লামায় গাছের সাথে বেঁধে কলেজ ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় ধুম্রজাল সৃষ্টি
লামা প্রতিনিধি:
লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের ফাদুর ছড়ায় ভূমি বিরোধকে কেন্দ্র করে কলেজ ছাত্রী জোহরা বেগম কাজল (১৮) কে গাছের সাথে বেঁধে ও তার পিতা মাতাকে বেঁধে নির্যাতন করার ঘটনায় আহত ৩ জনের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। আহত ছফুরা খাতুন (৫০) এর নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জোহরা বেগম কাজল ও তার পিতা আব্দুল করিম (৫৫) চিকিৎসাধীন আছে।
গত মঙ্গলবার ফাইতং ইউনিয়নের ফাদুর ছড়ায় ভূমি বিরোধকে কেন্দ্র করে কলেজ ছাত্রী ও তার পিতামাতাকে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন করার ঘটনায় মো. আলী হোসেন বাদী হয়ে ৯ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে। মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে জোহরা বেগম ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই ঘটনায় ২ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হলে আব্দুর রশিদ বাদশা (৪২) কে জামিন প্রদান করা হয়েছে। অপর গ্রেফতারকৃত আসামি মো. ফারুক (৪৮) কে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
মামলার এজাহারের বর্ণনা মোতাবেক জানা গেছে, ফাইতং মৌজায় আর/৩২৪নং হোল্ডিং এর ভূমি নিয়ে মো. ফারুক(৪৮) ও আব্দুল করিমগংদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে ভূমি বিরোধ চলে আসছে। ভূমি বিরোধের ঘটনায় বান্দরবান বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা জজ আদালতে অপর মামলা নং- ১৯/২০১৮ চলমান রয়েছে। ঘটনার দিন মো. ফারুক গং বিরোধীয় জায়গায় গাছের চারা রোপন করে দখলের চেষ্টা করলে আব্দুল করিমগং বাধা দেয়।
আহত কলেজ ছাত্রী জোহরা বেগম কাজল জানান, প্রতিপক্ষ মো. ফারুক, মো. সাইফুল ইসলাম ও মো. বারেকগং এর নেতৃত্বে বহিরাগত কিছু লোকজন বিরোধীয় জায়গা দখল করতে এসে তার মা এবং বাবাকে রশি দিয়ে বেধে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। বাধা প্রদান করলে তারা তাকে রশি দিয়ে গাছের সাথে বেধে লাথি এবং কিল ঘুষি মারে। চুলের মুঠি ধরে টানা হেচড়া করে পরনের কাপড় টানা হেচড়া করে শ্লীলতা হানি ঘটায়।
জোহরা আরো জানান, তার পিতামাতাকে সীমাহীন নির্যাতন করা হয়েছে। পরবর্তীতে লোকজন এসে তাদেরকে উদ্ধার করে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। আসামীরা তাদের নিকট থেকে ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার স্বর্ণ ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয় মর্মে জানান। ফাইতং ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. হেলাল জানান, বহিরাগত লোকজন এসে জোহরা বেগমদের উপর নির্যাতন করেছে।
আসামি মো. ফারুকের স্ত্রী কহিনুর বেগম জানান, ভিডিও এবং ছবির ঘটনা সত্য নয়। ভিডিওটি ভালো করে যাচাই করলে প্রকৃত ঘটনা বের হবে। ফাইতং পুলিশ ফাঁড়ির আইসি মো. হানিফ জানান, ভূমি বিরোধকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মাঝে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। তবে রশি দিয়ে কলেজ ছাত্রী ও তার পিতামাতাকে নির্যাতন করার দাবি সঠিক বলে মনে হচ্ছে না। ইতোমধ্যে ভাইরাল হওয়া ভিডিও ও ছবিতে নির্যাতনের শিকারদের দেখা যাচ্ছে। কিন্তু যারা নির্যাতন করেছে তাদেরকে দেখা যাচ্ছে না। সুতারাং ভিডিওটি প্রশ্নবিদ্ধ। ঘটনাটি মেকিং বলে মনে করছেন পুলিশ ফাঁড়ির আইসি। চকরিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সুবন জানান, ভর্তিকৃত জোহরা বেগমের শরীরে নারী এবং শিশু নির্যাতনের আওতায় পড়ে এমন কোন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
লামা থানার অফিসার ইনচার্জ অপ্পেলা রাজু নাহা জানান, ঘটনাস্থলের আশেপাশে কোন লোকজনের বসবাস নেই। মামলার বর্ণনামতে আসামীদের মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। সুতারাং মোবাইলে ধারণ কারা করেছে। ধারণকৃত ভিডিওতে আসামীদের ছবি নেই কেন? পুরো বিষয়টি নিয়ে মামলার তদন্ত করা হচ্ছে।