনি এই চুক্তির কোন সুফল। অন্যদিকে পার্বত্যবাসী বাঙালিরা প্রথম থেকেই আতংকিত ছিলেন চুক্তির কারণে নিজেদের অস্তিত্ব হারোনোর ভয়ে, যা বিগত ১৯ বছরে ধাপে ধাপে ভুক্তভোগী সচেতন বাঙালি নাগরিকেরা টের পেতে শুরু করেছেন। এর সর্বশেষ আলামত ফুটে উঠেছে গত আগস্ট ২০১৬ বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় এবং জাতীয় সংসদে পাশকৃত বহুল বিতর্কিত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন (সংশোধনী) ২০১৬ এর মাধ্যমে। মূলতঃ বিচারপতি খাদেমুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত ভূমি কমিশন কার্যকর হবার পরও পাহাড়ের বাঙালিরা একে মন্দের ভালো হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু সন্তুলারমার চাপের মুখে বিচারপতি খাদেমকে কাজ করতে না দেয়াতে পাহাড়ের বাঙালিরা আবারও ভূমি, ভোট ও ভাতের জন্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামে মাঠে নেমেছেন। বর্তমান বিতর্কিত বাঙালি বিদ্বেষী একতরফা উপজাতি নেতা বেষ্টিত পার্বত্য ভূমি কমিশনকে বাস্তবায়ন করা হলে বাঙালিদের অস্বিত্ব হারাবে যার জন্য বাঙালি জনগোষ্টি একে পারমানবিক মারনাস্ত্র হিসেবে আখায়িত করে যাচ্ছেন।

মহাজোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পূর্বকার মেয়াদে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর এই চুক্তি স্বাক্ষরের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল প্রধানতঃ রাষ্ট্রদ্রোহী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদেরকে নিরস্ত্র করা এবং পাহাড়ে শান্তি ও উন্নয়নের ফল্গুধারা ছড়িয়ে দেয়া। এজন্যই, তড়িঘড়ি করে সরকার পক্ষ অনেকটা ছাড় দিয়েই সই করেছিলেন এই চুক্তি। যদিও তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি শান্তিচুক্তির তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং একে প্রতিহত করতে পার্বত্য চট্টগ্রাম অভিমুখে ঐতিহাসিক লংমার্চও করা হয়েছিল। যা দেশে বিদেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা বহুল প্রচারে সাহায্য করেছে। কিন্তুদুঃখজনক হলো- বিএনপি ক্ষমতায় এসেও পার্বত্য কালোচুক্তি বাতিল করে নাই কিংবা দেশ বিরোধী বৈষ্যম্বমূলক তথাকথিত শান্তিচুক্তির অসাংবিধানিক সাংঘর্ষিক কোন ধারা/উপধারাও সংশোধন করে নাই। বরং ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা বিএনপি সরকারের মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূইয়া সচিবালয়ে এক বৈঠকে বলেছিলেন “আমরা শান্তিচুক্তির পূর্ন বাস্তবায়ন করব, এই চুক্তি বাতিলের কোন প্রশ্নই আসে না। যারা শান্তিচুক্তি বাতিলের কথা বলবে তাদের সাথে বিএনপি সরকার কোনরূপ আলোচনা বসতে সম্মত নয়। তাহলে কেন তৎকালীন বিএনপি পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাতিলের জন্য লংমার্চ করলেন? কেন সভা-সমিতি ও সমাবেশের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংগঠনকে চুক্তি বাতিলের অঙ্গীকার করেছিলেন? ক্ষমতায় এসে দিবি তারা শান্তিচুক্তি বাতিলের ওয়াদা ভঙ্গ করলেন। তাই বুঝাযাচ্ছে যাদের কাছে ক্ষমতা বড়, দেশবাসির কাছে ওয়াদা বড় নয়। তারাই সরকারে যায়। কাজেই পার্বত্য অঞ্চলের অভাগা বাঙালিরা যেদিকে তাকায়, সেদিকেই সাগর শুকায়। যেই জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি থাকাকালে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করে পাহাড়ের বাঙালিদের রক্ষা করেছিলেন, তারই উত্তর সূরীরা সরকারে এসে পাহাড়ের নিরিহ, অভূক্ত, হাড্ডিসার বাঙালিদের দুঃখ-কষ্টের কথা বেমালুম ভুলে গেলেন।

পার্বত্য শান্তিচুক্তির উদ্দেশ্য কী ছিল?
পাহাড়ের তিনটি জেলায় তথা- রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে শান্তিশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখা, উপজাতি বাঙালি জনগোষ্ঠির সহাবস্থান নির্বিঘ্ন করার পাশাপাশি তাদের জীবন মানোন্নয়ন ও সশস্ত্র রাষ্ট্রদ্রোহী খুনী শান্তিবাহিনীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার ও সন্তু লারমার মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। চুক্তি পরবর্তী সময়ের সরকার শান্তিচুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সরকারের চরিত্র একই রকম হিসেবে প্রমানিত হয়েছে। গত ১৯ বছরে চুক্তির ১০০ ভাগ পূরণ না হওয়াতে সন্তুলারমারা দেশে বিদেশে বহু অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও সরকার বলছেন- শান্তিচুক্তির ১০০ ভাগ বাস্তবায়নে সরকার দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। সরকারের পক্ষ থেকেও চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সন্তুু লারমার পক্ষের অসহযোগিতার অভিযোগ আনা হচ্ছে। সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবং রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বিশিষ্ট উপজাতীয় নেতা দীপংকর তালুকদার বহুবার বলেছেন- পার্বত্যাঞ্চলে সন্ত্রাস, সশস্ত্র বন্দুকযুদ্ধ, চাঁদাবাজী, খুন, মুক্তিপন ইত্যাদি যারা করছে তারা শান্তিচুক্তি লঙ্ঘন করে চলেছে। এদের জন্যই শান্তিচুক্তি বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এই অপশক্তির নামই হচ্ছে জনসংহতি সমিতি এবং ইউপিডিএফ। এরা নতুন নতুন আবদার করে দফায় দফায় সরকারের উপর অন্যায় চাপ সৃষ্টি করে দেশবিরোধী প্রচারনা চালায় এবং চুক্তির ১০০ ভাগ বাস্তবায়নে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে নানারূপ প্রশ্ন তুলে।

বাস্তবতা হল- শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের পর তিন পার্বত্য জেলায় উপজাতিয় বাঙালি জনগোষ্টির জীবন মান উন্নয়নে সরকার ও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশী-বিদেশী এনজিও, ইউএনডিপি ইত্যাদি মিলে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করেছেন। এসবের শতকরা ৯০ ভাগই উপজাতি জনগোষ্ঠির কল্যাণে, বাকী ১০ ভাগ মাত্র বাঙালিদের উন্নয়নে ব্যয় হলেও তা নিয়ে উপজাতিয় নেতাদের সমালোচনার কমতি নেই। হায়রে ভজনালয়, তোমার মিনারে চড়িয়া ভন্ড গাহে স্বার্থের জয়!

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সরকারের আমলে শান্তিচুক্তির বাস্তবায়নের অনুকূলে যে সকল সরকারী পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হয়েছে তার কিছু দৃষ্টান্ত পেশ করা হলঃ

১। ১৫ জুলাই ১৯৯৮ইং বাংলাদেশ সরকার উপজাতীয়দের কল্যাণে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করেন। এর ১০০ভাগ সুবিধা ভোগ করছে উপজাতীয় নেতারা। নববিক্রম ত্রীপুরার মত একজন বিতর্কিত ব্যক্তি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ একাধিক ক্ষমতার অধিকারী।

২। সরকার জনসংহতি সমিতি বা খুনি শান্তিবাহিনীর সাবেক কমান্ডার সন্তুলারমাকে চেয়ারম্যান করে ২৫ সদস্যের অন্তবর্তীকালীন পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ এবং ৩ পার্বত্য জেলায় ৫ সদস্যের পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠন করে দিয়েছেন। যা একধরনের স্বায়ত্ব শাসনের নমুনা মাত্র।

৩। মন্ত্রণালয়ের অনেকগুলো বিষয় হস্তান্তর করে ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। তিনটি র্পাবত্য জেলা পরিষদ গঠন এবং সরকারের নিয়ন্ত্রনাধীন ৩৩টি বিষয়ের মধ্যে রাঙামাটিতে ২৩, খাগড়াছড়িতে ২২ এবং বান্দরবানে ২১টি বিষয় হস্থান্তর করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আরো অনেক বিষয় ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

৪। উপজাতীয় শরনার্থী পুনর্বাসন করা হয়েছে। এ জন্য টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। ১২ হাজার ২২৩টি উপজাতীয় চাকমা পরিবারকে লাখ লাখ টাকার ত্রাণ সামগ্রী টিন, সয়াবিন তেল, নাপ্পি, শুটকি ইত্যাদি সাহায্য দেয়া হয়েছে।

৫। আত্মসমর্পনকারী শান্তিবাহিনীর সকল সদস্যকেই লোভনীয় ভালো ভালো পদে চাকুরী দিয়ে সরকার পুনর্বাসন করেছেন। তার মধ্যে ৭১৫ জন (১০ জন এসআই ও ৭০৫ জন অন্যান্য পদবীর পুলিশ) সদস্যকে পুলিশ বাহিনীতে চাকুরী দেয়া হয়েছে। অবশ্য এর মধ্যে কারো কারো বিরোধে অস্ত্র ও গুলি পাচারের অভিযোগসহ রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতার কথা প্রচার মাধ্যমে চলে এসেছে।

৬। নিরাপত্তা বাহিনীর শতশত ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং তাদের অর্থবল ও অস্ত্রবল সহ জনবল কমিয়ে দেয়া হয়েছে। যদিও পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের সন্ত্রাস ও বন্দুকযুদ্ধ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৯ সালের আগে ২০০টি ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে। (৭৮টি সেনা ক্যাম্প, ৪০টি বিডিআর, ২৭টি আর্ম পুলিশ, ৪২টি জেলা পুলিশ/রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স, ১৩টি আনসার ক্যাম্প)। ইতিমধ্যে আরো অনেক ক্যাম্প প্রত্যাহার হয়েছে। অথচ সন্তুবাবুরা বলে বেড়াচ্ছেন “পাহাড়ে নাকি এখনও সেনাবাহিনীর অপারেশন উত্তরন চলছে। উপজাতীয়রা নাকি বন্দি অবস্থায় আছে। কি আশ্চর্য রসিকতা।

৭। গত ০৬/০৯/২০০৯ইং কাপ্তাই অবস্থিত ৬৫ পদাতিক ব্রিগেড সদর দপ্তর এবং ৩টি পদাতিক ব্যাটেলিয়ানসহ আরো ৩৮টি অস্থায়ী নিরাপত্তা বাহিনী ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশ সরকারকে কাপ্তাই উপজেলার সিতাপাহাড়ের তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ আহরনের জন্য সন্তু লারমা বাধা দিয়ে যাচ্ছেন। উপজাতীয় নেতাদের অনুমতি ছাড়া বাংলাদেশ সরকার পাহাড়ে কোন তেল, গ্যাস নিয়ে গবেষণা করতে পারবেন না বলে বাপেক্সকে সেখান থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এই কি শান্তিচুক্তির বাস্তবায়নের পক্ষে সন্তুলারমার ভূমিকা?

৮। পার্বত্য জেলা পরিষদ নামকরণ করা হয়েছে, যা অতীতে ছিল পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ।

৯। স্যারেন্ডার্ড শান্তিবাহিনীর ১ হাজার ৯৮৯ জনকে নগদ জনপতি ৫০,০০০/- টাকা দেয়া হয়েছে।

১০। সরকারী চাকুরীর ক্ষেত্রে উপজাতি কোটা বাড়ানো হয়েছে। অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে।

১১। স্কুল, কলেজ, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ ইত্যাদিতে ভর্তির জন্য উপজাতি কোটায় পাহাড়ের চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ইত্যাদি ছাত্র-ছাত্রীরা ১০০ভাগ ভর্তির সুযোগ করে নিচ্ছে। (উদাহরণ- রাঙামাটি জেলা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়)। তাছাড়া দেশের অন্যান্য সকল উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও চাকমারা বেশি বেশি ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে।

১২। শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের জন্য বিগত ২৫/০৫/২০০৯ইং জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি প্রচুর ক্ষমতাশালী এবং তারা প্রধানমন্ত্রীকে বিভিন্ন সময়ে আপডেট তথ্যাদি প্রদান করে যাচ্ছেন।

১৩। পার্বত্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়েছে। একাধিক সংসদ সদস্যরা পাহাড়ের জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন।

১৪। উপজাতীয় তথা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান বিল পাশ করা হয়েছে (০৫/০৪/২০১০ইং)।

১৫। এছাড়াও অহরহর পার্বত্যবাসী উপজাতী জনগণের কল্যাণে নানারূপ সুযোগ সুবিধা ইত্যাদি বিলিয়ে চলেছেন। অবশ্য যারা জেএসএস বা ইউপিডিএফ করে না তাদেরকে উপজাতি হলেও কোনরূপ সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যেই বাঙালিদের সাথে সম্পর্ক রাখার কারণে সাজেকের উপজাতীয় নেতা এল থাঙ্গা পাংখুকে হত্যা করা হয়েছে।

১৬। উপজাতীয় নেতা চাবাইমগ, উরিমহন ত্রিপুরা, কিনামহন চাকমা, হেড ম্যান বংকিম দেওয়ান, শান্তিময় দেওয়ান, চুনিলাল চাকমা, মেজর পিয়র, সুবিনয় চাকমা, অঞ্জনা চাকমা ইত্যাদি হত্যার জন্য খুনি শান্তি বাহিনী দায়ী। বাংলাদেশকে ভালবাসার অপরাধে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে।

১৭। পাহাড়ের জনপ্রিয় জননেতা লংগদু উপজেলার চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ সরকার, মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক ও যুব ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল রশিদসহ প্রায় ৩৫ হাজার বাঙালিকে হত্যা করেছে সন্তু লারমা বাহিনী। অথচ এতসব হত্যার পরেও সন্তু লারমাদের মধ্যে ন্যূনতম অনুশোচনা নেই। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। তারা বলে জীব হত্যা মহাপাপ, অহিংসা পরম ধর্ম। কিন্তু সন্তু লারমারা বাঙালি নামক জীবগুলোকে হত্যা করে এবং পাহাড়ে হাজার হাজার বাঙালির কুড়ে ঘরে আগুন দিয়ে শিশু বৃদ্ধদের হত্যা করেছে। পলায়নরত নরনারীদের উপর চালিয়েছে ব্রাশফায়ার। বাঙালি বোনের স্তন কেটে চেংগি ব্রীজে ঝুলিয়ে রেখেছে। বাঘাইছড়ির পাকুয়াখালীতে এক সাথে ৩৫ জন বাঙালি কাঠুরিয়াকে হত্যা করে ঘৃণ্যতম পশুসরদার হিসেবে ইতিহাসে সন্তু লারমার নাম রেকড হয়েছে। এর পরও শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের কথা বলে কোন মুখে? তার তো বিচার হওয়ার কথা ছিল।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সফল আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম। এটি বাংলাদেশেরই এক ও অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। দেশের এক দশমাংশ ভূমি তথা ৫০৯৩ বর্গমাইল এলাকার মালিক আমরা সবাই। প্রথাগত ভূমি অধিকার কিংবা ব্রিটিশ হিল ট্রাক্টস ম্যানুয়েল এক্ট-১৯০০ এর মূলা ঝুলিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। পাহাড়ের সকল সম্পদের মালিক বাংলাদেশ সরকার। কোন উপজাতীয় নেতা-নেত্রী পাহাড়ের ভূমি একক মালিক নয়। আমরা চাই পাহাড়ে শান্তি পায়ড়া পাখা মেলে বেড়াক। অথচ সন্তু বাবুরা পদে পদে শান্তি স্থাপনে বাধা দিয়ে যাচ্ছে আমাদের তেল গ্যাস সম্পদ, আমাদের সেনা ক্যাম্প সহ বড় ধরনের কোন স্থাপনা তৈরি করা হলেই উপজাতীয় নেতারা বাধ সাধেন। কেন বাংলাদেশ সরকারকে উপজাতীয় নেতাদের সাথে পরামর্শ করে তিন পার্বত্য জেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে, সন্তু বাবুরা দয়া করে এর জবাব দিবেন কি? বাংলাদেশ সরকার বড় নাকি আপনাদের ক্ষমতা বড়? ‘জুম্মল্যান্ড’ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ছেড়ে বাংলাদেশের মূলস্রোতে চলে আসার জন্য আবারও আমরা আবেদন জানাচ্ছি।

লেখক : সমঅধিকার আন্দোলনের একাংশের মহাসচিব ও বীর মুক্তিযোদ্ধা

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন