‘রোহিঙ্গা’ প্রশ্ন নিয়ে পোপ ফ্রান্সিস মিয়ানমারে
পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:
মিয়ানমারের মাটিতে পা রাখলেন ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। সোমবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে তিনি ইয়ানগুনের বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। পোপ ফ্রান্সিস এমন এক সময় দেশটিতে গেলেন, যখন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষের ওপর জাতিগত নিধন আর মানবতাবিরোধী অপরাধ একটি প্রশ্নচিহ্ন হয়ে বিশ্ববাসীর সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বরাবর সমাজকে আলোড়িত করার মতো যুগান্তকারী মতামত প্রকাশকারী পোপ সেই প্রশ্ন কী অবস্থান নেন, সে দিকে তাকিয়ে আছে বিশ্ব।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স পোপকে বহনকারী বিমানটির ইয়াংগুনে অবতরণের খবরটি নিশ্চিত করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫ কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার দেশ মিয়ানমারের মাত্র ৭ লাখ মানুষ রোমান ক্যাথলিক। সোমবার ইয়ানগুনের বিমানবন্দরে জাতিগত সংখ্যালঘুরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে ফ্রান্সিসকে স্বাগত জানান। শিশুরা তাকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানায়।
এরপর হালকা নীল রংয়ের একটি টয়োটা গাড়িতে সেন্ট ম্যারি ক্যাথেড্রালের উদ্দেশে রওনা করেন পোপ। বিমান বন্দর থেকে বের হওয়ার পরও উষ্ণ অভ্যর্থনা দেওয়া হয় তাকে। বেশ কয়েকজন শিশু ভ্যাটিকান ও মিয়ানমারের পতাকা এবং এ সফরের মোটো ‘লাভ এন্ড পিস’ সম্বলিত টি শার্ট পরে ফ্রান্সিসকে স্বাগত জানায়। পোপও গাড়ি থেকে তাদের উদ্দেশ্যে হাত নাড়ান।
গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে সহিংসতার পর রোহিঙ্গাদের ওপর নিধনযুজ্ঞ চালানো শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। হত্যা ও ধর্ষণ থেকে বাঁচকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা। জাতিসংঘ এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ বলে উল্লেখ করেছে। সম্প্রতি একে জাতিগত নিধনযজ্ঞ বলেছে যুক্তরাষ্ট্রও।
এমন সময়ে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সফরের কারণে পোপ রোহিঙ্গা ইস্যুতে কথা বলবেন বলে ভাবা হচ্ছে। তবে মিয়ানমার সফরকালে রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ না করতে পোপের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মিয়ানমারের কার্ডিনাল চার্লস মং বো। লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস-এর এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে,রোহিঙ্গা শব্দ উচ্চারণে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চি এবং দেশটির সেনাবাহিনীর আপত্তি থাকায় কার্ডিনাল চার্লস মং বো পোপকে তা উচ্চারণ করতে মানা করেছেন।
এ বছরের আগস্টে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধনযজ্ঞের ভয়াবহতায় তাদের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। বলেছিলেন, ঈশ্বরের কাছে আমরা সবাই প্রার্থনা করি তিনি যেন তাদের সুরক্ষিত রাখেন। তাদের সাহায্যে বাকিদের এগিয়ে আসতে বলেন; যারা তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারবে। এবার এক ভিডিও বার্তায় পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, এমন সম্মান ও উৎসাহের জায়গা থেকে আমি দেশটি সফর করতে চাই যেখানে ইতিবাচক পদক্ষেপের প্রতি পারস্পরিক মেলবন্ধন ও সহযোগিতার প্রচেষ্টা বিদ্যমান থাকবে।
আগস্টে রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গাদের ওপর নতুন করে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর জাতিগত নিধনযজ্ঞ শুরু হওয়ার আগে সেখানে ১০ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস ছিল। নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে এদের অনেকেই বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বুধবার মিয়ানমার সফরের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনও রাখাইন পরিস্থিতিকে জাতিগত নিধনযজ্ঞ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর এই হত্যাযজ্ঞের পক্ষে কোনও অজুহাতই দেওয়া যায় না।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন