রোহিঙ্গা শুমারি চলবে ১৪ জুন পর্যন্ত

123 (2) copy

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

কক্সবাজারসহ দেশের ৬ জেলায় চলমান রোহিঙ্গা শুমারির সময় ৪ দিন বাড়ানো হয়েছে। ফলে আগামী ১৪ জুন পর্যন্ত চলবে এ শুমারি কার্যক্রম। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব কেএম মোজাম্মেল হক শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৫ টায় কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এই তথ্য জানিয়েছেন।

বাংলাদেশের বসবাসকারি অবৈধ রোহিঙ্গাদের সংখ্যা নির্ধারণে রোহিঙ্গা শুমারি গত ২ জুন থেকে হয়। যা শেষ হওয়ার কথা ছিল ১০ জুন। কিন্তু সকল তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ না হওয়ায় এ সময় বাড়ানো হয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের তালিকা তৈরী করার ক্ষেত্রে সরকারের একটি মহৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। এ তালিকাই বলে দেবে বাংলাদেশে অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা বা ভিন দেশী নাগরিক কত। আর তার উপর ভিত্তি করে তাদের আন্তর্জাতিক সাহায্য সহযোগিতা প্রদানসহ নানা করণীয় নির্ধারণ সম্ভব হবে’।

এই শুমারি কার্যক্রমে মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের উপর সাফল্য নিভর করছে উল্লেখ করে কেএম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা একদিনে তৈরী হয়নি। রোহিঙ্গাদের স্বার্থেই এই কার্যক্রম চলছে। এটি যদি তাদের বুঝানো যায় তাহলে সাফল্য আসবে। লক্ষ্য করা যাচ্ছে, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে যাচ্ছে। তারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন অপকর্মে যুক্ত হচ্ছে। এই অবস্থায় তাদের একটি পরিচয় তৈরী করা প্রয়োজন’।

তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনুপ্রবেশ ঘটছে। কিন্তু কোন দেশে অনুপ্রবেশ এতো প্রলম্বিত হয় না। কিন্তু আমাদের দেশে যুগ যুগ ধরে তারা অবস্থান করছে। অবস্থান করার মতো পরিবেশ তৈরী করছে। ১৯৭১ সালে আমরাও শরনার্থী হিসেবে ছিলাম। আমাদের তো শুমারি করার প্রয়োজন হয়নি। আমরা যে কোন উপায়ে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে চাই। যারা ইতোমধ্যে এসে গেছে তাদের জীবন ধারা, আচার আচরণ যেন ঠিক থাকে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে’।

সভায় রোহিঙ্গা শুমারি কার্যক্রমের প্রকল্প পরিচালক আলমগীর হোসেন জানান, রোহিঙ্গা শুমারি কার্যক্রমে কক্সবাজার জেলায় এ পর্যন্ত অগ্রগতির হার মাত্র ৩৬ শতাংশ। ১ জুন পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় ৩৭ হাজার ৯৬৯ টি খানা (পরিবার) গণনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ওই সময়ের মধ্যে মাত্র ১৩ হাজার ৯৩৬টি খানা গণনা করা সম্ভব হয়েছে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত উখিয়া উপজেলায় এই কার্যক্রমে অগ্রগতির হার মাত্র ১৭ শতাংশ, টেকনাফ উপজেলায় ৪১ শতাংশ।

এছাড়াও রামু উপজেলায় ২৯ শতাংশ, কক্সবাজার সদর ও মহেশখালী উপজেলায় ৫৮ শতাংশ কাজের অগ্রগতি হয়েছে। সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু ও নির্বাচনের কারণে শুমারি কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়। এই অবস্থায় আগামী ১৪ জুনের মধ্যে বাকী কাজ সম্পন্ন করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে লোকবল বাড়িয়ে এই কাজ শেষ করতে হবে’।

তিনি জানান, শুমারি কার্যক্রমে মোটামুটি সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়েছে কুতুবদিয়া, পেকুয়া ও চকরিয়া উপজেলায়। কুতুবদিয়ায় ৮৪ শতাংশ, পেকুয়ায় ৬৫ শতাংশ এবং চকরিয়ায় ৬৩ শতাংশ কাজের অগ্রগতি হয়েছে।

রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে করা হয় খানা তালিকা। ওই তালিকার ভিত্তিতে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে শুমারি করা হচ্ছে।

দেশের ৬ টি জেলায় প্রাথমিকভাবে এ শুমারি শুরু করেছে পরিসংখ্যা ব্যুরো। জেলা সমুহ হল, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রঙ্গামাটি, চট্টগ্রাম ও পটুয়াখালি। যার মধ্যে কক্সবাজারে ২ জন জেলা সমন্বয়কারীর অধিনে ৫০টি জোনে ২৩৪ জন সুপারভাই ও ৮৩৭টি গণনাকারী দল শুমারির তথ্য সংগ্রহের কাজ করছেন।

সভায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এমএ মান্নান, উপসচিব আব্দুল গণি, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবদুস সোবহান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শেখ ফরিদ আহমদ, পরিসংখ্যান ব্যুরো কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ওয়াহিদুর রহমানসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন