লামা-আলীকদমে অবৈধ ইটভাটা, প্রশাসনের দাবি অভিযান চলছে
নিজস্ব প্রতিনিধি:
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন ‘নিয়ন্ত্রন’ আইন মতে ৫০টি বসতবাড়ি আছে এমন জায়গায় ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। এছাড়াও বনায়ন এলাকার ৩ কি.মি. লোকালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ৩ কি.মি. দূরত্ব, কাঠ না পোড়ানো, জমির টপ সয়েল বা পাহাড় কাঁটায় সম্পূর্ণ নিষেধ থাকলেও আইনগুলো কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ বান্দরবানের লামা উপজেলায়।
ওই উপজেলার ফাইতং, লামা পৌরসভা, ফাসিঁয়াখালী, গজালিয়া, সরই এলাকায় বেশ কয়েক বছর ধরে অর্ধ শতাধিক ইট ভাটায় আইন বিরোধী কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে। যার কারণে পাহাড় বেষ্টিত এলাকায় ইটভাটার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি কাঠ পুড়ানো ও ধোঁয়ায় বিপর্যস্ত হচ্ছে পরিবেশ।
সরেজমিনে লামা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বসতবাড়ি ও স্কুল ঘেঁষে ইটভাটায় আগুন জ্বলে। শত শত ট্রাক মাটি ও ইট বোঝাই করার কারণে ধুলা এলাকা ছেয়ে যায়। এসবের মধ্যে চলছে তাদের পড়াশোনাসহ খেলাধুলা।
সরেজমিনে লামা উপজেলার ঘুরে দেখা গেছে, ইট ভাটার কারণে ফাইতং এলাকার সবুজ পরিবেশ লালচে হয়ে গেছে। ইটের ধুলোয় ঘাস থেকে শুরু করে কোন গাছের পাতাই সবুজ নেই। ইট পোড়ানোর জন্য ইতোপূর্বে এলাকার পাহাড় ন্যাঁড়া করে ফেলা হয়েছে। চোখে পড়েছে বড়-ছোট অসংখ্য গাছের গুড়ি।
পরিবেশ ধ্বংসের এসব সচিত্র প্রতিবেদন বিভিন্ন সময় মিডিয়ায় প্রচার হলেও প্রশাসন অদৃশ্য কারণে কোন সাড়া দিচ্ছে না। যার কারণে মিডিয়ার ভূমিকা ওই এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। ইটভাটা সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের সাথে কথা বলতে চাইলেও ক্ষোভের কারণে কেউ মিডিয়ায় বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
তবে, ইটভাটার এক ম্যানেজার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাংবাদিকরা সব সময় আসে, ছবি তুলে চলে যায়। কিন্তু সবাইকে সন্তুষ্ট রাখায় ইটভাটা মালিকদের তেমন সমস্যায় পড়তে হয় না।
জানা গেছে, জেলার লামায় ২৭টি ও আলীকদমে তিনটি ইটভাটার কোনটারই বৈধ কাগজ নেই। তারপরও সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে আবার অনেক ক্ষেত্রে চোখ ফাঁখি দিয়ে বছরের পর বছর চলছে পরিবেশ ধ্বংসের সব আয়োজন। প্রতি বছর উপজেলা পরিবেশ ও বন কমিটির সভায় ব্রিক ফিল্ডগুলোতে কাঠ পোড়ানোর বিরুদ্ধে প্রস্তাব পাশ হয়। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা বাস্তবায়ন হয় না।
বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রাজস্ব শাখার দেয়া তথ্য মতে লামা উপজেলায় সরকার অনুমোদিত কোন ইট ভাটা নেই।
এদিকে এই বিষয়ে যোাগাযোগ করা হলে পরিবেশ অধিদফতরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মো. মোয়াজ্জেম হোসানই জানান, বান্দরবান জেলায় সরকারের অনুমোদনপ্রাপ্ত কোন ইটভাটা নেই। পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষ থেকে ইটভাটা স্থাপনের জন্য কোন ছাড়পত্র প্রদান করা হয় নাই।
এ ব্যাপারে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর-এ জান্নাত রুমি বলেন, ইটভাটায় নিয়মিত অভিযান চলছে। অনেক ইটভাটায় জরিমানা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিবেশের জন্য হুমকি এমন কর্মকান্ড বন্ধে অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে।
অপরদিকে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজিমুল হায়দার বলেন, আলীকদমে কোন ইটভাটার অনুমোদন নেই। শীঘ্রই অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।