Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

রোহিঙ্গা হত্যায় মিয়ানমার সেনাদের নতুন কৌশল

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

নেপিদ, ২০ অক্টোবর- উখিয়ার আনজুমানপাড়া সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে তিন দিন আটক থাকা প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়। সকাল সাড়ে ৯টায় বিজিবি বাধা সরিয়ে নিলে এসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢোকেন। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে এসব রোহিঙ্গাকে উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী ক্যাম্পে নেয়া হয়।

আরাকানের রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসার স্রোতে এবার শামিল হচ্ছেন সেখানের বিত্তশালীরাও। তারা এত দিন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও স্থানীয় প্রভাবশালী মগদের অর্থ দিয়ে নিজ বাড়িতে থাকতে পারলেও এখন চলে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ সেনাসদস্যরা এখন রোহিঙ্গাদের বাড়ি থেকে বের হতে দিচ্ছে না। অবরুদ্ধ করে রাখছে। বের হলেই মেরে ফেলছে। দীর্ঘ দিন বাড়িতে অবরুদ্ধ থেকে অনেকেই না খেয়ে মারা যাচ্ছেন। এ কারণে নতুন করে বাংলাদেশে রোহিঙ্গার ঢল নেমেছে।

সীমান্ত খুলে দেয়ার আগে ওই এলাকায় অস্ত্র ও ইয়াবার খোঁজে ব্যাপক তল্লাশি চালায় বিজিবি। তবে তেমন কিছু মেলেনি বলে জানিয়েছেন ৩৪ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর আশিকুর রহমান। আনজুমানপাড়া সীমান্তে সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, এত লোকের থাকার ব্যবস্থা করতে কয়েক দিন সময় তো লাগবেই। তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে কোথায় থাকবেন সেটি ঠিক করতেই কয়েক দিন সময় লেগেছে।

দীর্ঘ পথ হেঁটে পাড়ি দেয়ায় কান্তি, অসুস্থতা ও ক্ষুধা সব মিলিয়ে সব রোহিঙ্গাই বিধ্বস্ত। অনেকে হাঁটতেই পারছিলেন না। এ সময় অনেক রোহিঙ্গাকে স্বেচ্ছাসেবক ও বিজিবি সদস্যরা কোলে করে আনজুমানপাড়ায় ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে আসেন। আনজুমানপাড়া প্রবেশ পয়েন্টে বেশ কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসাকেন্দ্রের ব্যবস্থা করেছে জাতিসঙ্ঘ উদ্বাস্তুবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর, সীমান্তবিহীন চিকিৎসকদলসহ কয়েকটি বিদেশী সংস্থা। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর রোহিঙ্গাদের যানবাহনে করে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে উখিয়ার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে। প্রাপ্ত তথ্য মতে, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে নিরুৎসাহিত করার জন্য সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করে বিজিবি। একইভাবে রোহিঙ্গাদের সাথে ইয়াবা ও অস্ত্র আসছে এমন খবরও চাউর হওয়াতে আরো বেশি সতর্ক হয় বিজিবি। এ জন্য তিন দিন ধরে আনজুমানপাড়া সীমান্ত এলাকায় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও বিজিবি সদস্যরা ব্যাপক তল্লাশি চালান; কিন্তু কারো কাছে এমন কিছু পাওয়া যায়নি বলে বিজিবি সূত্র জানায়।

সূত্র মতে, রাখাইনে এখন পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত। এমন অবস্থায় রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের কোনো কারণ নেই। তা ছাড়া বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারাই ফোন করে অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের ডেকে আনছেন, এমন তথ্যের ভিত্তিতে সীমান্ত পার হওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করে বিজিবি। এতে আনজুমানপাড়া সীমান্তে আটকা পড়েন প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা। সেখানে রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে তারা তিন দিন আটক থাকেন। পরে তাদেরকে বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ দেয় বিজিবি।

আনজুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের সময় অনেক রোহিঙ্গার সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। বর্তমানে রাখাইনের পরিস্থিতি শান্ত থাকার পরও কেন তারা বাংলাদেশে চলে আসছেন জানতে চাইলে বুচিডং কর্নারিকোয়াপাড়ার হোসেন আহমদ, ডাব্বুইনচারার অলি আহমদ, আমিনা খাতুন, ধলাবানু, আজিজুর রহমানসহ অনেক রোহিঙ্গা বলেন, আরাকানে এখনো যারা আছেন তারা সবাই অবরুদ্ধ। কাউকে ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছে না সেনারা। খাবার ফুরিয়ে যাওয়ায় অনেকে অনাহারে মারা যাচ্ছেন। কিছু কেনার জন্য বাড়ি থেকে বের হলেই তাদের হত্যা করা হচ্ছে। মিয়ানমার সেনারা চায় সবাই না খেয়ে মরুক। এমন অবস্থা থেকে বাঁচতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা একজোট হয়ে বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য হচ্ছেন।

তারা জানান, বাংলাদেশে আসার ক্ষেত্রে মানুষ বেশি থাকলে মিয়ানমার সেনারা আক্রমণ করে না; কিন্তু অল্পসংখ্যক লোক হলে প্রত্যেককেই হত্যা করছে তারা। কোনো কোনো এলাকায় রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়ার জন্য এখনো মাইকিং করছে সেনারা। যেসব সম্পদশালী রোহিঙ্গা সেনাদের অর্থ দিয়ে রাখাইনে থাকতে চেয়েছিলেন তারাও এখন চলে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। এমন একজন সচ্ছল রোহিঙ্গা আবদুল গফুর। বুচিডং টাউনশিপে তার বাড়ি, দোকান, জমিজমা সবই ছিল। এত দিন তিনি নিজ বাড়িতে থাকার জন্য লাখ লাখ কিয়াত দিয়েছেন মিয়ানমার সেনাদের; কিন্তু তাকেও শেষ পর্যন্ত দেশ ছাড়তে হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে প্রবেশের সময় আবদুল গফুর জানান, সেনাবাহিনী, পুলিশ ও স্থানীয় মতাবানদের টাকা দিয়ে এত দিন তিনি নিজ এলাকায় থেকে গিয়েছিলেন। তবে এখন টাকা দিয়েও লাভ হচ্ছে না। দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। সব কিছু ফেলে তিনি পরিবারের ছয সদস্য নিয়ে আট দিন হেঁটে বাংলাদেশে এসেছেন। বুচিডংয়ে পাকা বাড়ি রয়েছে ব্যবসায়ী মোহাম্মদ হাশেমের। পাঁচ ভাই ও তাদের যৌথ পরিবার। সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতন চলাকালে হাশেম তার পরিবারের সব সদস্যকে দিয়েছিলেন বাংলাদেশে। বিশেষ করে তার ভাইয়ের মেয়েদের সেনাবাহিনীর অত্যাচার থেকে বাঁচাতে তাদেরকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিয়ে তিনি সেখানে ছিলেন এত দিন। টাকাও দিয়েছেন সেনাবাহিনীর চাহিদা মতো; কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনিও চলে এসেছেন বৃহিস্পতিবার।

তিনি বলেন, ব্যবসা ও সহায় সম্পদ দেখাশুনার জন্য থেকেই গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম পরিস্থিতি পাল্টাবে; কিন্তু পরিস্থিতি এখন এমন যে, সেখানে থাকলে সবাইকে না খেয়ে মরতে হবে। মিয়ানমার সেনারা বলছে তোমরা না খেয়ে মরে যাও। রাখাইনের রাচিডং এলাকার বিত্তশালী পরিবারের সদস্য আজহারুল হক পরিবারের আটজন সদস্য নিয়ে চলে এসেছেন। তিনি বলেন, রাচিডং টাউনে আমাদের মোবাইল সেটের ব্যবসা। পরিস্থিতি ঠিক হলে ফেরত যেতে পারব কি না এটা ভেবে ব্যবসা ছেড়ে এত দিন বাংলাদেশে আসিনি। সেনাবাহিনীকে নিয়মিত টাকা দিয়েছি; কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। গত পনের দিন চলেছে খেয়ে না খেয়ে। এভাবে না খেয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। কোথাও বের হতে দিচ্ছেনা ওরা। তাই চলে আসতে বাধ্য হলাম। তিনি বলেন, খবর পেয়েছি আমরা চলে আসার পর দোকানে হামলা হয়েছে। দোকানে আগুন দেয়নি; কিন্তু সব মোবাইল সেট লুট করেছে।

তিনি জানান, আরাকানের অনেক বিত্তশালী পরিবারই এখন বাংলাদেশের পথে রয়েছে। জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে তাদের আসতে সময় লেগেছে আট দিন। এভাবে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার অপক্ষোয় আরো অনেক বিত্তশালী রয়েছেন জানান আজহারুল হক।

এ দিকে আরাকান রোহিঙ্গা মুসলিমশূন্য করতে এবার স্থানীয় মগ ও রাখাইনরা বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছে। আগামী রোববার (২২ অক্টোবর) আরাকান রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের জন্য লিফলেট বিতরণ ও ব্যানার-ফেস্টুন তৈরি করছে রাখাইন সমর্থিত রাজনৈতিক দলের নেতারা। রোহিঙ্গাবিরোধী এই কর্মসূচিতে বৌদ্ধ ভিুদের সশস্ত্র সংগঠন নাইন সিক্স নাইনের নেতৃত্বদানকারী বৌদ্ধ ভিু অশিন উইরাথু প্রত্যক্ষ সমর্থন এবং মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী পরোক্ষ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। বার্মিজ ভাষায় লেখা লিফলেটে সরকারকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে আরো কঠোরতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছে রাখাইন সংগঠনগুলো। বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের বাঙালি আখ্যা দিয়ে তাদের ফেরত না আনার জন্য দাবি করছে রাখাইনরা। একই সাথে রাজ্যের সব রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ার দাবিও লেখা আছে লিফলেটে।

রোহিঙ্গাদের বাঙালি সন্ত্রাসী বর্ণনা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সব রাখাইন ও অন্যান্য সম্প্রদায়কে ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজক সংগঠনগুলো। জাতিসঙ্ঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ওআইসিকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা না বলতেও হুঁশিয়ার করে দেন রাখাইন নেতারা।

এর আগে আরাকান রাজ্যে চলমান সহিংসতায় উসকানি দিয়েছিলেন বৌদ্ধ ভিু অশিন উইরাথু। গত ১৩ অক্টোবর হঠাৎ আরাকানের মংডু সফরে এসে স্থানীয় বৌদ্ধ ও মগদের সাথে বৈঠক করেন তিনি। এসব বৈঠকে চলমান সেনা অভিযানে বৌদ্ধ ও মগদের সমর্থন কামনা করে রোহিঙ্গাবিরোধী বিক্ষোভ সমাবেশ করার কর্মসূচির নির্দেশ দেন।

এখন পালিয়ে বাংলাদেশে বেশি আসছেন মংডু শহরের কাছাকাছি গ্রামের রোহিঙ্গারা। মংডু ও মংডুর আশপাশের গ্রাম থেকে শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং ও টেকনাফ কাছে হলেও দীর্ঘ নৌপথ পাড়ি দিয়ে উখিয়া উপজেলার পালংখালী আনজুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করার কারণ জানতে চাইলে মংডু কাজিরবিল এলাকার আবদুল হাকিমের স্ত্রী আসমা আক্তার (২০) বলেন মংডু থেকে শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং ও টেকনাফ কাছে হলেও সে দিকে যাওয়ার সুযোগ নেই। সেখানে খুব কড়াকড়ি চলছে বলে শুনেছি। কোনো নৌকার মাঝি সে দিকে যেতে রাজি হয় না। তাই ভাড়া বেশি দিয়ে হলেও এ দিকে চলে এসেছি। তা ছাড়া এখান থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্প খুবই কাছে। শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং ও টেকনাফ হয়ে এলে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পর্যন্ত পৌঁছতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। মংডু ও মংডুর দক্ষিণে আরো কয়েক হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে আসার অপেক্ষায় রয়েছেন।

গতকাল দুপুরে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আসা রোহিঙ্গা আলী হোসেন, আকবর আলী ও আম্বিয়া খাতুন জানান, আরাকান থেকে পালিয়ে এসে সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে চার দিন অবস্থান করার পর বিজিবি গাড়িতে করে তাদের ক্যাম্পে নিয়ে আসে। স্থানীয় বিজিবি সদস্যরা জানান, ওপরের নির্দেশে এসব রোহিঙ্গাকে তল্লাশি ও কলেরা টিকা খাওয়ানোর পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো হয়।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: নিকারুজ্জামান বলেন, আটকা পড়া রোহিঙ্গাদের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আনা হচ্ছে। নির্ধারিত জমিতে মানবিক সহায়তা দিয়ে তাদের সরকার নির্মিত বস্তিঘরগুলোতে রাখা হবে। তাদের সবাইকে ত্রাণের আওতায় আনা হবে। তবে ঠিক কতজন রোহিঙ্গাকে নিয়ে আসা হচ্ছে, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান দিতে পারেননি এই কর্মকর্তা।

 

সূত্র: দেশ বিদেশে

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন