রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি: জাতিসংঘ মহাসচিবসহ বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া
পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:
শরণার্থী বিষয়ক জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরকে পাশ কাটিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়া হতে হবে স্বেচ্ছায় এবং তাদেরকে অবশ্যই তাদের আদি বাড়িতে ফিরে যেতে দিতে হবে। তাদেরকে কোনো আশ্রয়শিবিরে রাখা যাবে না। এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করা অত্যন্ত প্রয়োজন। বাংলাদেশের আশ্রয় শিবির থেকে এসব মানুষকে (রোহিঙ্গা) মিয়ানমারের শিবিরে ফেরত পাঠানো হলে তা হবে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা।
জাতিসংঘ সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলন করেন গুতেরেস বলেছেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন যাতে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে চলে তা নিশ্চিত করার জন্য এ প্রক্রিয়ায় ইউএনএইচসিআরকে যুক্ত রাখতে হবে।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের মহাসচিব হওয়ার আগে ১০ বছর এ সংগঠনের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছেন গুতেরেস।
তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তির বিষয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। তবে চুক্তিতে এ সংস্থাকে অংশীদার করা হয় নি।
এ প্রসঙ্গে রোহিঙ্গা এডুকেশন ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম- এর সাধারণ সম্পাদক জমির উদ্দিন রেডিও তেহরানকে বলেন, মিয়ানমার থেকে বিতারিত রোহিঙ্গাদের সেদেশে ফিরে যাবার মত নিরাপত্তা, নাগরিক অধিকার ও সহায় সম্পদ ফেরত পাবার নিশ্চয়তা না পেলে কোনো রোহিঙ্গাই স্বচ্ছায় ফেরত যাবে না। আর জোর করে ফেরত পাঠালে সেটা হবে অত্যন্ত অমানবিক কাজ।
ওদিকে, মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, মিয়ানমারে নীতির পরিবর্তন না হলে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরিয়ে দেয়াটা হবে একটি অপরিপক্ক সিদ্ধান্ত।
অ্যামনেস্টির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসগারীয় অঞ্চল বিষয়ক পরিচালক জেমস গোমেজ গতকালই এক বিবৃতিতে বলেছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মনে এখনও ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের দগদগে ক্ষত থাকায় তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা উদ্বেগ সৃষ্টির মতো ‘অপরিণত সময়ের পদক্ষেপ’।
গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত ৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমারে নিপীড়নের মুখে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে গতকাল মঙ্গলবার দু’দেশ একটি ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ চূড়ান্ত করেছে, যাতে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সম্মত হওয়ার সময় থেকে দুই বছরের মধ্যে তাদের ফেরত পাঠানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
অ্যামনেস্টি বলছে, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই ওই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। তারা স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফেরত যেতে পারবেন এমন কোনো নিশ্চয়তাও দেয়া হয়নি।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন হবে স্বেচ্ছায়। যারা চাইবেন তাদেরই মর্যাদা ও নিরাপত্তার সঙ্গে ফেরত পাঠানো হবে।
তবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, “রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরা এবং সেখানে বসবাসের অধিকার রয়েছে। তবে বিদ্বেষপূর্ণ একটি ব্যবস্থায় লোকজনকে পাঠাতে তাড়াহুড়া করা যাবে না। জোরপূর্বক কাউকে ফেরত পাঠানো আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন।”
সূত্র: পার্সটুডে