লংগদুতে স্থানীয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে- বাঞ্ছিতা চাকমা
নিজস্ব প্রতিনিধি:
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য বাঞ্ছিতা চাকমা বলছেন, রাঙামাটির লংগদুতে স্থানীয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে চারটি গ্রামে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রায় ২০০ বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় থানার ভারপ্রাপ্ত র্কমর্কতাসহ (ওসি) অন্য দায়িত্বপ্রাপ্তরা সেখানে উপস্থিত থাকলেও তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
রোববার দ্য ডেইলি স্টার ভবনে কোয়ালশিন অব ইনডিজিনাস পিপলস অর্গানাইজেশন অন ইউপিআর এর আয়োজনে ‘মানবাধিকারের সার্বজনীন সময়ভিত্তিক পরিবীক্ষণ (ইউপিআর) ও বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার মানুষের অধিকার’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বাঞ্ছিতা চাকমা একথা বলেন।৩০ টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত এই ইউপিআর কোয়ালিশন।
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি ও কাপেং ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন রবীন্দ্রনাথ সরেন এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, ব্লাস্টের এডভাইজার এডভোকেট তাজুল ইসলাম প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কোয়ালিশনের সদস্য সংগঠন আদিবাসী ক্লাস্টার ডেভেলপমেন্ট ফোরাম এর সভাপতি অজয় এ মৃ। আলোচনার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউপিআর কোয়ালিশনের অন্যতম সদস্য সংগঠন কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর বাবলু চাকমা।
বাঞ্ছিতা আরো চাকমা বলেন, আমি রাঙামাটি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ থাকা অবস্থায় দেখেছি, আমাদের নিরাপত্তার জন্য যে পুলিশ দেওয়া হয়েছিলো, তাদের উপস্থিতিতেই পাহাড়িদের ওপর হামলা করা হতো। বার বার ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার উপর হামলা হয়েছে কিন্তু এর বিচার হয়নি। যার ফলে অপরাধীরা ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বার মানুষের ওপর বারবার হামলার সুযোগ পায়।
সম্প্রতি লংগদুতে পাহাড়ীদের ঘর-বাড়িতে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ঘটনা সম্পর্কে তিনি আরো বলেন, আমি গিয়েছিলাম ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়ীদের দেখতে। খুবই ভয়াবহ অবস্থা। এখনো পর্যন্ত কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এটা নিঃসন্দেহে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানবাধিকার লঙ্ঘন। আগামীতে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নে সকলকে একযোগে কাজ করে যেতে হবে। সরকারকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।
অতি চালাকের গলায় দড়ি উল্লেখ করে বাংলাদেশে আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি নিয়ে সরকার পাহাড়িদের সঙ্গে চালাকি করে যাচ্ছে। সরকার আসলে ক্ষুদ্র জাতিসত্বার মানুষদের মূর্খ মনে করে।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালে বাংলাদেশের ইউপিআরের চক্রে ৩৯ জন প্রতিনিধি বাংলাদেশ থেকে অংশ নেয়। এসময় সরকারের প্রতিনিধিরা পার্বত্য চুক্তির ৪৮টি ধারা বাস্তবায়নের কথা বলেন। আসলে কি তাই? এটা বুঝতে আমাদের বাকি নেই যে তারা চালাকি করে উত্তর দেয়। তারা আমাদের বোকা মনে করে। কারণ তাদের হাতে ক্ষমতা। তবে অতি চালাকের বিপদ আসন্ন।
তিনি আরো বলেন, যেকোন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিচার্য হবে সেখানকার সংখ্যালঘুরা কেমন আছে তার উপর। নিঃসন্দেহে বলা যায়, বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও সংখ্যালঘুরা ভালো নেই। তবে আমাদের হাল ছাড়লে হবে না। অনবরত কথা বলে যেতে হবে, দাবি জানাতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, রাষ্ট্র শুধু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নয় এদেশের সাধারণ গরীব মানুষদের প্রতি যে অন্যায়গুলো করে যাচ্ছে তার বিরুদ্ধে আমরা প্রতিনিয়ত কথা বললেও সরকার কর্ণপাত করছেনা। সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভূমির রক্ষাকবচ হিসেবে প্রজাস্বত্ত্ব আইন ১৯৫০ এর ৯৭ ধারা কোন কাজে আসছেনা। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা নিরবে দেশান্তরিত হচ্ছে। এটা সরকারের জন্যও নিশ্চয় লজ্জার হবে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানবাধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে ইউপিআরের মতো যেসব ব্যবস্থাগুলো আছে সেগুলোতে অনবরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধিসহ দেশীয় পরিসরে বড় ধরনের লড়াই সংগ্রাম করতে হবে।
আলোচনা সভার মূল প্রবন্ধে বাবলু চাকমা বলেন, আগামী বছরের মে মাসে ইউপিআরে বাংলাদেশের তৃতীয় চক্রের রিভিউ অনুষ্ঠিত হবে। এই চক্রে সরকারের পক্ষ থেকে আমরা শুধু মানবাধিকার উন্নীতকরণের অঙ্গীকার শুনতে চাইনা। চাই অঙ্গীকারগুলোর বাস্তবায়ন। এছাড়াও আলোচনায় তিনি বেশকিছু সুপারিশ দেন: সময়সূচি ভিত্তিক রোডম্যাপ ঘোষনা পূর্বক পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়ন করা; আইএলও কনভেনশন নং ১৬৯ অনুস্বাক্ষর করা; সমতলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ভূমি সুরক্ষায় স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠন করা ও পৃথক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা; ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারীর প্রতি সকল ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধ করা ও সহিংসতার শিকার নারী-শিশুদের আইনী সহায়তা প্রদান করা; ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সুরক্ষায় আদিবাসী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা।
এছাড়াও মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন, থোওায়ং মারমা; ইউজিন নকরেক; এন্ড্রু সলোমার; নমিতা চাকমা; সূভাষ চন্দ্র হেমব্রম; মাহবুবুল হক; পার্থ শংকর সাহা; সোহেল হাজং; হরেন্দ্রনাথ সিং প্রমুখ।