লক্ষীছড়িতে ইউপিডিএফ’র চাঁদাবাজি থেকে রেহাই পাচ্ছে না স্বজাতির নিরীহ পাহাড়ীরাও
বিশেষ প্রতিবেদক, লক্ষীছড়ি থেকে ফিরে:
খাগড়াছড়ি জেলার দূর্গম উপজেলা লক্ষীছড়ি চাঁদাবাজদের স্বর্গরাজ্য।ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) নামে সংগঠন লক্ষীছড়িতে চাঁদাবাজীর মহোৎসব চালাচ্ছে। এ সংগঠনটি অত্যাচার থেকে রেহাই পাচ্ছে না স্ব জাতির নিরীহ পাহাড়ীরাও। কিন্তু প্রাণ ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না,কিংবা আইনের আশ্রয় নিচ্ছে না। দূর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থা কারণে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানও ব্যাহত হচ্ছে। আবার এসব চাঁদাবাজ-সন্ত্রাসীরা ধরা পড়লেও আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, লক্ষীছড়িতে পরিবহন, স্থানীয় হাটবাজার, উন্নয়ন প্রকল্প থেকে শুরু করে জুমচাষ, কৃষি পণ্য ও গবাদি পশু পালনসহ কোন কিছুই চাঁদার আওতাভূক্ত হচ্ছে না। স্ব-জাতির নিরীহ পাহাড়ীরাও রেহাই পাচ্ছেন না চাঁদাবাজদের কাছ থেকে। মাঝে মাঝে বিভিন্ন গ্রামে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ঢুকে লোকজনকে ঘর বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
লক্ষীছড়ি সদর ইউনিয়নে লক্ষী চাকমা, রক্তিম চাকমা ও সুইসোনা চাকমা। বার্মাছড়ি ইউনিয়নে রতন বসু চাকমা, তোরেন চাকমা ও অজয় চাকমা এবং দুল্যাতলীতে আপ্রুশী মার্মা ও রেশমী চাকমা ইউপিডিএফ’র সাংগঠনিক ও চাঁদা আদায়কারীদের নিয়ন্ত্রণ করে বলে জানিয়েছে সূত্রগুলো।
সূত্রমতে, লক্ষীছড়ির যতীন্দ্র কার্বারী পাড়া, মরা চেঙ্গী, শিলাছড়ি। সিন্দুকছড়ি সড়কের বটতলী, চাহ্লাতলী। মানিকছড়ি-লক্ষীছড়ি সড়কের মংহ্লাপাড়া ও লক্ষীছড়ি-ফটিকছড়ি সড়কের বাইনাছড়া নামক স্থানে ইউপিডিএফ’র সন্ত্রাসীরা প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজি করছে।
সূত্র আরও জানায়, ইউপিডিএফসহ আঞ্চলিক সংগঠনগুলো সাংগঠনিক কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য নেতাকর্মীদের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বদলি করে থাকে। যার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে এসব সন্ত্রাসীদের সহজে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়ে উঠে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাহাড়ী জানান, জুম চাষ করতে হলে তাদের অগ্রীম চাঁদা দিয়ে রাখতে হয়। এছাড়া কলা, বাঁশ-গাছ, শাক সব্জী, হাঁস-মুরগী, গরু ছাগল বাজারে আনতে গেলে পথে তাদের চাঁদা দিতে হয়। ইউপিডিএফ’র সদস্যরা পথের মধ্যে চৌকি(চেক পোষ্ট) বসিয়ে চাঁদা আদায় করে।
আরেক বাঁশ-কাঠ ব্যবসায়ী জানায়, লক্ষীছড়ির ধুরুং খাল ব্যবহার করতে হলে বাঁশ প্রতি ২টাকা, কাঠ প্রতি ফুট ১৫ টাকা করে দিতে হয় ইউপিডিএফ’র চাঁদাবাজদের।
একজন পরিবহন শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে জানান, লক্ষীছড়িতে চলাচল করা যানবাহন, ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলগুলো বাৎসরিক চাঁদা দিয়ে চলাচল করে। চাঁদা না দিলে চালক-শ্রমিকদের মারধর ও অপহরণ করা হয়।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে লক্ষীছড়ি বাজারের এক পাহাড়ি ব্যবসায়ী বলেন, লক্ষীছড়িতে বাঙালিদের চেয়ে পাহাড়িরাই কষ্টে দিন পার করছে। কারণ অধিকাংশ পাহাড়ি গ্রামের আশাপাশে কোন নিরাপত্তা ক্যাম্প নেই। সে সুযোগে তারা নিরীহ পাহাড়িদের বেশি অত্যাচার চালাচ্ছে। ইউপিডিএফ’র সন্ত্রাসীরা পাহাড়িদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের নামে উল্টো অধিকার হরণ করছে।
লক্ষীছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মোহাম্মদ আরিফ ইকবাল জানান, তার কাছে এ ধরনের কোন অভিযোগ নেই।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইউপিডিএফ’র লক্ষীছড়ি উপজেলার শাখার সংগঠক রত্তিম চাকমার সাথে চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।