লোকসানে জর্জরিত পাহাড়ের সাদা স্বর্ণ রাবার শিল্প

Pic Ukhiya 16-02-2017 copy

উখিয়া প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্তে পাহাড় জুড়ে গড়ে ওঠা সম্ভবনাময় রাবার বাগানে রাবাব উৎপাদন বাড়লেও বাজারে দাম অর্ধেকে নেমে আসায় কোটি টাকার বেশি লোকসান গুনতে হচ্ছে শিল্প উদ্যোক্তাদের। উখিয়া, ঘুমধুম ও তুমব্রু মৌজার বিস্তৃর্ণ পাহাড়ি এলাকায় দেশে সাদা স্বর্ণ হিসেবে খ্যাত রাবার শিল্প এখন বন্ধের উপক্রম হয়েছে। শুধু উখিয়া বা ঘুমধুমে নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা রাবার বাগানের মালিকগণ পুঁজি সংকটে পড়ে হুমকীর মুখে পড়েছে রাবার উৎপাদন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দেশে যে পরিমান রাবার উৎপাদন হয় তা দিয়ে দেশের চাহিদার ৬০ ভাগ মেটানো সম্ভব হলেও বিদেশ থেকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি রাবার আমদানি করা হচ্ছে। অন্যদিকে রাবার আমদানিতে নামমাত্র আমদানি শুল্ক বসানো এবং কৃষিপণ্য হলেও রাবার বেচার সময় শতকরা ১৫ টাকা ভ্যাট ও ৪ টাকা আয়কর চাপিয়ে দেওয়ার কারণই দেশের রাবার শিল্পের বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ।  ভিয়েতনাম দেশের বর্তমান বাজার দরের চেয়ে কম দামে রাবার এদেশে রপ্তানি হচ্ছে।

রাবার বাগানের সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, কাঁচা রাবারের স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষে বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের সহযোগিতায় গ্লাসকো রাবার এন্ড কোম্পানি নামে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ১৯৮০-৮১ সালে সরকারের নিকট ৪০ বছরের জন্য লিজ নিয়ে উখিয়ার কুতুপালং টিভি রিলে কেন্দ্রের পার্শ্বে ২৫একর জায়গায় রাবার বাগান সৃজন করে। ওই বাগানের ম্যানেজার রবিউল ইসলাম বলেন, মালয়েশিয়া থেকে বীজ এনে এ বাগানটি গড়ে তোলা হয়।

পরবর্তীতে প্রায় ঘুমধুম ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২০/২৫টি রাবার বাগান গড়ে উঠেছে। তিনি এসময় জানান,  গত ২ বছর ধরে রাবারে লাভের চেয়ে লোকসান বেশি হচ্ছে। প্রতিকেজি রাবার উৎপাদনে ১৮৮ টাকা খরচ পড়লেও বর্তমানে বাজার দর পাওয়া যাচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা। এ অবস্থা চলতে থাকায় গুনতে হচ্ছে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি। শুধু এ বাগানই নয়,বর্তমানে কোটি কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়ে দেশের সরকারী-বেসরকারী রাবার বাগান। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বেসরকারী বাগানগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে।

সরেজমিনে রাবার বাগান ঘুরে দেখা গেছে, বাগানের হাজার হাজার গাছে ঝুলছে ছোট ছোট মাটির পাত্র। সেই পাত্রে কাটা অংশ দিয়ে গাছ বেয়ে বেয়ে পড়ছে ধবধবে সাদা দুধের মতো রাবারের কষ। পাত্রে জমা হওয়া রাবারের কষ সংগ্রহ করে শ্রমিকেরা ভারে করে নিয়ে যাচ্ছে কারখানায়।

খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, মূলত সারা বছরই রাবার উৎপাদন চলে। তবে অক্টোবর থেকে জানুয়ারি, সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ মাস রাবার উৎপাদনের ভরা মৌসুম। মৌসুমে প্রতিদিন উখিয়া ও ঘুমধুমে রাবার বাগান থেকে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার কেজি কষ আহরণ করা হয়। শীতে কষ আহরণ বেশি হয়, আবার বর্ষায় উৎপাদন কমে আসে। বাগান থেকে সাদা কষ সংগ্রহের পর ৭দিনের মধ্যে তা প্রক্রিয়াজাত করে শুকনো রাবারে পরিণত করা হয়।

এ ব্যাপারে রাবার বাগানে উপ-ব্যবস্থাপক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নামমাত্র আমদানি শুল্ক বসানোর কারণে আমদানিকারকেরা বিদেশ থেকে চাহিদার তুলনায় বেশি রাবার আমদানি করছে। ফলে দেশীয় রাবারের চাহিদা কমে যাচ্ছে। তাই ১৯৬০ সাল থেকে টিকে থাকা এশিল্পকে বাঁচাতে আমদানি শুল্ক বাড়ানো এবং রাবারের উপর ভ্যাট ও আয়কর প্রত্যাহার করার দাবি জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন