Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভিন্ন এক চ্যালেঞ্জিং পথ পাড়ি দিতে হয়েছে টেকনাফ পুলিশকে

টেকনাফ প্রতিনিধি:

রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেড় শতাধিক মানুষের মৃতদেহ উদ্ধার এবং দাফন করার চ্যালেঞ্জিং মোকাবেলার বাস্তবতা যেন মেনে নিতে হয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফ থানার পুলিশের। টানা ২ মাসে রাতে দিনে মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাদের মধ্যে যারা স্বজন হারিয়েছেন তাদের একদিকে শান্তনা দেয়া অপর দিকে মৃতদেহ দাফন করা যেন ভিন্ন এক চ্যালেঞ্জিং ছিল তাদের।

এ চ্যালেঞ্জিং এর পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের অন্যান্য মানবিক সহায়তা, রোহিঙ্গাদের নানাভাবে হয়রানী এবং অনুপ্রবেশে জড়িত দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণও করতে হয়েছে তাদের। একই সঙ্গে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের স্বাভাবিক কার্যক্রমও পরিচালনা করার যেন এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা পুলিশের জন্য।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক তথ্য মতে, গত ২৪ আগস্ট দিনগত রাতে মিয়ানমারের সংঘাত শুরু হলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা শুরু করে রোহিঙ্গারা। ২৯ আগস্ট বিকেল থেকে মানবিক দৃষ্টি ভঙ্গিতে বাংলাদেশ সরকার এসব বাস্তুহারা মানুষকে আশ্রয় দেয়া জন্য অনেকটা সীমান্ত খুলে দেয়া হয়। ফলে ২৯ আগস্ট থেকে ব্যাপকহারে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরু হয়। জাতিসংঘ সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার তথ্য মতে, এ পর্যন্ত বাংলাদেশে নতুন করে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ৬ লাখের মতো।

২৯ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরু হলেও রোহিঙ্গাবাহী নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে ৩১ আগস্ট। আর ৩১ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত নৌকা ডুবির ঘটনার মৃতদেহ উদ্ধার সংখ্যা প্রায় ২ শত। এর মধ্যে টেকনাফ উপজেলায় মৃতদেহ উদ্ধারের সংখ্যা ১৫৮জন।

টেকনাফ থানা পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে ব্যাপক। একই টেকনাফ উপজেলার বঙ্গোপসাগরে মিলেছে মৃতদেহ। ৩১ আগস্ট থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত  মিয়ানমার থেকে আসার পথে নৌকা ডুবির ঘটনায় ১৫৮জন রোহিঙ্গার মৃতদেহ উদ্ধার করে দাফন করতে হয়েছে টেকনাফ থানার পুলিশকে। যার মধ্যে ২৩জন পুরুষ, ৫৬জন মহিলা, ৪০জন ছেলে শিশু ও ৩৯ কন্যা শিশু ছিল।

মৃতদেহ উদ্ধার, দাফন সম্পন্ন করার অভিজ্ঞতা বর্ণণা দিতে গিয়ে টেকনাফ থানার ওসি মাইন উদ্দিন খান জানান, ৩১ আগস্ট নৌকা ডুবির ঘটনায় রোহিঙ্গাদের মৃতদেহ উদ্ধারের পর পুলিশের চ্যালেঞ্জিং এ ভিন্নতা রুপ নেয়। রাত বা দিন পুরো সময় পুলিশকে ছুটতে হয়েছে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে।

এসব মৃতদেহ উদ্ধারের পর স্বজনদের শান্তনা দেয়া মৃতদেহ দাফন করা ছিল কঠিন কাজ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে এসব মৃতদেহ দাফন নিশ্চিত করতে হয়েছে পুলিশকে। যার জন্য তাকে সর্বদায় দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। এতে অনেক সময় পরিবারের লোকজনের সাথে আলাপ করা, ঘুম বা খাবারও নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

টেকনাফ থানার ওসি জানান, রোহিঙ্গা সমস্যা শুরু থেকে ব্যস্ততা বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতি স্ত্রী-সন্তানরা টেকনাফ তাকে দেখতে যায়। তারাও বুঝতে পেরেছেন কি ধরণের ব্যস্ততা রয়েছে। ফলে এখন স্ত্রী-সন্তানরাও বুঝে গেছে, এখন ফোনও করেন কম।

তিনি জানান, একই সঙ্গে স্বজন হারা মানুষকে স্বাভাবিক শান্তনা দিয়ে তাদের মানবিক সহায়তা দিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছানো কাজটিও করতে হয়েছে পুলিশকে। স্বজনের লাশ দাফন এবং নিখোঁজ স্বজন সম্পর্কে কোন তথ্য না জানা মানুষকে শান্তনা দেয়া অত্যন্ত কঠিনও ছিল।

একই সঙ্গে আইন শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে অন্যান্য কাজও করতে হয়েছে পুলিশকে। টেকনাফ থানার ওসি জানান, রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের সময় একটি চিহ্নিত দালাল চক্রের তৎপরতা ছিল টেকনাফে সব চেয়ে বেশি। ফলে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা আনার দায়ে দালাল হিসেবে গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত ৪২২জনকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা প্রদান করতে হয়েছে। যার মধ্যে ২জনকে ৫ দিন, ৪জনকে ৭ দিন, ২জনকে ১৫ দিন, ৩জনকে ২০ দিন, ১৫জনকে ১ মাস, ২৪ জনকে২ মাস, ৪২জনকে ৩ মাস, ৬জনকে ৫ মাস, ৩২৭জনকে ৬ মাস করে সাজা প্রদান করে ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট।

তাদের জেল হাজতে প্রেরণের কাজটি করতে হয়েছে পুলিশকে। একই সঙ্গে মাদক, ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৯৪জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাধ্যমে সাজা প্রদান করে  আদালতের পাঠানোর কাজটি করেছে পুলিশ। যার সাথে নিয়মিত মামলার আসামী আটক, ত্রাণ বিতরণে সহায়তা, দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এবং বিদেশীদের নানা কাজের নিরাপত্তা ও সহায়তার অভিজ্ঞতা যেন পুলিশকে নিতে হয়েছে স্বাভাবিকভাবে।

রাষ্ট্র মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় নেয়া মানুষকে পুলিশের পক্ষে যা করণীয় তাই করতে পুলিশ চেষ্টা করেছে উল্লেখ্য করে টেকনাফ থানার ওসি মাইনউদ্দিন জানান, উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিদের্শনায় তার অন্যান্য সহকর্মীদের সহযোগিতায় এটা তিনি সম্পন্ন করতে পেরেছেন। আগামীতেও তার পক্ষে তা করতে চেষ্টা থাকবে এমন মত তার।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন