রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আন্তঃ নারী, শিশু পাচারকারী সক্রিয়
উখিয়া প্রতিনিধি:
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে নিষ্ঠুর নির্যাতন, ধর্ষণ ও জাতিগত হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়ে প্রাণের ভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা যুবতি ও শিশু নিখোঁজের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। নিখোঁজ কিংবা অপহরণের ঘটনা বেঁড়ে যাওয়ায় বিষয় নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় শংকিত হয়ে পড়েছে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা। সংঘবদ্ধ আন্তঃপাচারকারী সিন্ডিকেটের সদস্যরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প গুলোতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির অভিমত।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, উখিয়ার কুতুপালং সহ ৬টি অস্থায়ী ক্যাম্প থেকে গতকাল পর্যন্ত ১ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা যুবতি ও শিশু নিখোঁজ রয়েছে। তৎমধ্যে মেয়ে ৫৮০জন ও ছেলে ৩৮৮জন। এরই মধ্যে ২১৫জনকে ফেরত পাওয়া গেছে। অবশিষ্টরা এখনো নিখোঁজ রয়েছে।
গত ১ মাসে মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে বর্বরতা নির্যাতন ও জাতিগত হত্যার শিকার হয়ে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তৎমধ্যে মহিলা, যুবতি ও শিশুর সংখ্যা বেশি। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা এক জরিপে জানান, উখিয়ার ৬টি অস্থায়ী এবং টেকনাফের ৫টি ক্যাম্পে নতুন পুরাতন প্রায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।
সরজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, উখিয়ার কুতুপালং, টিভি টাওয়ার পাহাড়, হাকিম পাড়া, বালুখালী, থাইংখালী ও তেল খোলা, ৬টি অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আন্তঃনারী শিশু পাচারকারীরা অপতৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছে। দামী গাড়ি নিয়ে ক্যাম্প গুলোতে ত্রাণ বিতরণের নামে তারা নারী শিশু টার্গেট করছে।
মানবধিকার সংস্থার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় এক সময় কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের নয়া পাড়া শরণার্থী ক্যাম্প নারী ও শিশু পাচারের টার্নিং পয়েন্ট হিসাবে পরিচিতি ছিল। মানবধিকার সংস্থা বেশ কয়েক বছর ধরে ভারত থেকে পাচার হওয়া অনেক রোহিঙ্গা নারী শিশুকে উদ্ধার করেছিল।
খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন যেহারে নারী শিশু নিখোঁজ হচ্ছে এ খবরে প্রশাসন পর্যন্ত হিমশিম খাচ্ছে। এমনকি নিখোঁজ সংবাদ প্রচার করতে মাইকিং সহ কন্টোলরুম খোলা হয়েছে। কেউ হারিয়ে গেলেই কুতুপালং ক্যাম্পে মাইকিং করা হয়।
মাইকিং যোগে নিখোঁজ সংবাদ প্রচারে দায়িত্বপালনকারীর নজির আহমদ এ পার্বত্যনিউজকে জানান, প্রতিদিন অসংখ্য নারী ও শিশু নিখোঁজের খবর আমাদেরকে মাইক যোগে প্রচার করতে হচ্ছে। বর্তমানে ১ হাজারের অধিক নিখোঁজের মধে ১৭৯জন ছেলে ও ৭৬জন মেয়ে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। অর্থাৎ অভিভাবকগণ প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদেরকে খুঁজে পাই। এছাড়াও ৭৮৫জনের এখনো কোন হদিস মিলেনি।
সচেতন মহলের অভিযোগ আন্তঃ নারী শিশু পাচারকারীরা বিভিন্ন প্রলোভন ও অর্থের লোভ দেখিয়ে অসহায় নির্যাতিত নারী শিশু রোহিঙ্গাদেরকে বিভিন্ন এলাকায় পাচার করার এক জঘন্য কাজে নেমে পড়েছে। প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ বিষয়টি জরুরী নজর দেওয়া উচিত।