লামায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিরোধীয় ভূমির কয়েক হাজার গাছ কর্তন

লামা প্রতিনিধি:

বান্দরবান পার্বত্য জেলার লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নে লামা উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের জারিকৃত ১৪৪ ধারার নিষেধাজ্ঞার আদেশ লঙ্ঘন করে কয়েক হাজার মূল্যবান গাছ কর্তন করে পাচার করার অভিযোগ উঠেছে।

বন বিভাগ বিতর্কিত ও বিরোধীয় এই ভূমির বাগান হতে ১০ হাজার ঘনফুট মূল্যবান গাছ কর্তন করার জন্য জোত পারমিট মূলে ফ্রি লাইসেন্স এর কার্যাদেশ প্রদান করেছে।

লামা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, ইস্যুকৃত জোত পারমিটের সকল কার্যক্রম মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার জন্য পত্র জারি করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জারিন তাসনোভা সাবিহা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরিত অভিযোগে জানান, লামা উপজেলার ফাইতং মৌজায় হিল ট্যাক্স ফাইবার কোম্পানী লিজ বন্দোবস্তি মোকদ্দমা নং- ৬৬৫/৭৭-৭৮ মূলে হটি ৩০ এর হোল্ডিং এ ১ শত একর জায়গা সরকার থেকে ৪০ বছরের জন্য বন্দোবস্তি প্রাপ্ত হন। অভিযোগকারীর পিতা আতিকুল মাওলা সহকারে ৬ জন এই লিজ প্রাপ্ত ভূমির যৌথ অংশীদার। আতিকুল মাওলা মৃত্যুবরণ করলে তাঁর অংশের ১৬.৬৬ একর জায়গা হইতে ১০ একর ভূমি ভূয়া কাগজপত্র তৈরী করে এস.এম জাহাঙ্গীর আলম নামক জনৈক ব্যক্তি তাঁর নামে রেকর্ড সংশোধন করেছে মর্মে অভিযোগ করা হয়েছে।

লিজ ভূমির যৌথ অংশীদার আতিকুল মাওলার স্ত্রী উম্মে আম্মারা জানান, বান্দরবান জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় বন কর্মকর্তার দপ্তরে তথ্য গোপন করে এস.এম জাহাঙ্গীর আলম হটি/৩০ এর ৬৬.৬৬ একর জায়গার ভূমির বাগানের গাছ কর্তন করার জন্য জোত পারমিট মূলে ফ্রি লাইসেন্স ৪ (ডলু)/২০১৮-১৯ লাভ করেছে। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মেহগনি, গামার, করই, জাম, আকাশমনি ও ম্যানজিয়াম জাতের ১০ হাজার ৫০ ঘনফুটের ৮১০ টি গাছ কর্তন করার জন্য কার্যাদেশ প্রদান করেছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গাছ কাটার উপর নিষেধাজ্ঞা চাইলে আদালত স্থিতাবস্থার আদেশ দেন।

উম্মে আম্মারা ডিআইজি-সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করে জানান, গাছ কাটার উপর নিষেধাজ্ঞা জারির আদেশের পর এস.এম জাহাঙ্গীর আলম এর লোকজন বিরোধীয় ভূমি হতে কয়েক হাজার মূল্যবান গাছ কর্তন করে ট্রাক যোগে পাচার করে নিয়ে যায়। গাছ কর্তন ও পাচারে বাধা প্রদান করলে এস.এম জাহাঙ্গীর আলমের লোকজন হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। পাচারকৃত কাঠের মূল্য অর্ধ কোটি টাকার উপরে হবে বলে তিনি অভিযোগে জানান।

ডলুছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা তোসাদ্দেক হোসেন জানান, জোত ভূমি হইতে গাছ কর্তন করার জন্য এস.এম জাহাঙ্গীর আলমের লোকজনকে বলা হয়েছে। তবে গাছ কাটার সাথে জড়িতগণ ছোট জাতের কিছু গাছ কর্তন করে ইট ভাটায় দিয়েছে। জোত পারমিটের ডি ফরম ও চলাচল পাশ ইস্যু করা হয় নি।

ফাইতং পুলিশ ফাঁড়ির আইসি পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ হানিফ জানান, বাগানের গাছ না কাটার জন্য বলা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে এস. এম জাহাঙ্গীর আলম জানান, তার বিরুদ্ধে উম্মে আম্মারার আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা।

লামা থানার অফিসার ইনচার্জ অপ্পেলা রাজু নাহা জানান, জোত ভূমিতে যাতে করে আইন শৃঙ্খলা বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য ফাইতং পুলিশ ফাঁড়ির আইসি কে বলা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ-জান্নাত রুমি জানান, ভূমি বিরোধের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতে যেতে হবে। আইন শৃঙ্খলা ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য লামা থানাকে নিদের্শ দেওয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন